বাড়িঅন্যান্যচিন্তা করিয়ো না, আমি ভালো আছি—স্ত্রীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরের শেষ কথা

চিন্তা করিয়ো না, আমি ভালো আছি—স্ত্রীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরের শেষ কথা

‘তুমি চিন্তা করিয়ো না, আমি ভালো আছি আর দুই মাস পর বাড়ি ফিরব।’ এটাই ছিল জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে দায়িত্ব পালনের সময় নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী শিমু আক্তারের শেষ কথা।

স্থানীয় সময় সোমবার রাত সাড়ে আটটায় মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তি রক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। তাঁদের মধ্যে সৈনিক জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের লতিফর রহমানের ছেলে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ।

মোর জাদু চাকরি করি আর বাড়িত আইসবে না। রোজার ঈদত বাড়ি আসিবার চাইছিল, তার আগোতে লাশ হয়া গেইল। এই কষ্ট মুই কেমন করি সইম।

গোলেনুর বেগম, নিহত শান্তিরক্ষী জাহাঙ্গীর আলমের মা

আজ বুধবার সকালে তিতপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিবেশী ও স্বজনেরা জাহাঙ্গীরের বাড়িতে ভিড় করছেন। ছেলের মৃত্যুতে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গেছেন বাবা লতিফর রহমান। মা গোলেনুর বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্ত্রী শিমুর আহাজারি যেন থামছেই না।

গোলেনুর বেগম বলেন, ‘মোর জাদু চাকরি করি আর বাড়িত আইসবে না। রোজার ঈদত বাড়ি আসিবার চাইছিল, তার আগোতে লাশ হয়া গেইল। এই কষ্ট মুই কেমন করি সইম। বিয়া হবার কয়খান মাস হইল, তাতে মোর বাবাটাক আল্লাহ কাড়ি নিলে। মোর বাবাটাক তোমরা আনি দাও।’

বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে জাহাঙ্গীর নিহত হন। স্ত্রী শিমু আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে তাঁর সর্বশেষ কথা হয় সোমবার রাত ১০টার দিকে। আহাজারি করতে করতে শিমু জানাচ্ছিলেন সেই কথোপকথনের কথা। শিমু বলছিলেন, ‘সোমবার রাত ১০টায় স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে। ও আমাকে বলেছে, “তুমি চিন্তা করিয়ো না, আমি ভালো আছি আর দুই মাস পর বাড়ি ফিরব।” আমি বলেছি, যত ব্যস্ত থাকো ফ্রি হলে ফোন দিয়ো আর নিজের প্রতি খেয়াল রাখিয়ো।’

জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আবুজার রহমানও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তিনি জানান, ২০১৫ সালে ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন জাহাঙ্গীর। বছরখানেক আগে বিয়ে হয় তাঁর। ১০ মাস আগে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা মিশনে যান।

জাহাঙ্গীরের আরেক ভাই মো. বাদশা আলম এখন বাক্‌রুদ্ধ। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাইয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘শেষবারের মতো আমরা ভাইয়ের মুখটা দেখতে চাই।’

গতকাল মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় সময় সোমবার রাত সাড়ে আটটায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি বহর টহল থেকে ফেরার সময় পথে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বহরের প্রথম গাড়িটি আক্রান্ত হয়। সেটি ছিটকে ১৫ ফুট দূরে গিয়ে পড়ে। এতে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত ও একজন আহত হন।

মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে নিয়োজিত অন্য শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে আছেন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নিহত সেনাসদস্যদের লাশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে আনার কার্যক্রম চলছে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments