
আবু সালেহ মোঃ হামিদুল্লাহ ।। কটিয়াদী,(কিশোরগঞ্জ)নিজস্ব প্রতিনিধি।।
কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার সেলুন ব্যবসায়ী হৃদয় রবিদাস (২২) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৫ নভেম্বর (শুক্রবার) আনুমানিক রাত ৯ টার দিকে এক মুসলিম মেয়ের সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্ক থাকায় তার জের ধরে ওই মুসলিম মেয়ের পক্ষের লোকজন ভুইয়া বাজার এলাকায় হৃদয়কে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন আহত রবি দাসকে করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাত তিনটায় ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। নিহত রবিদাসের মায়ের অভিযোগ আমার সন্তানের লাশকে হত্যাকারীরা মাটির সঙ্গে মুড়িয়ে দিয়েছে। নিহত হৃদয় রবি দাসের মা উপস্থিত সাংবাদিক ও বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তার সন্তানের এই নৃশংস ও নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান। করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহাবুদ্দিন জানান খবর পেয়ে আমরা নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছি। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আমরা কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। পরবর্তী তিনদিন পর গতকাল ১৮ অক্টোবর (সোমবার) নিহতের বড় ভাই বিজয় রবিদাস (২৪) তিন দিন পর করিমগঞ্জ থানার অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করেন। বিষয়টি করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে মামলাটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে করিমগঞ্জ উপজেলা সহ সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়েও আলোচনা চলছে। এখন নতুন করে হৃদয়ের মৃত্যুকে পরিকল্পিত ও রহস্যজনক মৃত্যু বলে আখ্যা দিয়েছেন নিহতের বড় ভাই। বর্তমানে হৃদয়ের বড় ভাইয়ের ভাষ্য মতে নতুন করে এলাকায় চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। সকল গণমাধ্যমে বিষয়টি সম্প্রচার হওয়ার পর আরেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয় নিহতের বড় ভাই শাকিল রবিদাস। শাকিল রবি দাস গণমাধ্যমকে বলেন, অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউ.পি সদস্য এবং বর্তমান বাজার কমিটির সভাপতি মঞ্জিল মিয়া সহ ওই মুসলিম কিশোরী মেয়েটির কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত থেকে আমাদের মোবাইল ফোন জব্দ করে নেয় এবং আমাদের বেরধর মারপিট করে। কিছুক্ষণ পর তিনজন চৌকিদার এসে আমাদের রিকশায় করে স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং নেওয়া পথেও আমাদের রাস্তায় অমানবিক ভাবে প্রহার করা হয়। সেনা ক্যাম্পে নিয়ে আমাকে এক ঘরে রাখা হয় এবং হৃদয়কে অন্য ঘরে রাখা হয়েছিল। তবে হৃদয়ের কক্ষে কি ঘটেছিল সে রাতে সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে আনুমানিক রাত ২ টায় হৃদয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় পরবর্তীতে শুনতে পাই হৃদয় হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা গেছে। করিমগঞ্জের সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজুল গণমাধ্যমকে বলেন, হৃদয়কে গণপিটুনির পর স্থানীয় লোকজন তাদের কাছে হস্তান্তর করে। আহত হৃদয়কে জিজ্ঞাসাবাদে সময় গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া যায়, তবে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার মুখ থেকে নেশা জাতীয় দ্রব্যের তীব্র গন্ধ পাওয়া যায়। মূলত সে নেশাগ্রস্ত ছিল এবং গণপিটুনির কারণে অসুস্থ থাকায় জিজ্ঞাসাবাদে সময় সে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হয়, পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে হৃদয় হার্ট অ্যাটাকের কারণেই সে মারা যায়। ১৯ মঙ্গলবার রাতে জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর এ সাংবাদিক খালেদ মুহি উদ্দিনের উপস্থাপনায় জনপ্রিয় টকশো “ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন ” নামক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে করিমগঞ্জের হৃদয় রবি দাসের হত্যার পেছনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ কিনা? জানতে চাইলে তিনি এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টির প্রতি আমি এখনো অবগত নই, তবে ঘটনাটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিচ্ছি। তবে অনেকের ধারণা হচ্ছে বিষয়টি যেহেতু প্রেম ঘটিত বিষয় সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং এই সুশৃংখল বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করছে একদল অসাধু ব্যক্তি।