
কখনো রিকশা চালান, কখনো দিনমজুরি করেন, আবার কখনো আখের রস বিক্রি করেন আবুল কালাম (৫০)। স্ত্রী আসমা বেগম পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। দুজনের আয় ও বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে নেওয়া ঋণের টাকা দিয়ে চারটি গরু কেনেন এই দম্পতি। গরু লালনপালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁরা।
গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে এক অগ্নিকাণ্ডে কালাম-আসমা দম্পতির সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। আগুনে পুড়ে মারা গেছে চারটি গরু। আখের রস তৈরির মেশিনটিও আগুনে পুড়ে যাওয়ায় আবুল কালামের পথে বসার জোগাড়।
আবুল কালাম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের তালজাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে গিয়ে কথা হয় আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকার মতো তালজাঙ্গা গ্রামেও গতকাল দুপুর থেকে বিদ্যুৎ ছিল না। রাতে স্ত্রী, চার সন্তানসহ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুমে থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে আসে। কিছুক্ষণ পর গোয়াল থেকে গরুর ডাক শুনতে পান। ছুটে গিয়ে দেখেন দাউ দাউ করে গোয়ালঘরে আগুন জ্বলছে। ভেতরে গরুগুলো দাপাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি চিৎকার করতে থাকেন।
প্রতিবেশী ইসলাম উদ্দিন বলেন, কালামের চিৎকার শুনে তিনি ছুটে গিয়ে গোয়ালে আগুন জ্বলতে দেখতে পান। কিন্তু টিনের ঘর হওয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারেন ভেবে কেউ কাছে যেতে সাহস পাননি। দূর থেকে পানি ও কাদা নিক্ষেপ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও এ ঘটনায় একটি দুধেল গাভিসহ চারটি গরু পুড়ে মারা যায়। সারা শরীর পুড়ে যাওয়ায় গাভির বাছুরটিও গুরুতর আহত অবস্থায় ছটফট করছে।
কালাম বলেন, তাঁর ধারণা বিদ্যুতের শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। তিনি গোয়ালঘরে ধোঁয়া দেন না বা মশার কয়েলও জ্বালান না। এসবের বদলে তিনি গোয়ালে দুটি সিলিং ফ্যান ঝুলিয়ে দিয়েছেন, যাতে ফ্যানের বাতাসে মশা দূর হওয়ার পাশপাশি গরুগুলো আরামে থাকে। তিনি আরও বলেন, গাভির দুধ বিক্রি করে বেসরকারি সংস্থা থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতেন। এখন তিনি কী করবেন, তা বুঝতে পারছেন না।
সবগুলো গরু পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। সংসারের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনিও শঙ্কাগ্রস্ত। তিনি শুধু বলছেন, ‘অহন কীবায় চলবাম’। আগুনের ঘটনায় আবুল কালামের আখের রস তৈরির মেশিনটিও পুড়ে গেছে।
গাংগাইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কালামকে পথে বসিয়েছে। এ ঘটনায় তাঁর প্রায় চার লাখ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সহৃদয়বান ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা পাশে না দাঁড়ালে তিনি আর উঠে দাঁড়াতে পারবেন না।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে একটি আবেদন করতে হবে, যাতে সরকারিভাবে কিছু সহায়তা করা যায়।