বাড়িবাংলাদেশেঅসহায় বৃদ্ধা আহাতন বেগমকে নতুন ঘর উপহার দিল 'পীরগাছা বন্ধু মহল -

অসহায় বৃদ্ধা আহাতন বেগমকে নতুন ঘর উপহার দিল ‘পীরগাছা বন্ধু মহল –

মোঃ জমির উদ্দিন, পীরগাছা (রংপুর)প্রতিনিধি –

আহাতন বেগম। প্রায় ৭০বছর। আনুমানিক ৪০ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল তার। বিয়ের পর এক পুত্র সন্তানের মা হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অভাবের সংসারে অসুস্থতায় ভুগে শিশু বয়সেই মারা যায় সেই সন্তান। একমাত্র সন্তানকে হারানোর পর ভাগ্যের ফেরে স্বামীর সাথেও বিচ্ছেদ ঘটে তার। স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর আর বিয়ে করেননি তিনি। বর্তমানে এক বোন ছাড়া তার আপনজন বলতে তেমন কেউ নেই। সেই বোনটিও জীবিকার তাগিদে ঢাকায় থাকেন। স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর থেকে বাপের ভিটায় ছোট্ট একটা খুপড়ি ঘরে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছেন তিনি। বয়সকালে বিভিন্ন কাজকর্ম করে পেট চালালেও বৃদ্ধ বয়সে এসে এখন যেন তিনি অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছেন। অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।আহাতন বেগমের বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের আদমপাড়া গ্রামে। তার এই অসহায়ত্বের খবর পেয়ে এক মাসের বাজার খরচ নিয়ে গত ২৫ অক্টোবর বৃদ্ধার কাছে হাজির হয় স্থানীয় ফেসবুক ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ ‘পীরগাছা বন্ধু মহল’ এর ১০-১২ জন তরুণ। এ সময় বৃদ্ধা আহাতন বেগম তাদের কাছে কেঁদে কেঁদে আবদার করেন তার জরাজীর্ণ খুপড়ি ঘরটি ঠিক করে দেওয়ার। বৃদ্ধার কান্না দেখে ‘পীরগাছা বন্ধু মহল’ এর সদস্যরা তাকে একটি নতুন ঘর করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর তারা নিজেরাই যে যার সামর্থ্যমত চাঁদা দিয়ে বৃদ্ধার জন্য নতুন একটি টিনের ঘরের ব্যবস্থা করেন। শুক্রবার (৮ নভেম্বর)  জুম্মার নামাজের পর মিলাদ পড়িয়ে মিষ্টিমুখ করে সেই ঘরটি আহাতন বেগমের নিকট হস্তান্তর করা হয়। শুধু তাই নয় এ সময় তাকে নতুন শাড়ি-কাপড়ও উপহার দেওয়া হয় গ্রুপটির পক্ষ থেকে।শুক্রবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে সেই বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নতুন চকচকে একটি টিনের ঘরের ভিতরে বসে আছেন বৃদ্ধা আহাতন বেগম। থাকার ঘর ছাড়াও একটি রান্নাঘরও করে দেওয়া হয়েছে আহাতন বেগমের জন্য। এ সময় ওই গ্রুপের এডমিন মাসুদ রানা, বেলাল হোসেন, আলমগীর হোসেন, রবিউল ইসলাম, শাওন, আশিকুর রহমান, আবীর, আতিকুল ইসলামের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। মাসুদ রানা বলেন, আমরা এই বৃদ্ধার জন্য যেদিন বাজার করে নিয়ে আসি তখন দেখি উনি যে ঘরটাতে থাকতেন সেটা খুব জরাজীর্ণ, সংকীর্ণ। বেড়া ভাঙ্গা, চালের টিনে অসংখ্য ফুটো। তখন উনি আমাদেরকে কেঁদে কেঁদে বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই সেই ঘরের চাল দিয়ে নাকি পানি পড়ে, বিছানা ভিজে যায়। ঘুমোতে পারেননা। এই শেষ বয়সে একটু শান্তিমত ঘুমানোর জন্য তিনি সেদিন ঘরের আবদার করেছিলেন। আজকে আমরা তাকে একটি নতুন ঘর উপহার দিতে পেরে মানসিকভাবে শান্তি পাচ্ছি। উনার ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থাও ছিলনা। আমরা সেটাও ব্যবস্থা করেছি।

এ সময় আহাতন বেগমের প্রতিবেশী মৌসুমী বেগম জানান, ওই বৃদ্ধার দেখাশুনা করার মত কেউ নেই। মৌসুমি বেগম মাঝে মধ্যে তার দেখভাল করেন। এই বয়সে ধান কুঁড়িয়ে, বয়স্ক ভাতার টাকা, মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে কোনমত খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তার। এ সময় ওই বৃদ্ধাকে নতুন ঘর করে দেওয়ার জন্য পীরগাছা বন্ধু মহলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।বৃদ্ধা আহাতন বেগম বলেন, আমার দূর্দশার কথা শুনে এই বাবারা এগিয়ে এসে আমার জন্য নতুন ঘরে করে দিয়েছে। এখন আমি একটু শান্তিমত ঘুমাতে পারবো। আগে বৃষ্টির সময় খুব কষ্ট হতো। আমি দোয়া করি এই বাবাদের জন্য আল্লাহ ভালো রাখে।পীরগাছা বন্ধু মহল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এডমিন দুবাই প্রবাসী রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে এই গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক, সচেতনামূলক ও মানবিক কার্যাক্রম পরিচালনা করে আসছি। আমরা বর্তমানে প্রতি মাসে দু’একটি দরিদ্র পরিবারকে এক মাসের বাজার করে দিচ্ছি নিজেদের চাঁদার টাকায়। ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। মূলত সমাজের অসহায় মানুষে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছেতে আমরা গ্রুপটি খুলেছি।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments