
রবি মিয়া,ধর্মপাশা(সুনামগঞ্জ)নিজস্ব প্রতিনিধি
পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহদীপুর গ্রামে কৃষি জমির ওপর নির্মিত মুর্শেদ ব্রিক ফিল্ড নামের একটি ইটের ভাটায় গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইট পুড়ানো হচ্ছে। বসতি সংলগ্ন এলাকায়
ইটভাটা গড়ে উঠায় বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আশপাশের বোরো, আমন ধানের ফসলি জমিতে ধান ও ফলদ গাছের ফল উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি ভাটা সংলগ্ন গ্রামের মানুষেরা জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ বিভিন্ন রোগ ভালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানজ করে কৃষি জমিতে ও বসতি এলাকায় ইট ভাটার কার্যক্রম চলে আসায় এলাকার মানুষজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ধর্মপাশা উপজেলার মহদীপুর গ্রাম সংলগ্ন মুর্শেদ ব্রিক ফিল্ড নামে ইটের ভাটাটি ১৯৯৩সালে দুই একর ১৪শতক কৃষি জমির উপর নির্মাণ করা হয়। ২০০৪সাল থেকে ঝিক ঝাক পদ্ধতিতে ফিক্সড চুঙ্গা স্থাপন করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এর আগে টিনের চুঙা এবং লাকড়ি দিয়ে ইট পুড়ানো হতো। ইট ভাটার দক্ষিণ পাশে আতকাপাড়া গ্রাম ও আতকাপাড়া বন্দ (বোরো ও আমন জমি), ইটভাটার উত্তরপাশে মহদীপুর গ্রাম, পশ্চিমে মহদীপুরের কান্দা নামক কৃষি জমি রয়েছে। এটির স্বত্তাধিকারী ছিলেন উপজেলার মহদীপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর দুজন স্ত্রী ও এক ছেলে এই ইটভাটাটির স্বত্তাধিকারী হন। তাঁরা তিনজন অবৈধ এই ইট ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩-এ বলা হয়েছে, বসতি এলাকা, পাহাড়, বন ও জলাভূমির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা করা যাবে না।
মহদীপুর গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন (৩৯) জানান, আমার বাড়ির ৫০ফুট সামনেই এই ইট ভাটা। পরিবেশ অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে ইট ভাটার কার্যক্রম চলে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না ।বসতি এলাকায় ও কৃষি জমিতে এই ইট ভাটা গড়ে উঠায় এটি বন্ধে এলাকাবাসীর পক্ষে আমি গতবছরের ১৭সেপ্টেম্বর পরিবেশ অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করলেও আমরা কোনো সুফল পাইনি। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই গত তিনমাস ধরে সেখানে পুরোদমে ইট পুড়ানো হচ্ছে।
মুর্শেদ ব্রিক ফিল্ডের স্বত্তাধিকারীদের একজন রেজুয়ান ইসলাম রাকীব দাবি, সরকারি বিধিমালা মেনে ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই তাঁরা বৈধভাবে এতদিন ধরে ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। বেশ কয়েকমাস আগে নতুন করে ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য তারা আবেদন করেছেন। প্রক্রিয়া হয়ে আসতে একটু সময় লাগায় তারা আবেদন করার পর পরই এই ভাটায় ইট তৈরি ও ইট পুড়ানোর কাজ শুরু করেছেন।
ধর্মপাশার ইউএনও জনি রায় বলেন,পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া এই ইটের ভাটায় ইট পুড়ানো ও ইট তৈরির বিষয়টি আমার জানা নেই।খোঁজ নিয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল হক বলেন, মুর্শেদ ব্রিক ফিল্ড নামের ইটের ভাটাটির ২০২৪সাল পর্যন্ত ছাড়পত্র ছিল। নতুন করে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। এই ইটের ভাটার ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে। গত সোমবার (১৭ফেব্রয়ারি) সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছাড়পত্র ছাড়া ইটের ভাটা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া বেআইনি। সভার সিদ্ধান্তের চিঠি মুর্শেদ ব্রিক ফিল্ড নামের ইটের ভাটার মালিককে এক সপ্তাহের মধ্যে চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।