
মোঃ কামরুল হাসান,স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার
অবশেষে টেকনাফের আলোচিত সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ একরামুল হককে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করতে যাচ্ছে তার পরিবার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি শেষ করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন নিহত একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম।
বুধবার সন্ধ্যায় তিনি জানান, তাঁর স্বামীকে হত্যার পর তিনি বিচার পাননি। মামলা করতে পারেননি। তিনি এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি শেষ করে এনেছেন। তারপর সাংবাদিক সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন।
তবে তিনি তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন মামলার আকার নিয়ে। বলেছেন কথিত ক্রসফায়ারে যে র্যাব ও ডিজিএফআই সদস্যরা সরাসরি জড়িত ছিলেন তাদের আসামী করা হবে।
২০১৮ সালের ২৬ মে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত কক্সবাজারের টেকনাফ পৌর কাউন্সিলর মোহাম্মদ একরামুল হক গুলিতে নিহত হওয়ার পর হত্যার বিচার চাইতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা, এমনকি চিৎকার করে কাঁদতেও পারেননি। তবে হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তা ঘরের দেয়ালে লিখে রেখেছেন একরামের মেয়েরা।
সেই সময় একরাম হত্যার পর একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ করে তাঁর পরিবার। যা নাড়িয়ে দেয় সারাদেশ, এমনকি বিশ্বের সব বিবেকবান মানুষকে। একরামের প্যান্টের পকেটে থাকা ফোনে মেয়ে কল দিলে চাপ লেগে রিসিভ হয়ে যায়। এতে সেই মুহূর্তের অনেক কথা রেকর্ড হয়ে যায় নিহতের স্ত্রীর মোবাইল ফোনে। এ সময় তাঁর এক মেয়ে বলেন, ‘আব্বু, তুমি কানতেছ যে।’ এর পর শোনা যায় গুলির শব্দ, শোরগোল।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আশান্বিত হয়েছে অসহায় পরিবারটি। ভরসা পাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ওপর, বিচার পাওয়ার জন্য বসছেন নড়েচড়ে।
আয়েশা বেগম বলেন,এতদিন ভয়ে বিচার চাইতে পারিনি। এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ঘাতকদের শাস্তি চাই। একরাম মাদকের সঙ্গে কখনও জড়িত ছিলেন না, তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফাঁসানো হয়। তাঁর কোনো অপরাধ ছিল না। সে সময় মানুষের জীবনের কোনো মূল্য ছিল না। সেই থেকে ছয়টি বছর কেটে গেছে, ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা, কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি। নতুন সরকারের কাছে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আয়েশা বেগম বলেন, ‘স্বামী মারা গেছে ছয় বছরের বেশি হয়েছে। এখনও বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। তখন মামলা করতে পারিনি বিভিন্ন হুমকির কারণে। আমি এই সরকারের সহায়তা চাই, যাতে দ্রুত স্বামী হত্যার মামলা করতে পারি। বর্তমানে দুই মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি।
আয়েশা কয়েকটি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, একরামকে হত্যার পর আমরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলায়, মামলা করতে চাওয়ায় পরিবারকে অনেক হয়রানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। বিচার চেয়ে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চাইলে, তখন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ফোন করে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেন। তারা ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি শেখ হাসিনা। তিনি কীভাবে এ হত্যার দায় এড়াবেন? তৎকালীন র্যাব এবং ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনলেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হবে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘মিথ্যা’ বয়ান প্রচার করার দায়ে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদেরও বিচার চান আয়েশা। তিনি বলেন, সরকারের কাছে এ দাবি জানাই, সবকিছু যেন নতুনভাবে তদন্ত করা হয়। মামলার ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।’