পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল আসনের উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে লোকসভায় যাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা৷
পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের চার রাজ্যের পাঁচ আসনের উপনির্বাচনে হেরেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। পশ্চিমবঙ্গের একটি বিধানসভা এবং একটি লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল লোকসভায় উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা। বিহারের একটি আসনে জিতেছে লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল। মহারাষ্ট্র ও ছত্তিশগড়ের উপনির্বাচনে জিতেছে কংগ্রেস।
শনিবার ঘোষিত নির্বাচনের ফলাফলে এসব তথ্য জানা গেছে। চার রাজ্যের মধ্যে একমাত্র বিহারে নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের সঙ্গে যৌথভাবে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি।
পশ্চিমবঙ্গে বালিগঞ্জ বিধানসভা এবং আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে প্রত্যাশা মতোই জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দুটি জায়গাতেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল। এই জয়কে তৃণমূল কংগ্রেসকে ‘নববর্ষে দেওয়া মানুষের উপহার’ বলে বর্ণনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আসানসোলে তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা জিতেছেন তিন লাখের বেশি ভোটে। ২০১৯ সালে আসনটি জিতে লোকসভায় গিয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। এবার বাবুল সুপ্রিয় বালিগঞ্জ আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীকে ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন তিনি। তাঁরা দুজনেই একসময় বিজেপির রাজনীতি করতেন।
পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বালিগঞ্জ কেন্দ্রে বিজেপিকে অনেকটাই পেছনে ফেলে দিয়ে সিপিআইএমের দ্বিতীয় স্থান দখল করে নেওয়া।
আসানসোলে বিজেপির পরাজিত প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের অভিযোগ, তৃণমূল সন্ত্রাস করে ভোটে জিতেছে। তিনি বলেছেন, ‘এটাও মাথায় রাখতে হবে যে তৃণমূল সন্ত্রাস করেই ভোটে জিতবে। আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।’
মাত্র এক বছর আগে যেখানে বালিগঞ্জ আসনে সিপিআইএমের ভোট ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ, এবার তা ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে। বিজেপির ভোট প্রায় ২১ শতাংশ থেকে নেমে ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, এ অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের (মুসলমান সমাজ) ভোট তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের ভোট আমাদের দিকে কখনোই আসবে না। সেটা হয় সিপিএমে যাবে অথবা কংগ্রেসে। এ ক্ষেত্রে সিপিএমে গিয়েছে।
উপনির্বাচনের ফলের সার্বিক মূল্যায়নে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ভোটের হার অত্যন্ত কম হওয়ার কারণে সিপিএম দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। যে অবস্থা রাজ্য ও দেশে চলেছে, তাতে মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন, ভোট দিতে যাচ্ছেন না। গত বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ভবানীপুরের নির্বাচন থেকে দেখা যাচ্ছে, মানুষ ভোট দিতে বেরোচ্ছেন না। এটা কাটানোই এখন তাঁদের লক্ষ্য। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু দুই পক্ষের ভোটই তাঁরা পেয়েছেন।
বালিগঞ্জ কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ২০১৮ সালে আসানসোলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে উত্তেজনা বাড়াতে ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি পরোক্ষভাবে দাঙ্গায় মদদ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ ছিল সিপিআইএমের।
শনিবার ভোটে জয়ী হয়ে বাবুল মুসলমান সমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, রমজান মাসে যেভাবে ছেলেরা আমার জন্য পরিশ্রম করেছে, তাতে আমি কৃতজ্ঞ। আমার বিরুদ্ধে যে নোংরা কুৎসা সিপিআইএম-বিজেপি করেছে (দাঙ্গাকারী বলে) তারা আজ তার যোগ্য জবাব পেয়েছে।