বাড়িবাংলাদেশেকমলগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন কৃষি মন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ...

কমলগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন কৃষি মন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি

কমলগঞ্জ(মৌলভীবাজার)নিজস্ব প্রতিনিধি

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিভারী বৃষ্টিপাতে মৌলভীবাজারে দেখা দিয়েছে বন্যা। বন্যায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট।

গত সোমবার (১৮ জুন) ভোররাত থেকে জেলাজুড়ে শুরু হওয়া অতিভারী বৃষ্টিপাত এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চলছে।

বুধবার বেলা ১টার দিকে ধলাই নদীর পানি বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে নতুন করে মাতারকাপন গ্রামসহ লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পানি বাড়তে থাকায় ডুবছে নতুন নতুন এলাকা। এতে জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তি পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে।

গত তিন দিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শাহবন্দর এলাকায় অবস্থিত আশ্রয়ন প্রকল্পের সবকটি ঘর তলিয়ে গেছে, শ্রীরাইনগর এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পানির নিচে। মৌলভীবাজার-কমলগঞ্জ সড়কের ছয়কুট এলাকায় প্রধান সড়কে বন্যার পানি থাকায় যানচলাচল বন্ধ রয়েছে

এছাড়া মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শ্রীরাইনগর, চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের মাতারকাপন, বলিয়ারভাগ, সাবিয়া, শ্যামেরকোনা, শ্রীমঙ্গল উপজেলার সবুজবাগ, শাহীবাগ, ভুরভুরিয়া, রামনগর কাকিয়ারপুল, গাজিপুর, দক্ষিণ মুসলিমবাগ, সুনগইড়, খাঁসগাঁও, উত্তর ভাড়াউড়া, কমলগঞ্জ উপজেলার চৈত্রঘাট, বড়চেগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সড়ক পানির নিচে।

রাজনগর ও সদর কুশিয়ারি নদীর পানিতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানান, জেলার সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন চৌধুরী বলেন, আমার খলিলপুর ও মনুমুখ ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। মাইকিং করা হয়েছে যাতে সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে যান। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্রে হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বুধবার পর্যন্ত জেলাজুড়ে ৪৩২টি গ্রাম ও এলাকা প্লাবিত। এসব গ্রাম ও এলাকার ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯০ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এ ছাড়া ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারের লক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যার্তদের জন্য ত্রাণও প্রস্তুত রয়েছে

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে কুলাউড়া, রাজনগর, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার ৫৭১টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।জেলার প্রতিটি উপজেলার ইউএনওদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি মানুষজনকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে বুধবার (১৯ জুন) সন্ধায় কমলগঞ্জের বন্যাকবলিত রহিমপুর ইউনিয়নের বড়চেগ এলাকা পরিদর্শন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম মোসাদ্দেক আহমেদ, কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক, ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল প্রমুখ।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান জানান, গত সোমবার সকালে মাত্র ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়া অফিস ১৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। আজ বুধবার (১৯ জুন) সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়া অফিস ৪১.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। সোমবার থেকে বুধবার সন্ধা পর্যন্ত মোট ১৭৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments