এম নাসির মাহমুদ ,আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
আমতলীতে বন্যানিয়ন্ত্র বঁাধ সংস্কারে ঢালের মাটি কেটে নেওয়ায় বাঁধসহ পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর এখন ঝঁুকির মধ্যে পড়েছে। এভাবে মাটি কেটে বঁাধ সংস্কার করায় বর্ষা মৌসুমে বঁাধের মাটি ধসে পরার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় গ্রামবাসী।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার ৪৩/১ পোল্ডারের আব্দুল আজিজ তালুকদার ব্রিকফিল্ড থেকে আমড়াগাছিয়া হাইওয়ে পর্যন্ত ২কিলোমিটার এবং নাপিতবারি স্লুইস গেট থেকে চরখালি আবুল হাসেম মাস্টার বাড়ি পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারসহ মোট সাড়ে ৩কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রন বঁাধ সংস্কারের জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। টেন্ডারের মাধ্যে কাজটি পায় খুলনার আমিন এন্ড কোম্পানি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সরজমিনে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন বরগুনার ঠিকাদার মো. বাদশা মিয়া। নভেম্বর মাসে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটাতে গিয়ে বঁাধের পশ্চিম পাশের অনেক জায়গায় ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত পর্যন্ত গভীর করে ঢালের মাটি কেটেছেন। এতে বঁাধ এখন হুমকির মুখে পরেছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে বঁাধের মাটি ধসে পরার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যদিকে ঢালের মাটি গভীর করে কাটার কারনে ১৯৬৭-৬৮ সালে বঁাধ নির্মানের পর বিভিন্ন গ্রাম থেকে ভূমহীন হতদরিদ্র মানুষজন বঁাধের ঢালে এসে বসবাস শুরু করেন। এখন বঁাধ সংস্কারের কারনে এসকল হতদরিদ্র্র মানুষের বাড়িঘরও পরেছে হুমকির মুখে। অনেক জায়গায় মাটি ধসে পরার কারনে এখন বাড়িঘরও গভীর খাদে ধসে পরার উপক্রম হয়েছে। শুক্রবার সকালে উত্তর আমড়াগাছিয়া এবং চরখালি গ্রাম সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ঢালের মাটি এমন ভাবে কাটা হয়েছে যেকোন সময় বঁাধের মাটি ধসের আশঙ্কা রয়েছে। ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে মাটি কাটার কারনে উত্তরঘটখালী বঁাধের ঢালে বসবাস করা মাসুদ সিকদারের বাড়িটিতে বড় বড় ফাটল ধরেছে। বাড়িটি যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে বড় বড় ফাটলের কারনে বাড়িতে অবস্থান করা মানুষজন এখন আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন। মাসুদ সিকদার বলেন, মোগো কোন জায়গা জমি নাই। সরকারী এই জমিতে বাপ দাদার আমাল অইতে থাইক্যাআইছি। বাড়িতে এমন ভাবে ফাটল ধরেছে যে বাড়িতে পোলামাইয়া লইয়া রাইতে ঘুমাইতে ডর করে। একই গ্রামের প্রতিবেশী খালেক মাতুব্ববরের বাড়ির পিছন থেকে ২০-৩০ ফুট গভীর করে মাটি কাটায় ওই বাড়িটিও পরেছে ঝঁুকির মধ্যে। একই গ্রামের খালেক হাওলাদার, আয়নালী হাওলাদার ফারুক মৃধা মনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীর ঘরামী ও আলাল উদ্দিন বলেন, মোরা ঢালে বাব দাদার আমল অইতে বসবাস কইর্যা আইতেছি। এহন মাটি কাডার লইগ্যা মোগো থাহোনেই দায় অইয়া পরছে।
ঘটখালী গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন সিকদার ও আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, যে ভাবে ঢালের মাটি কেটে বঁাধ সংস্কার করা হচ্ছে তাতে বর্ষা মৌসুম শুরুর সাথে সাথে বঁাধের মাটি ধসে পড়তে পারে।
সাব ঠিকাদার মো. বাদশা মিয়া বলেন, ঢাল থেকে যে ভাবে মাটি কাটা হয়েছে তাতে বঁাধের মাটি ধসের কোন সম্ভবনা নেই।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আজিজুর রহমান বলেন, বঁাধের পাশে সরকারী জমির মাটি কাটা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ধসের কোন সম্ভাবনা নেই কারন বঁাধের ঢালের দুই ধারে ঘাষ লাগিয়ে পানির হাত থেকে রক্ষার জন্য সুরক্ষা দেওয়া হবে।
বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুদিপ্ত চৌধুরী বলেন, বন্যার হাত থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের রক্ষার জন্য বঁাধ সংস্কার করা হচ্ছে। বঁাধের মাটি ধসের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন কর হবে।