বাড়িরংপুর বিভাগদিনাজপুর জেলাআশ্রয়ন প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, কাজও অসমাপ্ত, ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। 

আশ্রয়ন প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, কাজও অসমাপ্ত, ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। 

 মো:ফেরদৌস ওয়াহিদ সবুজ, বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)নিজস্ব প্রতিনিধি 
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় কাজ অসমাপ্ত রেখে আশ্রয়ন প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত সমুদয় টাকা উত্তোলন করে অন্যত্র বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন বীরগঞ্জে বসবাসকারী সকল আশ্রয়নবাসী পক্ষে এক সচেতন নাগরিক। 
মোঃ নাজমুল ইসলাম মিলন, নামের ঐ সচেতন ব্যক্তি একজন সংবাদকর্মী, দৈনিক আজকের পত্রিকা প্রতিনিধি ও বীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি।
তিনি জেলা প্রশাসক দিনাজপুর বরাবর অভিযোগ করে বলেন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেষ ধাপে অত্র উপজেলায় সরকারী ভাবে আশ্রয়ন প্রকল্পে অবস্থিত ৮৯৮ টি পুরাতন ঘর ভেঙ্গে ২ রুম, ১ রান্নাঘর ও ১ টয়লেট বিশিষ্ট ঘর নির্মাণের জন্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময় ছিল গত জুন’২০২৪ পর্যন্ত। 
ব্যপক অনিয়ম, দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়ম বহির্ভূত, একক ক্ষমতা বলে বীরগঞ্জের তৎকালীন ইউএনও ফজলে এলাহী নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে প্রকল্পটি কাগজে কলমে বাস্তবায়ন করলেও মূলত এখনো অসমাপ্ত রয়েছে অনেক কাজ। 
সাহাডুবি আশ্রয়ন প্রকল্প, সিংড়া আদিবাসী আশ্রয়ন প্রকল্প, অর্জু নাহার আশ্রয়ন  প্রকল্প, বলদিয়াপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্প, জগদল আশ্রয়ন প্রকল্প, ভোগডোমা আশ্রয়ন প্রকল্প, কাশিমনগর আশ্রয়ন প্রকল্প, মাটিয়া কুড়া আশ্রয়ন প্রকল্প, পাল্টাপুর আশ্রয়ন প্রকল্পসহ অন্যান্য স্থানে বাস্তবায়নকৃত আশ্রয়ন প্রকল্প সমুহে ব্যবহার করা হয়েছে খুব নিম্নমানের ইট, কম পরিমান সিমেন্ট এবং সকল উপকরন। 
ঘরের ভিটার মাটি ভরাট করেছে ঘর গ্রহিতারা এবং আশ্রয়নের পুকুরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন পূর্বক ভরাট করা হয়েছে প্রায় প্রতিটি আশ্রয়ন প্রকল্প। 
নীতিমালা অনুযায়ী টাক্সফোর্স কমিটি এবং বাস্তবায়ন কমিটি থাকলেও, উপজেলায় কর্মরত এসিল্যান্ড, পিআইও এবং ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্য সদস্যদেরকে কোন দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয় নাই। 
যাবতীয় মালামাল ক্রয়সহ সার্বিক দেখ ভালের দায়িত্ব পালন করেছেন ইউএনও ফজলে এলাহী এবং বর্তমানে খানসামায় কর্মরত অফিস সহকারী শাহজাহান আলী। 
টেন্ডার ছাড়াই আনুমানিক ১ কোটি টাকার বেশী মুল্যের আশ্রয়নের পুরাতন ঘরের টিন, কাঠ, পিলার বিক্রি করে আত্মসাত করা হয়েছে। 
ভোগডোমা আশ্রয়ন প্রকল্প সহ অন্যান্য স্থানে এখনো টয়লেট স্থাপন করা হয়নি, সিমেন্টের পরিমাণ কম  দিয়ে প্লাস্টারের কারণে প্লাস্টার ধ্বসে তথা উঠে যেতে শুরু করেছে। 
ভোগডোমায় পুনর্বাসিত জামাল উদ্দিন, চানমিয়াসহ ৩৭ পরিবার আশ্রয়নবাসীকে অন্যায়ভােবে উচ্ছেদ করা হয়েছে, ঐ প্রকল্পে ২৮০ টি পরিবারের টিনসেট ঘর ভেঙ্গে ২৪৩ টি পাকা ঘর নির্মান করা হয়েছে ফলে দলিল থাকা সত্ত্বেও বাড়ি পায় নাই ৩৭ পরিবার। 
সুতরাং ২ যুগ পুর্বে সরকারি জমিসহ পুনর্বাসিত আশ্রয়নবাসী গৃহহীন হয়েছে। 
নির্মাণকৃত প্রতিটি ঘরের সর্বোচ্চ খরচ ২ লাখ টাকা হতে পারে, তার বেশি নয় বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় কয়েক জন নির্মান ঠিকাদার সহ এলাকাবাসী।
সেই হিসাবে দেখা যায় ইউএনও মোঃ ফজলে এলাহী এবং অফিস সহকারী শাহজাহান আলীসহ সংশ্লিষ্টরা প্রায় ১০ কোটি ও পুরাতন টিন, কাঠ, পিলার বিক্রি ১ কোটি মোট ১১ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
সম্প্রতি দূর্নীতিবাজ ইউএনও মোঃ ফজলে এলাহী বদলি হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুরে কর্মরত আছেন।
বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে ঢাকায় জমিসহ বাড়ি কিনেছে ইউএনও ফজলে এলাহী এবং অফিস সহকারী শাজাহান আলী তার নিজ গ্রামের বাড়িতে অনেক আবাদি জমি এবং জামতলীতে মিল চাতাল কিনেছে।
সরেজমিনে ভোগডোমা আশ্রয়ন প্রকল্প সহ অন্যান্য আশ্রয়ন প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায় জামাল উদ্দিনসহ ৩৭ পরিবার প্রায় ২৫ বছর থেকে কবুলিয়ত প্রাপ্ত সকলে ৪৬ শতাংশ জমি সমেত সেখানে বসবাস করছেন। 
কিন্তু ঘর ভেঙ্গে ৩৭ পরিবারকে ঠাঁই ছাড়া নিরাশ্রয় তথা উচ্ছেদ করেছে ঘুষখোর সরকারী বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাতকারী ভুতপুর্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে এলাহী এবং সংশ্লিষ্টরা।
আশ্রয়নে ঘর পাওয়া আনসার আলী, সমিরন, আহম্মদ আলী, শাহজাহান, নুরবানুসহ নারীপুরুষেরা জানান তাদের টয়লেট স্থাপনের জন্য রিং-স্লাব এনেছে কিন্তু স্থাপন করে নাই, ঘরের ভিটার মাটি আমরা নিজেরাই ভরাট করেছি, কোন টিউবওয়েল দেয় নাই। 
আমাদের পুরাতন ঘরের টিন, কাঠ, পিলার চেয়ারম্যানের দ্বারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিয়ে গেছে।
নিম্নমানের ইট, কম সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে এখনি প্লাস্টার উঠে যাচ্ছে। আমরা দূর্নীতিবাজদের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহসান হাবিবের সাথে কথা হলে তিনি জানান আমি কিছুই জানিনা, একই কথা বলেছেন এসিল্যান্ড দীপঙ্কর বর্মন ও ইঞ্জিনিয়ার জিব্রিল আহমেদ.
ভূতপূর্ব পিআইও সানাউল্লাহ কাজ করেছেন তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান কোন ফাইলপত্র তাদের কাছে নেই, সকল প্রকার তথ্যাদি শাহজাহান আলীর কাছে রয়েছে। 
কিন্তু শাহজাহান আলীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো চলে এসেছি, আমার কাছে আশ্রয়ন প্রকল্পের কোন ফাইল বা তথ্যাদি নাই।
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments