বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেশ গড়ার কারিগর বলে সমালোচনার মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুল হাই। তিনি যশোরের মনিরামপুরের চালুয়াহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত ২৫ মার্চ ভয়াল গণহত্যা স্মরণে ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তৃতার সময় আব্দুল হাই এ কথা বলেন।
উপস্থিত নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আব্দুল হাই তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সংগ্রামী সাথিরা আমার, আপনারা জানেন, ২৬ মার্চ পাকিস্তানিরা সেদিন বাংলাদেশের মানুষকে গণহারে হত্যা করেছিল। তারপর বাংলাদেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপ দিয়েছেন। আজকে বাংলাদেশের মানুষ তাকিয়ে দেখুন, দেশ গড়ার কারিগর উন্নয়নের কারিগর দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। এ কথা মনে রেখে আগামী নির্বাচনে…।’
আব্দুল হাইয়ের এ বক্তব্যের পর সভার স্থান থেকে একজন দেশনেত্রী শেখ হাসিনা বলে ওঠেন। তখন তিনি কথা ফিরিয়ে দেশনেত্রী শেখ হাসিনা বলে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেনের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন, নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক হুসাইন, জেলা পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম মিলন, তপন বিশ্বাস পবন, সন্দ্বীপ ঘোষ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আব্দুল হাইয়ের ভিডিও বক্তব্য গতকাল শনিবার দুপুরে এসকে আব্দুল লতিফ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে।
এমডি রাশেদ আলী মন্তব্য করেন, ‘আব্দুল হাইকে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক।’ এসকে রাশিদা লতিফ মন্তব্য করেন, ‘হাই আল্লাহ! এ কী অবস্থা। ১১ নাম্বার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হাই এ কী বক্তব্য রাখলেন। আবারও তিনি নিজেই প্রমাণ করে দিলেন তিনি আওয়ামী লীগের কেউ না। সে একজন হাইব্রিড নেতা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল হাই বলেন, ‘আমি না বলব না। মিসটেক হতে পারে। শেখ হাসিনার নাম বলতে গিয়ে খালেদার নাম বলা পড়ে যেতে পারে। আমি তো মানুষ, ভুল তো হতে পারে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন বলেন, ‘আব্দুল হাই দেশগড়ার কারিগর খালেদা জিয়া বলার পর আমি শেখ হাসিনার নাম বলে উঠি। তখন তিনি দেশনেত্রী শেখ হাসিনার নাম উচ্চারণ করেন। এটা আপত্তিকর।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, ‘আমি একটা প্রোগ্রামে আছি। এ ব্যাপারে এখন কিছু বলতে পারব না।’
এদিকে জানা গেছে, আব্দুল হাই আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি যুবদল ও বিএনপির সংগঠন করে দলীয় কোন্দলের কারণে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগে চলে আসেন। এরপর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদও ভাগিয়ে নেন।
চালুয়াহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক (১) জেলা পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘শুক্রবারের মনিরামপুরের আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। আব্দুল হাই তাঁর বক্তব্যে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বলে ফেলেছেন। ইউনিয়নেও বহুবার এ কারণে তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে।’
মিলন বলেন, ‘যুবদল ও বিএনপি করার পর থানার এক নেতার সঙ্গে কোন্দলের কারণে দল বাদ দেন আব্দুল হাই। ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসেন। ২০১৫ সালে গঠিত চালুয়াহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে তাঁর নাম রাখা হয়। পরে উপজেলায় যোগাযোগ করে যুগ্ম আহ্বায়ক (৩) পদে ঢুকে পড়েন তিনি।