শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকালে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ বিবৃতি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ইশফাকুল হোসেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের প্রতি মনােনিবেশ করেন। শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্ত করা এবং নির্ধারিত সময়ে ফল প্রকাশসহ প্রায় সাড়ে নয়শাে কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমােদনের পদক্ষেপ নেন। প্রায় ১৩ বছর পর তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করেন। কোভিড-১৯ জনিত মহামারী দেখা দিলে এপ্রিল ২০২০ থেকেই শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস শুরু করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গৃহীত সকল প্রচেষ্টা দেশ বিদেশে প্রশংসিত হয়। মহামারীকালে শিক্ষার্থীদের আর্থিক প্রণােদনা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তিনি অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের প্রত্যেক মাসে ফ্রি ডাটা সরবরাহ করে শিক্ষার্থীদের পড়াশােনা ও গবেষণা চালিয়ে যাবার নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশরীরে ক্লাস চালুর পূর্বে আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হল সমূহ পরিস্কার-পরিছন্ন করাসহ ভৌত কাঠামাে সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার শতভাগ টিকা কর্মসূচীর আওতায় আনার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসেই টিকা প্রদান ও টিকা সনদ প্রাপ্তির সুবিধার্থে নির্বাচন কমিশনের সহযােগিতায় ক্যাম্পাসেই এনআইডি প্রদানের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। উদ্যোগ গুলাের মূলে ছিলাে উপাচার্যের এই ইচ্ছা যে, ছাত্র-ছাত্রীরা যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নির্বিগ্নে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
গত ১৩ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের একটি হলকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। সেই অনাকাঙ্খিত ঘটনা এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতির বিষয় নিম্নে তুলে ধরা হলাে
গত ১৩ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ রাত ১১.০০ ঘটিকায় উপাচার্য অবহিত হন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের কিছু সংখ্যক ছাত্রী সাক্ষাৎ প্রার্থী। এ পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, ঐ রাতে হলের প্রভােস্ট মহােদয়ের সাথে ছাত্রীদের কথাবার্তায় শিক্ষার্থীগণ সন্তুষ্ট না হওয়ায় সরাসরি উপাচার্যের সাথে কথা বলতে আগ্রহী। উপাচার্য ধৈৰ্য্য সহকারে ছাত্রীদের বক্তব্য শুনে পরদিন তাদের দাবীসমূহ লিখিত আকারে নিয়ে আসার অনুরােধ করেন। ১৪ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে ছাত্রীরা লিখিত দাবী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, প্রভােস্ট, প্রক্টরবৃন্দ আলােচনা করেন এবং দাবী সমূহ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ছাত্রীগণ তা মেনে নিয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে সভাস্থল ত্যাগ করলেও পরবর্তীতে সভাকক্ষের বাইরে উপস্থিত অপেক্ষমান অন্যান্য শিক্ষার্থীগণ সভার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন।
১৫ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ জন শিক্ষককে পরিস্থিতির ব্যাপারে উপাচার্য অবহিত করেন। সকল দাবী-দাওয়া কার্যকর করার এবং মেনে নেয়ার বিষয়টি অবহিত হয়ে শিক্ষকরা কর্মসূচী প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরােধ করেন কিন্তু শিক্ষার্থীগণ শিক্ষকবৃন্দের এ আহবানকেও প্রত্যাখ্যান করে স্বঘােষিত আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
১৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালােচনা করে করণীয় নির্ধারনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, সকল ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের সমন্বয়ে এক মত বিনিময় সভায় মিলিত হন। উক্ত সভায় দায়িত্বরত প্রভােস্টের অব্যাহতি গ্রহণ ও ঐ হলের প্রভােস্ট পদে একজন সিনিয়র অধ্যাপকের সম্মতি গ্রহণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ছাত্রীদের সকল দাবী দাওয়া মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উপযুক্ত সিদ্ধান্ত সমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গােল চত্বরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অবহিত করে কর্মসূচী প্রত্যাহার ও শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের জন্য সকল শিক্ষক সম্মিলিতভাবে আহবান জানালেও শিক্ষার্থীগণ এ আহবানে সাড়া না দিলে এবং শিক্ষকরা চেতনা একাত্তরের দিকে যেতে থাকলে, শিক্ষার্থীরা মানি না, মানব না’ শ্লোগান দিয়ে শিক্ষকদের সাথে যেতে থাকেন।
পূর্ব নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনবৃন্দের একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য অংশ গ্রহণের জন্য তাঁর কার্যালয় থেকে রওয়ানা দিলে শিক্ষার্থীরা পথ আটকিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে এবং শিক্ষার্থীরা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করতে উদ্যত হয়। ঐ সময়ে উপাচার্য কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ তাঁকে কর্ডন করে ঘিরে রাখে এবং শিক্ষার্থীদের আক্রমণে আহত হয়। কোনক্রমে কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ প্রাণ রক্ষার্থে উপাচার্যসহ আইআইসিটি ভবনে আশ্রয় নেন। উপাচার্য ঐ ভবনে আশ্রয় নেওয়ার সাথে সাথে আক্রমনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা ভবনে তালা মেরে তাকে আটকিয়ে রাখেন। ঐ ঘটনার প্রায় সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকবৃন্দ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ছাত্র-ছাত্রীকে শান্ত করার চেষ্টা চালাতে থাকেন। সকল দাবী-দাওয়া মেনে নেওয়া ও কার্যকর করার আশ্বাস প্রদান করলেও শিক্ষার্থীরা এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বজায় রাখেন এবং উপাচার্যকে মুক্ত করার চেষ্টাকে বাধা দিতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষকে দাবী-দাওয়া মানার আশ্বাস লিখিতভাবে দেওয়ার জন্য দাবী তােলেন। কোষাধ্যক্ষ সে দাবী মেনে নিয়ে লিখিত আকারে উপাচার্যের অনুমােদনের জন্য তার কাছে যাওয়ার জন্য তালাবদ্ধ গেইট অতিক্রমকালে হঠাৎ অস্থিরতা তৈরী হয় এবং এক পর্যায়ে উপস্থিত শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ অব্যাহত থাকে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, ছাত্র উপদেষ্টাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশের ভাষ্যমতে কর্তব্য পালন ও উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জানমাল রক্ষার্থে তারা প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
উপযুক্ত পরিস্থিতি পর্যালােচনায় ছাত্র-ছাত্রীদের মূল দাবী বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নেওয়ার পরও অদ্যাবধি উদ্দেশ্য প্রণােদিত হয়ে উপাচার্যের উপর দায় বর্তাবার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকার ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের আহবানের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে যাওয়ার আহবান উপেক্ষিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের অংশগ্রহণে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি এক অনন্য উচ্চতায় রয়েছে এবং অগ্রগতি অব্যাহত আছে। এ চেতনাকে ধারণ করে উদ্ভূত পরিস্থিতির মােকাবেলায় ও দেশের স্বার্থে এবং শিক্ষার্থীদের মূল্যবান শিক্ষা জীবন নির্বিগ্নে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নিমিত্তে সকল মহলের সর্বাত্মক সহযােগিতা একান্তভাবে কামনা করা যাচ্ছে।