মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বর্ণি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম ধরা পড়েছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন এই ভবনে সিডিউলে বর্ণিত মান অনুযায়ী যথাযথভাবে রড ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়া ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় রডের মান নিশ্চিত হওয়া ছাড়াই ভবনের অধিকাংশ কাজে বিভিন্ন কোম্পানির রড (নন-গ্রেড) ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান সরেজমিনে ভবন পরিদর্শন করেন। অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় বড়লেখা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুল হক, বর্ণি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন, ঠিকাদারের প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বড়লেখার বর্ণি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চারতলা ভবনের ভিত্তির ওপর দুইতলা ভবন নির্মাণ কাজ হচ্ছে। প্রায় এক কোটি ৪৪ লাখ টাকার কাজটি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচ কন্সট্রাকশন। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর উদ্বোধনের পর ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভবন নির্মাণের শুরু থেকেই নিম্নমানের রড, সিমেন্ট, ইট, বালু ও সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। স্থানীয়রা কয়বার আপত্তি করলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ চালিয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে তিনটি কোম্পানির রড (নন-গ্রেড) ব্যবহার করা হয়েছে। যার সবগুলোই ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় রডের মান নিশ্চিত হওয়া ছাড়াই ব্যবহার করা হয়। যেখানে ভবনে ভালো মানের ৬০ গ্রেডের রড ব্যবহার কথা। এছাড়া গ্রেড ভীমের টপ থেকে পিএল লেভেল পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি গাঁথুনিতে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন অংশে লোকাল রড (নন-গ্রেড), সিলেটসেন্ডের পরিবর্তে সম্পূর্ণ লোকাল বালু ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে এখানে কাজের জন্য ৬০ গ্রেডের বিএসআই রড পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ছাদে অন্য তিনটি কোম্পানির রড (নন-গ্রেড) বাঁধাইকরা পাওয়া যায়।
আলাপকালে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা ছাড়াই রড ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, করোনার কারণে রিপোর্ট পাইনি। তবে দ্রুত শেষ করার জন্য কাজ শুরু করি। বিএসআই কোম্পানির রড পরীক্ষার জন্য পাঠাই। তবে যে দোকান থেকে মাল কিনেছি তারা কিছু মাল অন্য কোম্পানির পাঠিয়েছে। সব রড খারাপ না। ৪০ শতাংশের মতো অন্য রড হয়তো ব্যবহার হয়েছে। এগুলো সংশোধন করা হবে।
কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুল হক ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়া ছাদের সব জায়গায় বিএসআই রড ব্যবহারের দাবি করলেও এই রড সব জায়গায় দেখাতে পারেননি। রডের ল্যাবরেটরি পরীক্ষার প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো রিপোর্ট আসেনি। সব কিছুতো রিপোর্টে হয়না। অভিজ্ঞতার আলোকেই করতে হয়। এই কর্মকর্তা নির্মাণ কাজের গুনগত মান নিয়ন্ত্রণের চেয়ে ঠিকাদারের পক্ষেই সাফাই গাইতে থাকেন।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম পাঠান বলেন, রবিবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কথা ছিল। কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠায় ছাদ ঢালাই বন্ধ করেছি আমরা। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিদর্শন করেছেন। কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। ত্রুটি থাকলে ঠিকাদারকে অবশ্যই কাজ করে দিতে হবে।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের রডসহ অন্যান্য মালামালে অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় ঢলাই কাজ বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।