
অরবিন্দ রায়, স্টাফ রিপোর্টারঃ
আজ ১৬ ফেরুয়ারী বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার তম মৃত্যুবার্ষকী। ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেরুয়ারী ৬২ বছর বয়সে ভারতে মৃত্যু বরন করেন।
তার জন্মভূমিতে মৃত্যুবার্ষকী পালন করা হয় না।
মেঘনাদ সাহা ১৮৯৩ সালে ৬ অক্টোবর অবিভক্ত ভারত বর্তমান বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলা শেওড়াতলী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবার নাম জগন্নাথ সাহা মায়ের নাম ভুবনেশ্বরী সাহা। মেঘনাদ বাবা মায়ের পঞ্চম সন্তান ছিলেন। তার বাবা ছিলেন একজন মুদি দোকানার।
শেওড়াতলী গ্রামের টোলে মেঘনাদ সাহার তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে সুযোগ ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা তার ইতিহাস ও গণিতের মেধার কথা পিতাকে অবগত করলে আর পিতা তাকে পড়ানোর চিন্তা ভাবনা করেন। পরে তাকে শিমুলিয়া মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয় ( ব্রিটিশ আমলে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেনি পড়ার স্কুল) ভর্তি করে দেয়। শেওড়াতলী গ্রাম থেকে তার স্কুলের দূরত্ব ছিল ৭ মাইল। প্রতিদিন এত দূর যাতায়াত করা তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়ে । মেঘনাদ সাহার বাবা জগন্নাথ সাহার আর্থিক সমস্ত তেমন ভালো ছিল না। পঞ্চম শ্রেণী শেষ পরীক্ষায় তিনি ঢাকা জেলার মধ্যে প্রথম স্হান লাভ করে বৃত্তি পান।
১৯০৫ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। সেই সময় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে গিয়ে সারাবাংলা উত্তাল হয়েছিল। ছিল তৎকালীন গভর্নর ব্যামফিল্ড ফুলার বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেবার কারনে মেঘনাদ সাহা কে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে একজন শিক্ষক তাকে কিশোরীলাল জুবিলি হাই স্কুলে ভর্তি করে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেন।
১৯০৯ সালে পূর্ববঙ্গের সমস্ত বিদ্যালয়ের মধ্যে এন্ট্রন্স পরীক্ষায় প্রথম স্হান অধিকার করেন। পরে তিনি ঢাকা কলেজে বি বিভাগে ভর্তি হন। আই এস সি পরীক্ষায় তিনি তৃতীয় স্হান অর্জন করেন।
১৯১১ সালে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে গনিতে অর্নাস ভর্তি হন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৩ সালে গনিতে সম্মান সহ স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯১৫ সালে ফলিত গনিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯২৮ সালে তার সমস্ত গবেষণার ফলাফল একএ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রির জন্য আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেঘনাদ সাহা কে ১৯১৯ সালে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রাদান করেন। তিনি প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। পরে তিনি ইংল্যান্ড ও জার্মানীতে গবেষণার সুযোগ পান।
মেঘনাদ সাহা ১৯২৭ সালে রয়্যাল সোসাইটি ফলো হন। ১৯৩৩ সালে শুরু করেন ভারতীয় পদার্থ বিজ্ঞানীদের সংগঠন ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটি। ১৯৩৪ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়াস ফিজিক্স যা বর্তমানে সাহা নিউক্লিয়াস অফ নিউক্লিয়াস ফিজিক্স নামে পরিচিত। ১৯৫২ সালে মেঘনাদ সাহা ভারতীয় লোকসভার নির্বাচনে কলকাতা পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আমরা আজ ভুলতে বসেছি বাঙ্গালী বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার কথা। মেঘনাদ সাহার জন্মভূমিতে ও পালন করা হয় না তার মৃত্যুবার্ষকী। এলাকাবাসীর দাবি বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে মেঘনাদ সাহার নাম যুক্ত করা হোক। দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালন করা হোক মেঘনাদ সাহার মৃত্যু বার্ষিকী।