প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৫, ২০২৫, ৮:২৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ৫, ২০২৪, ৯:২১ পি.এম
দুমকি বিলুপ্ত দিকে যাচ্ছে খেজুর গাছ থেকে রস তৈরি করা।

মোঃ বেল্লাল হাওলাদার ।। দুমকি উপজেলা(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
একসময় পটুয়াখালীর দুমকিতে সুমিষ্ট খেজুরের রসের জন্য মানুষ শীতকালের জন্য অপেক্ষা করত। শীত নামলেই খেজুর গাছ কাটার জন্য গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। শীতের সকালে খেজুর রসের স্বাদ ভোলার নয়। এছাড়া সেই রস দিয়ে পাটালি গুড় তৈরি হতো। সেই গুড় আর নতুন ধানের চালের গুড়া দিয়ে তৈরি পিঠায় উদযাপন করত নবান্ন। তৈরি হত নানা মজাদার খাবার। তার ভিতরে কত আনন্দ এবং আত্মীয়তা বৃদ্ধি পেত ।
তখন দুমকিতে প্রচুর খেজুর গাছ দেখা যেত। এখন সেই সব দিন গত হয়েছে। সময়ের পরিবর্তনে আগের মতো খেজুর গাছ দেখা যায় না। আর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খেজুরের গাছেও আগের মতো আর রস হয় না। হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস।
জানা গেছে, উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অন্যান্য গাছপালার মতো অনেক খেজুর গাছের ক্ষতি হয়েছে। অনেক খেজুর গাছ মারা যায়। এছাড়া ইটভাটার জ্বালানির জন্য দেদারসে কাটা পড়ছে খেজুর গাছ। ফলে খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় এই অঞ্চলের খেজুর রস ও গুড়ের সংকট তৈরি হয়েছে। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংরক্ষণ করতো গাছিরা।
এলাকাবাসী বলেন, শীত আসলেই দেখতাম গাছিদের মধ্যে খেজুর গাছ কাটার একটি প্রতিযোগিতা ছিল। আমরা তাদের কাছ থেকে রস এবং মিঠা কিনে বিভিন্ন পিঠা পায়েস খেতাম। এখন আগের মতো কেউ গাছ কাটে না। দুই-একজনে কাটলেও যে মূল্য চাচ্ছে তাতে কিনে খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা জানতেও পারবে না এই ঐতিহ্যবাহী রসের কথা।
দক্ষিণ মুরাদিয়ার গাছিয়া মোঃ মোতালেব হাওলাদার (৭৩) বলেন, আগে ৭০/৮০টি খেজুর গাছ চেছে রস বের করতাম, এবার গাছ কমে যাওয়ায় ৩০/৪০টি গাছ প্রস্তুত করতে চাই। গাছ কাটার সরঞ্জাম যেমন দা, রশি ও হাড়ির দাম বেড়ে গেছে। অপরদিকে বয়সের ভারে এখন আর গাছে উঠতে পারি না। তিনি আরো জানান, এখন গাছের রস কমে গেছে। আগে গাছ থেকে ১০ থেকে ১২ লিটার রস সংগ্রহ করা যেত। এখন সেখানে প্রতি গাছ থেকে ৫ লিটারের বেশি রস পাওয়া যায় না। এখন প্রতি হাড়ি রস ৫ ’শ থেকে ৬শ টাকায় বিক্রি হয়।
রস বেশি হবার জন্য যে আবহাওয়া দরকার এখন সেই আবহাওয়া নেই। পরিবেশ বিপর্যের কারণে যে হারে গাছ মরে যাচ্ছে সে তুলনায় গাছ লাগানো হচ্ছে না। দিন দিন কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ ও খেজুরের রস।
আমাদের দুমকি উপজেলা উপকূলীয় এলাকায় হওয়ায় বিভিন্ন দুর্যোগ এবং জলোচ্ছ্বাসের কারণে গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেকে ভাবেন খেজুর গাছ কোনো কাজে লাগে না। অবহেলায় অযত্নে বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ কেটে লাকড়ি হিসেবে রান্নাবান্নার কাজে এবং ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে। এসব কারণে খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে।
তাই এখন থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই খেজুরের রস পেতে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপন করতে হবে এবং সেই খেজুর গাছকে পরিচর্যা করতে হবে। সামনে দিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন বেশি পরিমান এই খেজুর রস পরবর্তী সময়ে বেশি পরিমাণ পাবে এবং খেজুর রস সম্বন্ধে জানতে পারবে। সেজন্য বেশি পরিমাণ খেজুর গাছ রোপন করতে হবে । এবং এখন থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই খেজুর গাছ সম্বন্ধে জানাতে হবে এবং তাদেরকে বলতে হবে।
কপিরাইট@২০২৩ দৈনিক প্রথম বাংলা। সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত