বাড়িঅন্যান্যক্লিনিকে স্বামীর পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করেন স্ত্রী!

ক্লিনিকে স্বামীর পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করেন স্ত্রী!

আমার স্বামী আমাকে শিখিয়ে দিয়েছেন। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল। সর্দির জন্য হিস্টাসিন। এন্টাসিড গ্যাসের জন্য গর্ভবর্তী মায়েদের ক্যালসিয়ামের ঔষধ দিতে হয়। সে অনুযায়ী ক্লিনিকে আসা মানুষদের আমি ঔষধ দিচ্ছি। আমি ডিগ্রী পাস করেছি। আমার স্বামীর শিখিয়ে দেওয়া পদ্ধতি অনুযায়ী ঔষধ রোগ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে বলে দাবি তার।

কথাগুলো শামীমা সুবর্না নামে এক নারীর। তিনি রোববার (২ অক্টোবর) ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানোখার ইউনিয়নের রত্নাই কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা রোগীদের ঔষধ প্রদানের সময় জানাচ্ছিলেন। তার স্বামীর পরিবর্তে স্ত্রী ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করেন এমন অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে ক্লিনিকে দেখা মিলে তার।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, রত্নাই কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপির দায়িত্বে রয়েছেন আব্দুস সালাম। প্রায়ই তিনি তার স্ত্রীকে ক্লিনিকে বসিয়ে চলে যান বাইরে। আর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা এলাকার লোকজনকে ঔষধ প্রদান করেন তার স্ত্রী।

সিএইচসিপির স্ত্রী শামীমা সুবর্না বলেন, আজকেই শুধু আমার স্বামী জরুরি কাজে বালিয়াডাঙ্গী গেছেন। তাই আমাকে ঔষধ দিতে বলেছেন। তার শিখিয়ে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী আমি ঔষধ দিচ্ছি। কোন অসুবিধা হবে না। ঔষধ কিংবা চিকিৎসা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানিক কোন ডিগ্রী আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ডিগ্রী পাশ করেছি। ভালো জ্ঞান আছে ঔষধ ও রোগ সম্পর্কে।

জানতে চাইলে রত্নাই কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপির আব্দুস সালাম বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ব্যক্তিগত কাজে একটু বাইরে এসেছিলাম। তাই স্ত্রীকে বসিয়ে দিয়েছিলাম ক্লিনিকে। এটা বেসরকারি ক্লিনিক। সরকারি চাকরি না। এটাতে তেমন কোন সমস্যা হবে না। আর আমরা তো প্রকল্পের অধীনে। নিউজ করে তেমন কিছু হবে না।

এদিকে ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা অন্য দুজন স্টাফ স্বাস্থ্য সহকারী তফিজুল ইসলাম এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডাব্লিউএ) আক্তারা খাতুনকে পাওয়া যায়নি। যদিও দুজনের সাথে পরে যোগাযোগ করা হলে জানান, একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং অন্যজন ব্যক্তিগত ছুটিতে রয়েছেন।

ক্লিনিকে ঔষধ প্রদানের রেজিষ্ট্রারে লক্ষ্য করা গেছে, আগে থেকেই স্থানীয় কয়েকজনের নাম লেখা রয়েছে। তাদের কি ঔষধ প্রদান করা হয়েছে। কোন সময় প্রদান করা হয়েছে। এমন কি ঔষধ কতজন নিয়েছেন। তার ঘরগুলো ফাঁকা রয়েছে। তবে দায়িত্বে থাকা সুবর্না জানান, এসব ঘর তার স্বামী এসে পূরণ করবেন।

এমন অব্যবস্থাপনার কথা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমাসকে জানালে তিনি জানান, সঠিক রোগ নির্ধারণ না করে ঔষধ প্রয়োগের ফলে কঠিন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এতে মৃত্যু ঝুঁকিও রয়েছে। তাছাড়া কর্মস্থলে স্বামীর পরিবর্তে স্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। আমি বিয়ষটি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইনচার্জকে বলব।

দায়িত্বে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক (ইনচার্জ) জহিরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার নির্দেশনায় ওই ক্লিনিকের সিএইচসিপিকে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে বলা হবে। এর জবাব গ্রহণযোগ্য না হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments