
এস এম নাসির মাহমুদ , আমতলী(বরগুনা) প্রতিনিধি
রবিবার গভীর রাতে আমতলী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বটতলার নামক স্থানের নিকটবতর্ী হযরত খাজা ইসমাঈল শাহ মাজারে বার্ষিক ওরশ চলাকালে ইমাম কল্যান ফাউন্ডেশনের ব্যানারে একদল তোহিদী জনতা হামলা, ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করেছে । এতে মাজারের সামিয়ানা ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে এবং হামলা ও পাল্টা হামলায় উভয় গ্রুপের অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছে। এঘটনায় সোমবার সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আলম, আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে সকল পক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশ প্রদান করেন। মাজারে হামলা এব্ং অগিনকান্ডের ফলে ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মাজার কতৃপক্ষ দাবী করেন। হামলার পর ইসমাইল শাহ পন্থী অনুসারী ও মুিরদানদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। মাজারে হামলার খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকার লোক ভির করছেন পরিস্থিতি দেখার জন্য।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, রবিবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে দেড় থেকে দুই শতাধিক তৌহিদী জনতা মাজারে উপস্থিত হয়ে ওরশ বন্ধ করতে বলেন। এতে উভয়পক্ষের বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা শুরু হয়। এসময় ঘটনাস্থরে উপস্থিত তৌহিদী জনতা লাঠি শোটা নিয়ে মাজারে হামলা ও ব্যাপক ভাংচুর করে এবং মাজারে অগ্নি সংযোগ করে অভিযোগ মাজার পন্থীদের। হামলা পাল্টা হামলায় উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়। আহতরা হল মাজারের খাদেম এ্যাডভোকেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ইসমাইল শাহের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম, খবির (৩০), বেল্লাল (৩২) জাকির হোসেন (৩১) সালমা বেগম (৪০), মিজানুর রহমমমান (৪৫) আবুল কালাম (৪২),সোলায়মান (৩৮), রেজাউল (১৮), বাদল মৃধা (৪০), দুলাল মৃধা (৪২), আবু বকর (৪২), আবুল হোসেন (২৮), আব্দুল্লাহ আল নোমান (২৮), মোঃ মামুন (৪৩), আবুল হোসেন (৩৩)। আহত অন্যরা বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।মাজারের দায়িত্ব প্রাপ্ত খলিফা এড, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল জানান তারা পবিত্র রমজান থাকায় শুধু মাত্র ওয়াজ মাহফিল,দোয়া,মিলাদের মধ্য দিয়ে ওরসের কার্যক্রম চলছিল। হঠাৎ ইসলামী আন্দোলন এর ওমর ফারুক জেহাদী শতাধিক লোক নিয়ে মাজারে হামলা করে ও মাজাওে আগুন ধরিয়ে দেয় ।
খবর পেয়ে ওই রাতেই আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তারেক হাসান ও ওসি মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল অভিযোগ করে বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্ব্বে এ হামলা ও অগ্নি সংযোগ হয়েছে। এতে মাজারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে । অনুসারীদেও থাকার টিনসেডের ঘওে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় তা পুরে ছাই হয়ে গেছে। মাজারের ভিতরেও কবরের উপর হামলা করে এবং আগুন দিয়ে গিলাব পুরিয়ে ফেলা হয়েছে। স্টীলের সীমানা ভেঙ্গে ফেলেছে। তারা আমাকেসহ আমাদের ভক্ত অনুসারীদের উপর বেধরক হামলা করে ২০ জনকে আহত করেছে। আহতদের মধ্যে গুরুতর কয়েকজন আমতলী হাসপাতালে ভর্তি আছে।
ইসলামী আন্দোলন আমতলী উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক গাজী বায়েজিদ বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে হামলা অঘ্নি সংযোগের যে অীভযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট। পবিত্র মাহে রমজান মাসে ইসমাঈল শাহের অনুসারীরা ইসলাম বিরোধী কাজ থেকে নিষেদের জন্য মাজারে যাই। মাজারে যাওয়ার পর তারা আমাদের তৌহিদী জনতার উপর চলা (লাকরি) লাঠি নিয়ে হামলা করে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী বলেন, এ মাজারটি ভন্ডের আস্থানা । ওরশের নামে এখানে গানবাজনা ও গাজা মাদক সেবন ও নারীর আসর বসায়। তারা মাজার সেজদা করে শিরক করছেন। এজন্য রবিবার আমতলী উপজেলার ইমাম কল্যান ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দ আমাকে ঘটনার প্রতিবাদের জন্য তাৎক্ষনিক আমির বানিয়ে একটি প্রতিবাদ কমিটি গঠন করে। এর পর রাত সোয়া ১২ টার সময় শত শত ইমাম মুসল্লী এবং তৌহিদী জনতা নিয়ে ইসলাম বিরোধী কাজের প্রতিবাদ করার জন্য আমরা মাজারে যাই। আমরা মাজারের খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে রমজান মাসে অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম কিন্তু তিনি তা না শুনে তার নির্দেশে তার ভক্তবৃন্দরা আমাদের লোকজনের উপর চলা (লাকরি) নিয়ে হামলা করে। হামলায় আমাদের ১৫ জন আহত হয়েছে ।
ইসমাইল শাহের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তৌহিদী জনতা ব্যানারে রবিবার গভীর রাতে আমার বাবার মৃত্যু বার্ষিকী পালনের দিন হামলা করে ভাংচুর করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ কওে দুটি টিনের ঘর পুরিয়ে দিয়েছে। আমরা এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেকান্দার বয়াতী জানান, পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার বঁাশবাড়িয়া গ্রামের হযরত খঁাজা ইসমাঈল শাহ ১৯৯০ সালে আমতলী আসেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ২৬ ফাল্গুন মারা জান। আমতলী উপজেলায় তার প্রায় কয়েক হাজার ভক্ত অনুসারী রয়েছে। তারা তাকে আমতলী রেখে পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বটতলা নামক স্থানে দাফন করে সেখানে একটি মাজার নির্মান করেন। প্রতিবছর বাংলা ২-৩ চৈত্র ২দিন ব্যাপী ওরশ পালন করেন তারা। এসময় এখানে হাজার হাজার লোকের সমাগম হয়। হামলা ও অগ্নিকান্তের ঘটনায় আমতলীতে মাজার পন্থি মানুষের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে ।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা কামাল হোসেন তালুকদার বলেন, ওরশ চলাকালে রাত সাড়ে ১২ টার সময় হঠাৎ ডাক চিৎকার শুনে বের হয়ে দেখি টিনের ঘর আগুনে জ্বলছে। লোকজন ভয়ে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। পরে পুলিশ আসার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।