
স্বপন সরকার কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
অদম্য মনোবল আর সাহস নিয়ে শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে সফল করার দূঢ় প্রত্যয় নিয়ে এক ধাপ এগিয়ে সাঈদা জান্নাত মিতু আক্তার। তিনি একজন সফল যুব নারী উদ্যোক্তা। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার টান কালিয়াকৈর এলাকায় এমনি চিত্রের দেখা মিলছে। তিনি উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয় কালিয়াকৈর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই হ্যান্ড পেইন্ট ও ব্লক বাটিকের কোর্স সম্পন্ন করে নিজ উদ্যোগে যাবতীয় পোষাক, শাড়ী, পাঞ্জাবি, থ্রি পিছ , টু পিছ, ওয়ান পিছ, কাপল, ফ্যামিলি ড্রেস, বেডসিট, পর্দা, কুশন, কুশন কভার , জুট কটন ব্যাগ, জুয়েলারির কাজ করেন।
সফল এই নারী উদ্যোক্তার নেই কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কলকারখানা। প্রায় দশ বছর আগে টাঙ্গাইল থেকে জীবিকার তাগিদে স্বামীর সাথে কালিয়াকৈরে বসবাস আরম্ভ করেন। ভাড়া করা বাসায় থেকে তৈরি করেন এইসব পণ্য সামগ্রী। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এসব পণ্য এখন যাচ্ছে বিদেশে। এই ব্যবস্যার আয় থেকে নারী পরিবারের আর্থিক চাহিদা পুরণ করছেন এবং সঞ্চয় বাড়িয়ে ব্যবসার পরিধি করেছেন অনেক বড়। এই নারী উদ্যোক্তার নিজের ফেসবুক পেইজ “শীতল” হয়ে ওঠেছে ব্যবসার গল্প একে অপরের বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। এই ফেসবুক পেইজে নতুন নতুন উদ্যোগের কথা এবং পণ্যের মান শেয়ার করেন একে অপরের সঙ্গে। এই নারী উদ্যোক্তা সাঈদা জান্নাত মিতু দৈনিক আমার বার্তার কালিয়াকৈর উপজেলার সংবাদ মাধ্যমকে শোনান তার সফলতার গল্প……
প্রায় চার বছর আগে টাঙ্গাইলের জামদানি শাড়ি ও তাঁতি কাপড় ক্রয় করে নিজের পছন্দ মতন রংয়ের তুলিতে সাজিয়ে নকশি করে, বিভিন্ন রকম ডিজাইন করে ফেসবুক পেইজ “শীতল” দেওয়া হয়। সেখান থেকেই ক্রেতার আস্থা অর্জন। প্রথম দিকে চ্যালেঞ্জ হয়েছিল। কিন্তু মান সম্মত পণ্য ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টায় ছিলনা কোন কমতি । পরবর্তী সময় ক্রেতাদের কাছে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বাড়তে থাকে। সঙ্গে বাড়তে থাকে ব্যবসার পরিধিও। এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে পণ্য যাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকায়, লন্ডন।
নারী হওয়ার কারনে প্রথমদিকে পরিবারের অনেকেই ব্যবসা করতে অনিহা প্রকাশ করত। এখন সফলতার সঙ্গে সঙ্গে পরিবার ও আশেপাশের লোকজনের আস্থাও অর্জন করেছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এখন ব্যবসার সহযোগী।
নারী উদ্যোক্তা সাঈদা জান্নাত মিতু জানান, হ্যান্ড পেইন্ট ও ব্লক বাটিকের যাবতীয় কাজ আমি নিজের হাতেই করি। আমাকে সহযোগিতা করার জন্য তিন জন লোক রয়েছে। আমার প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হতে ৭০ হাজার টাকা আয় হয়। আশেপাশের লোকজন আমার কাজ দেখে অনেক খুশি এবং তারাও শিখতে আগ্রহী।
আমার এইসব পণ্যের অর্ডার করেন অনলাইনে ফেসবুক পেজ “শীতল” হোয়াটসঅ্যাপে। কুরিয়ার মাধ্যমে তাদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই ব্যবসা আমাকে সফলতা এনে দিয়েছে, স্বামী সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
আমার আরেকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শীতল ফুড সপ হোম মেইড কেক, বিভিন্ন বেকারি ও কনফেকশনারীতে অর্ডারের মাধ্যামে কেক সাপ্লাই দিয়ে থাকি।
এছাড়া আমি জাতীয় যুব দিবস ২০২৩ সালে গাজীপুর জেলা থেকে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। শেখ হাসিনা জাতীয় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সাভার, ঢাকা থেকে ১৫ (পনের দিনের) কোর্স সম্পন্ন করেছি। আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ময়মনসিংহ থেকে বিএ অনার্স এম এ সম্পূর্ণ করেছি। বর্তমানে আমি প্রশিক্ষক হিসেবে জেলা ও উপজেলায় কাজ করছি।
তারিকুল ইসলাম তারেক (স্বামী) জানান, সে প্রথমত উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয় কালিয়াকৈর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হ্যান্ড পেইন্টিং ও ব্লকের বিভিন্ন ডিজাইনের কাজ শিখে।
অদম্য পরিশ্রম করে এই যুব নারী আজ সফল উদ্যোক্তা । আমার চাকুরীর পাশাপাশি আমি তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছি এবং ভবিষ্যতেও করব। আজ দেশে বিদেশে এই পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জনাব মো: রহমত উল্লাহ জানান,. অত্র উপজেলা থেকে আমরা বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। তার মধ্যে অন্যতম হ্যান্ড পেইন্ট ও ব্লক বাটিক সহ যাবতীয় পোশাক তৈরির কাজ। কর্মক্ষম মানুষ প্রচলিত মজুরিতে যখন কোন কাজ পায় না। তখন বেকারত্ব দূরীকরণে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনগনকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
রোজ শনিবার