করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারী হাসপাতালে জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী মোহাম্মদ শামসুজ্জামান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহির—রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি স্ত্রী ১ছেলে সন্তান সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে যান। মঙ্গলবার রাত ১টায় ঢাকার একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ২১ এপ্রিল বুধবার রাত ১০টায় জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত বাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজ শেষে দরবস্ত তেলিজুরী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মরহুমের জানাজার নামাজে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিগণ সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ অংশ গ্রহন করেন। নামাজের পূর্বে বক্তব্য রাখেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল আহমদ, দরবস্ত ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার এবং পরিবারের পক্ষে মরহুমের পুত্র আব্দুল্লা জামান নাসের।
মোহাম্মদ শামসুজ্জামানের পরিচিতি:
সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের তেলিজুরী গ্রামে ১৯৫২ সালের ১লা জুলাই মোহাম্মদ শামসুজ্জামান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা আবদুল লতিফ একজন প্রথিতযশা আলেম ছিলেন। তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসা হতে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন এবং দেশে প্রত্যাবর্তন করে বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। মাতা মরহুমা জুলেখা বিবি। তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় তেলিজুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি সেন্ট্রাল জৈন্তা হাই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি ১৯৬৮ সালে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭২ সালে তিনি সিলেট সরকারী কারীগরি মহাবিদ্যালয় হতে ডিপ্লোমা পাশ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে শ্রদ্ধেয় মা’কে নিয়ে পবিত্র হজ্জব্রত পালন করার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমন করেন। তখন তাহার অগ্রজ ভাই ফখরুল ইসলাম সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাকুরীরত ছিলেন। তিনি হজ্জব্রত পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে গমন করেন এবং অবলোকন করেন যে, সৌদি আরবে পাশ্ববর্তী দেশ গুলোর চাইতে সেদেশের বাংলাদেশী কর্মীদের সংখ্যা হাতে গোনার মত। তাই তিনি বড় ভাই ফখরুল ইসলামের সহযোগিতায় সৌদি আরব হতে ৪৩ জন কর্মী প্রেরণের চাহিদাপত্র নিয়ে ঐ বছরই দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং মাদানী ট্রাভেলস্ নামে একটি ট্রাভেলস্ ও রিক্রুটিং এজেন্সী প্রতিষ্ঠা করেন। যাহা বাংলাদেশের দ্বিতীয় রিক্রুটিং এজেন্সী হিসাবে সরকার কর্তৃক লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়। তিনি ১৯৮০ সালে সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গোলাম হোসেন মাক্কু মিয়ার মেয়ে শাহরীন হোসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের একমাত্র সন্তান আব্দুল্লা জামান নাসের। তিনি ১৯৮৩ সাল হতে ঢাকা গুলশানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করে আসছেন। তিনি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সী (বায়রা) এর তিন বার সহ-সভাপতি এবং শেষবার সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তাহা ছাড়া তিনি এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সী অব বাংলাদেশ (আটাব) এর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৪ইং সালে সৌদি আরবের তদানিন্তন মহামান্য বাদশা ফাহাদ বিন্ আব্দুল আজিজের আমন্ত্রনে রাজকীয় মেহমান হিসাবে দ্বিতীয় বার হজ্জব্রত পালন করেন এবং ২০১০ সালে স্বস্ত্রীক তৃতীয় বার হজ্জব্রত পালন করেন। তিনি ১৯৯৩ সাল হতে সাপ্তাহিক আল আখবার নামে একটি সাপ্তাহিক ম্যাগজিন প্রকাশনা এবং সম্পাদনায় দায়িত্ব পালন করে আসেছেন। যাহা দেশ বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি ইসলামিক শরীয়া ভিত্তিক ব্যাংক সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ডাইরেক্টর, চেয়ারম্যান এক্সিকিউটিভ কমিটি চেয়ারম্যান বোর্ড অডিট কমিটি এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নারী শিক্ষার উন্নয়ন কল্পে নিজ বাড়ীর পার্শ্বে প্রয়াত মাতা পিতার নামে একক প্রচেষ্টায় ও অর্থায়নে স্কুলের জন্য বিল্ডিং করে ১৯৯৮ সালে মাওলানা আব্দুল লতিফ জুলেখা গার্লস্ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় ১যুগ ধরে শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে শিক্ষার সুযোগ করে দিয়ে আসছেন। তিনি স্কুলের শুরু হতে স্কুলে প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাছাড়া তিনি ঢাকার হেমায়েতপুরে লায়নস্ ক্লাব অব ঢাকা, হেমায়েতপুর হাই স্কুলেরও সভাপতি। তিনি জৈন্তিয়া ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। তাছাড়া তিনি সেন্ট্রাল জৈন্তা হাই স্কুল, সারীঘাট হাই স্কুলেরও দাতা সদস্য।
তিনি মানব সেবায় আকৃষ্ট হয়ে আর্ন্তজাতীক সেবা সংগঠন লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল এ ১৯৯৫ ইংরেজীতে বাংলাদেশের প্রথম ক্লাব লায়নস্ ক্লাব অব ঢাকাতে যোগদান করেন এবং ২০০০ সালে লায়নস্ ক্লাব অব ঢাকা-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে লায়নস্ ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্টে-এর বিভিন্ন পদে ছিলেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫এ ১-এর সেকেন্ড ভাইস ডিস্ট্রিক্ট গর্ভনর এবং বর্তমানে ফাষ্ট ভাইস্ ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর এর দায়িত্ব পালন করছেন এবং ২০১৩-২০১৪ সালে গর্ভনর হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হবেন।
উল্লেখ্য যে, তিনি সিলেট জেলা হতে ১ম লায়ন গর্ভনর হওয়ার সুভাগ্য অর্জন করেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। বাংলাদেশ মুসলিম ওয়েলফেয়ার মিশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাহা ছাড়া তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আনঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, গুলশান সোসাইটি, জালালাবাদ সমিতি, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি এবং সিলেট প্রেসক্লাব, জৈন্তাপুর প্রেসক্লাব সহ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের তিনি আজীবন সদস্য।
সমাজসেবী মোহাম্মদ শামসুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন
RELATED ARTICLES