মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় নানার বাসায় বেড়াতে গিয়ে রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি- গোয়েন্দা) খন্দকার লাবনী। এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একই জেলায় আত্মহত্যা করেছেন মাহমুদুল হাসান নামের একজন কনস্টেবল। মাহমুদুল দেড় মাস আগেও এডিসি লাবনীর দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
হঠাৎ এডিসি লাবনীর আত্মহত্যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার সাবেক দেহরক্ষী মাহমুদুলও কেন আত্মহত্যা করেছে? তাদের দুজনের এই আত্মহত্যার নেপথ্যে অন্য কি কারণ থাকতে পারে? এসব বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে তাদের এমন মৃত্যু নিয়ে নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জেলা জুড়ে।
খন্দকার লাবণী খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই দিন আগে ছুটিতে মাগুরায় আসেন তিনি। তিনি বিসিএস ৩০তম ব্যাচের ছিলেন। গ্রামের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরালিদহ গ্রামে। তাঁর স্বামী তারেক আব্দুল্লাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) হিসেবে কর্মরত। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ভারতে চিকিৎসাধীন।
লাবনীর বাবা খন্দকার শফিকুল আজম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লাবনীর সঙ্গে তার স্বামীর বনিবনা হচ্ছিল না। তারা একে অপরকে এড়িয়ে চলছিল। এর জেরে লাবনী আত্মহত্যা করেছে এমনটাই দাবি তার বাবার।
অন্যদিকে, মাহমুদুলের বাবা বলছেন, তার সন্তানের সঙ্গে ফোনে গতকাল রাতেও হাসিখুশি কথা বলেছেন। কোনো ভাবেই মনে হয়নি সে আত্মহত্যা করতে পারে। কিন্তু রাতভর ডিউটি করে ভোরে জেলা পুলিশ লাইনসে ফিরে এসে অস্ত্র জমা না দিয়ে ভবনের ছাদে উঠে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তাই স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠেছে তাদের দুজনের আত্মহননের পেছনে কী রহস্য রয়েছে?
মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান দেড় মাস আগে মাগুরায় বদলি হয়েছিল। এর আগে তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি খন্দকার লাবণীর দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুটি ঘটনার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এটুকু নিশ্চিত, দুজনেই আত্মহত্যা করেছেন। দুজনের আত্মহত্যার কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত করছে।
কনস্টেবল মাহমুদুলের বিষয়ে তিনি বলেন, মাহমুদুল কাজ শেষে ভোর ৬টার দিকে ব্যারাকে ফিরে ছাদে গিয়ে নিজ নামে ইস্যু করা শটগান দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গুলির শব্দ শুনে অন্যরা গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তার থুতনি দিয়ে গুলি ঢুকেছে। তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন, তা এখনো জানা যায়নি।
মাহমুদুল হাসানের বাবা মো. এজাজুল হক খান। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। ছেলের বিষয়ে তিনি বলেন, দুই বছর চার মাস আগে আমার ছেলে পুলিশে যোগ দেয়। মাগুরায় আসার দেড় মাস আগে সে খুলনা মেট্রোপলিটনে কর্মরত ছিল। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে আমার সর্বশেষ কথা হয়। সে জানায় যশোর রোডে ডিউটিতে আছে। তাঁর সঙ্গে স্বাভাবিক ও হাসি-ঠাট্টামূলক কথা হয়। কিন্তু কী কারণে সে আত্মহত্যা করেছে সেটা বুঝতে পারছি না।