প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৫, ২০২৫, ৮:৪২ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ২১, ২০২৫, ১২:২৮ পি.এম
নওগাঁয় জেলা বি এন পির আহ্বানে মহাসমাবেশ

" কাজী স্বাধীন "নিজস্ব প্রতিনিধি নওগাঁ:-
বিএনপি’র মাননীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন রাষ্ট্র পরিচালনা করা অত্যন্ত দুরুহ কাজ। একে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে, জনজীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তাহলে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া কেউ সংবিধান সংশোধন করতে পারে না। জনগনের নির্বাচিত সরকারই পারে দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে। তাই এবছরের মধ্যেই অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দেয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ‘৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। যে গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ দেশ থেকে বিতাড়িত করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত করেছিল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জীবনবিপন্ন জেনেই যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন; সেটি যেন বাস্তবে রূপায়িত হয়। সাম্য সামাজিক মর্যাদা, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে বিএনপি সংগ্রাম করে যাবে। ২০ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টার সময় জেলা বি এন পির আহবায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নানুর সভাপতিত্বে নওগাঁ নওজোয়ান মাঠে নওগাঁ জেলা বিএনপি’র বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবীতে কেন্দ্র ঘোষিত এ কর্মসূচির আয়োজক নওগাঁ জেলা বিএনপি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, চেয়ার পার্সোনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ মিজানুর রহমান মিনু আরও বলেন, অক্টোবর মাসের মধ্যে শেখ হাসিনার গণহত্যা বিচার হবে উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি। বাংলাদেশের মানুষ এখনো ভরসা রাখছে; জুলাই গণঅভ্যূত্থানে যারা হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে তাদেরকে যেনো কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রক্ষা করতে না পারে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের একশ’ ১৫/১৬বার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে; আওয়ামী লীগ একটা চার্জশীট পর্যন্ত দিতে পারেনি। প্রধান বক্তার বক্তৃতায় বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাহী কমিটি সদস্য এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন বলেছেন, বিএনপি ১৬ বছর আন্দোলনের আগুনে পুড়ে খাটি সোনায় পরিনত হয়েছে। কোন ধরণের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। চারিদিকে প্রতিবিপ্লব উঁকিঝুঁকি মারছে, তবে সেটা হতে দেয়া হবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিপ্লব ও গণতন্ত্রের প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে হবে এ অন্তরর্বতী সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল সেই সরকারকে কোনভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। স্বৈরাচার সরকার যাতে ফিরে আসতে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করেছে। ডেভিল বলতে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকেই বুঝি। কালবিলম্ব না করে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিন, সবাই সাধুবাদ জানাবে। জনগণ অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই শক্তিকে দৃশ্যমান করতে হবে। একজন (শেখ হাসিনা) ষড়যন্ত্র করে কাপড় নিয়ে দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন। এখন যারা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন তারা আগামী দিনে পালানোর পথ পাবেন না। সরকার গঠনের ৬ মাস পরে এই ধরনের বিশৃঙ্খলা কেনো? আমরা তো একটি সভ্য জাতি। এসব বিশৃঙ্খলা দূর করতে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে অন্তবর্তী সরকারকে তিনি বলেন, আপনারা সংষ্কার করুন, তবে যৌক্তিক সময়ের ভিতরে করুন। বাংলাদেশের মানুষের যে প্রত্যাশা একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই নির্বাচনটি যত দ্রুত দেয়া হবে তা সবার জন্যই মঙ্গল।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সমবায় সম্পাদক নাজমুল হক সনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এই দু’টি বিষয় নিয়ে এখনো জনগনকে রাজপথে নামতে হবে ভাবলে অবাক লাগছে। দুঃর্ভাগ্য আমাদের। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাবার ৬ মাস গত হলেও; সার্বিক পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। কারণ, আজও বাংলাদেশের শাসনযন্ত্রে ফ্যাসিবাদের দোসরেরা বর্তমান। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে বসিয়ে আপনারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) ফ্যাসিষ্টমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম করতে চাইবেন? আবার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যূত্থানে ইস্প্রিটের কথা বলবেন; এটি দ্বিচারিত ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ যে সব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে- সেটি ২০০৯ সাল থেকে বিএনপি বলে আসছে। আমরা বারবার বলেছি- বাংলাদেশের মানুষ কাকে ভোট দেবে সেটি তাদের ব্যাপার; কিন্তু তাদের ভোট দেবার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাসহ জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিসমূহ তুলে ধরেন তিনি।
সমাবেশ অন্যানদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, নওগাঁ জেলা বি এন পির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, নওগাঁ জেলার বি এন পির যুন্গ আহবায়ক শহিদুল ইসলাম টুকু,যুন্গ আহবায়ক এস এম রেজাউল ইসলাম রেজু,যুন্গ আহবায়ক আমিনুল হক বেলাল, যুন্গ আহবায়ক মামুনুর রহমান রিপন, যুন্গ আহবায়ক শফিউল আজম রানা,তারা বক্তব্যে বলেন ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার মতোই শ্রমিক-জনতার কষ্টে অর্জিত পাটকলগুলো লীজ দিতে চায়। আমরা বিএনপি বলছি, জনগন যদি আমার দল বিএনপিকে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব দেয়- তাহলে বাংলাদেশ জাতীয়তা বাদী বি এন পি দল দেশ ভাল ভাবে পরিচালনা করবে। জনসভার শুরুতেই বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিপূর্ণ সুস্থ্যতা কামনা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু ও নিরাপদে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রার্থনা, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘বীরউত্তম’, তার কণিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকোসহ দলীয় নেতাকর্মী-সমার্থক এবং সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে সকল শহীদদের মাগফেরাত কামনা করা হয়। নওগাঁ জেলা বিএনপি’র এই বিশাল জনসভার আগেই দুপুর গড়াতেই জেলা ও মহানগর, থানা/উপজেলা/পৌরসভা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমার্থকদের খন্ডখন্ড মিছিলে-মিছিলে ভরে উঠে জনসভার মাঠ জনসভা আনুষ্ঠানিক শুরুর পূর্বেই কেডি মোড় রোডসহ আশপাশের এলাকাসমূহ নেতাকর্মীদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহনে বিশাল জনসমূদ্রে রূপ নেয়। দীর্ঘদিন পর বড় পরিসরে এটি এম মাঠে এমন জনসভায় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেন। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে নেতাকর্মীদের মুহুমুহু স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে নওগাঁর রাজপথ।
কপিরাইট@২০২৩ দৈনিক প্রথম বাংলা। সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত