মনোহরদী(নরসিংদী)নিজস্ব প্রতিনিধি
এটা আমাদের মনোহরদী উপজেলা ও তার আশেপাশের এলাকার জমি চাষের হিসাব। উল্লেখ্য,এই হিসাব আমার নিজের জমি চাষের হিসাব। আর আমি নিজেকে একজন কৃষক হিসেবে গর্ববোধ করি।
এক বিঘা/এক কানি (৩৫শতাংশ) জমি চাষের মোট খরচ:
জমি চাষযোগ্য করতে: ৫০০/-(সাইড ঠিক করা)
চারা বাবদ: ১৮০০/-
হাল চাষ এবং মই: ২৫০০/-
পানি: ৩০০০/-
(ডিজেল:৪৫০০/-)
চাড়া লাগানো: ২০০০/-
ঘাসের ঔষুধ: ১২০/-
বাছানো খরচ: ১০০০/-
ছত্রাক,মাজড়ার ঔষধ দুই বার,থোরের ঔষধ সাদা সার সহ : ১২০০/-
সার,ফসফিট,পটাশ ও অন্যান্য ভিটামিন: ২০০০/-
ধান কাটা মানুষ দিয়ে=৬০০০/-(গড় হিসাব)
ধান বাড়ি আনা: ১৫০০/-
ধান মাড়ানো= ১৮০০/-
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অন্যান্য খরচ:১৫০০/-
সর্বমোট: ২৪৯২০/- টাকা
(ডিজেল মেশিনের সেচে=২৬৪২০/-)
এক বিঘা/এক কানি জমিতে ধান শুকিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ মন ধান হয়, অথচ স্থানীয় ব্যাপারীরা মন প্রতি ১৪০০/= টাকার বেশি দাম দিচ্ছেনা। একজন কৃষক চার মাস পরিশ্রম করে এক বিঘা জমি চাষ করে কি পেল?
নিজের ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রম এর কি মূল্য?
আর যারা বর্গা চাষী হিসেবে চাষ করে তাদের কথা তো বলা বাহুল্য।কারণ,এক বিঘা জমিতে যা ফসল হচ্ছে তার অর্ধেক দিয়ে দিতে হচ্ছে জমির মালিককে।যদিও তারা শুধুমাত্র সেচ,সার ও ওষুধের অর্ধেক খরচ জমির মালিকের কাছ থেকে পায় কিন্তুুু তারপরও তাদের পরিশ্রম এবং খরচ বেশী হওয়ায় তারা আরও বেশী ক্ষতিগ্রস্থ।
কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পরও নিজের এবং দেশের কথা চিন্তা করে কৃষি কাজ ছাড়তে পারে না।আর এক দিকে অনেক ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে হয়ে যায় ঋণ খেলাপি অন্যদিকে কৃষক কৃষি-ব্যাংক এর সামান্য ঋণ নিয়ে পাই টু পাই পরিশোধ তো করেই উপরিউক্ত অনেক ক্ষেত্রে পরিশোধ করতে করতে হয়ে যায় ভূমিহীন বা দেউলিয়া।কৃষক তার জীবদ্দশায় ঋণ পরিশোধ করতে না পারলেও সেই ঋণ পরবর্তী তার পরিবার কে চক্রবৃদ্ধি সুদ সহ পরিশোধ করতে হয়।অনেক ক্ষেত্রে কৃষি কাজের সকল খরচ উঠাতে গিয়ে স্থানীয় সুদি কারবারী দের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে সে টাকা সময়মত পরিশোধ করতে না পেরে কৃষক হয় অপমানিত।তার উপর অতি-বৃষ্টি,অনা-বৃষ্টি সহ আছে আরও নানান রকম প্রাকৃতিক দূর্যোগ।এসব দূর্যোগে কৃষি কাজ ও ফলন নিয়ে সর্বদা ই কৃষক কে থাকতে হয় চিন্তিত।
অথচ ক্ষমতার চেয়ারে বসার জন্য এদেশে খরচ হয় হাজার হাজার কোটি টাকা!শত কোটি টাকা খরচ করে এদেশে বিপিএল এর মত বড় আসরের খেলার আয়োজন করা হয়।কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে অভিনেতা,গায়ক এনে করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান!বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা!হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা!ঐ দিকে কর দাতারা নিয়মিত ই তাদের কর ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে(তারপরও সম্মানের ঝুলি তাদের টা ই ভারী)!
আর এত পরিশ্রম করে আমরা কৃষক হিসেবে কি পাই?
অথচ দেশের কৃষকদের জমি চাষের বীজ,সার,ঔষুধ,সেচ সহ কৃষি খাতের অন্যান্য খরচ কমাতে নেই কারও কোন খবর।কৃষক বাঁচানোর জন্য নেই কোন জোড়ালো পদক্ষেপ।
আবার,তাদের উৎপাদিত ফসলের দাম সিন্ডিকেট করে কমানোর চেষ্টা করা হয় অহরহ।
তাই মাঝে মাঝে আমার মনে প্রশ্ন জাগে "কৃষক মারা গেলে কার কি"?
অথচ এই কৃষকরা বাঁচলেই বাঁচবে দেশ,,বাঁচবে দেশের মানুষ।