
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরব হয়ে উঠেছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের রাজনীতি। আওয়ামী ঘরনার নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার রাজনীতিতে আধিপত্য রয়েছে স্থানীয় সাংসদ পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য প্রয়াত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ তনয় আজিজুস সামাদ আজাদ ডনের। যদিও স্থানীয় ভাবে পরিকল্পনামন্ত্রীর বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সিদ্দেক আহমদ।
আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন পদে ১৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী নেতাকর্মী। এসব নেতাকর্মীরা স্থানীয় ভাবে দুই নেতার বলয়ে রাজনীতি করেন। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়েছেন এমপি বলয়ের আকমল হোসেন। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ডন বলয়ের মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা। আকমল হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং একাধিকবারের মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের স্বর্ণপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আর মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। যদিও গেল নির্বাচনে বিদ্রোহী থাকায় চেয়ারম্যান পদে মাত্র কয়েক হাজার ভোটে বিএনপির প্রার্থী আতাউর রহমানের কাছে পরাজিত হন আকমল হোসেন। বিদ্রোহী হয়েও মুক্তাও বিপুল ভোট পেয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচনী মাঠে আছেন জেলা বিএনপি নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।
শুধু চেয়ারম্যান পদ নয় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থিতা ঘোষণা দিলেও এ দুই বলয়ের ৩ নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এমপি বলয় থেকে উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি সালেহ আহমেদ ও উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন লালন। আর ডন বলয় থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দ্বীপ সূত্রধর বিরেন্ড।
দুই বলয়ের প্রার্থীদের কারণে আওয়ামী নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। নিজ নিজ বলয়ের কর্মী সমর্থকেরা নিজ বলয়ের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিভাবে সৃষ্টি হলো দুই বলয়
২০০৫ সালে প্রয়াত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি জামায়াত ভোট সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত হওয়া এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় ভাবে অংশ নেন নি। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেন সাবেক সচিব এমএ মান্নান। সে নির্বাচনে দলীয় প্রভাবের কারণে জমিয়ত নেতার কাছে বিপুল ভোট পেয়েও পরাজিত হন এমএ মান্নান। পরবর্তী ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমএ মান্নানকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন প্রদান করেন। যদিও নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন সামাদ পুত্র ডন। তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বাবার অনুসারী রাজনীতিবিদের নিয়ে নিজ বলয় তৈরি করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
২০১৪ সালে আবারও মনোনয়ন বঞ্চিত হন সামাদপুত্র ডন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমএ মান্নানকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও পুনরায় এমএ মান্নান বিজয়ী হন। এ নির্বাচনের পর জগন্নাথপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুটি বলয় প্রকাশ্যে চলে আসে। দুটি বলয়ই পৃথক পৃথক ভাবে দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচি পালন করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক চেয়ে মনোনয়ন বঞ্চিত হন ডন। তবে ১৪-এর মতো এবার আর ভুল করেন নি তিনি। ফলাফল হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মনোনীত হন সামাদপুত্র ডন।
তফসিল অনুযায়ী ১০ অক্টোবর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই, ১৭ অক্টোবর প্রার্থিতা প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ অক্টোবর আর ২ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।