মোঃইনামুল হক, বদরগঞ্জ,রংপুর শিক্ষানবিশ প্রতিনিধিঃ
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় এ বছর আলুর আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর লাভ হওয়ায় এ বছরও আলু চাষ করেছেন অনেক কৃষক। ইতিমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম আলু। শুরুতে ভালোই দাম পেলেও হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, মৌসুমের শুরুতে তারা ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি আলু বিক্রি করেছেন। পরে তা কমে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দাঁড়ায়। লাল আলু (হল্যান্ড ও ক্যারেজ জাত) ও সাদা জাতের দাম আরও কমে গেছে। আলুর মৌসুম পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগেই আলুর দাম এভাবে কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। বিদেশ থেকে আলু আমদানির কারণে এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
উপজেলার ১৩নং কালুপাড়া ইউনিয়নের ফুলপুকুরের ডঙ্গার কৃষক ফারুক বলেন, ‘আগাম আলুর ফলন তুলনামূলক কম হয়। তবে এ বছর আলুর বীজের দাম বেশি ছিল। দেশের বাইরে থেকে আলু আসায় আলুর দামও দিন দিন কমছে। এতে কৃষকদের তেমন লাভ হচ্ছে না।’
একই ইউনিয়নের খুনিয়া পাড়া গ্রামের আলু চাষি আব্দুর রহমান বলেন, আগাম আলুতে উৎপাদন খরচ অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বদরগঞ্জ উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর চাষযোগ্য আবাদি জমি রয়েছে। এরইমধ্যে চলতি মৌসুমে আলু চাষ হয়েছে এক হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে। এতে ফলন ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ২৫ মেট্রিক টন এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন। আবার আগামী আলু চাষ করা হয়েছে ৭৫০ হেক্টর জমিতে। আগাম আলু উত্পদনের ফলন ধরা হয়েছিল হেক্টরে ১৭ থেকে ১৮ মেট্রিক টন। তাছাড়া চলতি মৌসুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বগুন, গাঁজরসহ অন্য শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে এক হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগাম জাতের আলু ও ফুলকপি বাঁধাকপিসহ অন্যান্য সবজি জাতির আবাদ করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন অনেক কৃষকই। কম খরচে ভাল দাম পেয়ে খুশি আলু ও ফুলকপি চাষিরা। ফুলকপির পাশাপাশি আগাম জাতের আলু, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা, লাল শাক, পালন শাক, ধনেপাতা, টমেটো, গাঁজর, স্কোয়াস, শালগম ও পটোল চাষাবাদ করছেন। প্রতি বছর এ উপজেলায় ব্যাপকভাবে আগাম সবজি চাষাবাদ করা হয়। এরমধ্যে আলুর দাম কমে যাওয়ায় অনেক কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বদরগঞ্জ ও ৯ নং দামোদরপুর এলাকার কয়েকটি এলাকা দেখা গেছে, ভোর থেকে কিষাণ-কিষাণী দল বেঁধে জমি থেকে আলু, ফুলকপি ও বাঁধাকপি সংগ্রহ করে তা ওজনের পর বিক্রির জন্য বদরগঞ্জ সবজি বাজারে পাঠাচ্ছেন। এতে দেখা গেছে, গ্রামগুলোতে আলু, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রির ধুম পড়ে গেছে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে পাইকারেরা আসেন কাক ডাকা ভোরে; সঙ্গে আলু ও সবজি পরিবহনের জন্য নিয়ে আসেন, ট্রাক, মিনি ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ অটোরিকশা।
বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিনা আফরোজ জানান, গত বছর আলুর দাম ভালো পাওয়ায় চলতি বছর কৃষকেরা আলু ও সবজি জাতীয় আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর উপজেলায় আলুর আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশা করা যাচ্ছে ফলন ভালো হবে। মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।