
মোঃ আব্দুল আজিজ ,স্টাফ রিপোর্টার নওগাঁ
নওগাঁ পত্নীতলা উপজেলায় নিভৃত একটা গ্রাম,নন্দন পুরে বর্তমান সময়ে যা অবিশ্বাস্ব হলে ঘটনা ইতিহাসের মত সত্যি। এই বৃদ্ধ বাবাকে তার বর্তমান অবস্থা জিজ্ঞেস করলে, তিনি জানান।
আমিও চোখে দেখি না, আমার ছেলেও দেখতে পায় না। আমার স্ত্রী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে যে কয়টা টাকা পাই সেটা দিয়ে সংসার চলে না। রমজান মাস কয়েকটা রোজা চলে গেল। সেহরির সময় না খেয়েও রোজা থাকতে হয় আবার ইফতারের সময় শুধু পানি দিয়েও ইফতার করতে হয়। আমার প্রতিবন্ধী ভাতার যে কয়টা টাকা পাই তা দিয়ে চাল কিনমু, তরকারি কিনমু, কাপড় কিনমু, না কী ওষুধ কিনব? এই কষ্টের কথাগুলো জাতীয় দৈনিক লাখো কণ্ঠ পত্রিকা সহ বেশ কিছু পত্রিকায় ফলাও ভাবে প্রচার হলে, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলহাজ্ব সোহেল আহম্মেদে নির্দেশে জেলা শাখার সভাপতি ও জাতীয় দৈনিক লাখো কণ্ঠ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মোঃখোরশেদ আলম ও দপ্তর সম্পাদক মির্জা তুষার আহম্মেদ চ্যানেল-২১ ও গণকন্ঠের জেলা প্রতি নিধি সহ নওগাঁ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধি পরিবারের জন্য প্রায় ১ মাসের রশদ সহ বস্তু এবং নগদ অর্থ প্রদান করেন। ইতিপূর্বে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃআলীমুজ্জাম মিলন, গত নিউজের পরে তিনি স্বশরীরে গিয়ে তাদের সার্বিক অবস্থা দেখেন এবং সহযোগিতা করেন।তিনি প্রতিবেদক কে আমরা সরকারি ভাবে এই পরিবার সহযোগিতার চেষ্টা করছি।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরিবারটি মাটির একটি জরজীর্ণ ঘরে অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন।
জানা যায়, মোজ্জাফর হোসেন ছোট বেলা থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে ছিলো তার সংসার। তিন ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলের সহযোগিতায় রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে যে টাকা রোজগার করতেন তা দিয়ে সংসার চালাতেন মোজ্জাফর কিন্তু বড় দুই ছেলে বিয়ে করার পরে তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। তারপর থেকে বাবা-মায়ের খোঁজ খবর নেয় না তারা। আর ছোট ছেলে মারুফ দশম শ্রেনীতে পড়াশোনা অবস্থায় সড়কে একটি ঔষুধ কোম্পানি গাড়ির ধাক্কায় হারিয়ে ফেলে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি। এতে একই পরিবারে বাবা-ছেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ায় অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন মোফাজ্জর। অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসাও করাতে পারছে না।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোজ্জাফর হোসেন অশ্রুসজল চোখে বলেন, আগে বড় দুই ছেলেদের সাহায্য রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে যে টাকা পাইতাম তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলতো। কিন্তু বড় দুই ছেলে বিয়ের পর ছেড়ে চলে যায়। ছোট যে ছেলে ছিলো, সেও দুর্ঘটনায় আমার মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। এরপর আমার স্ত্রী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ শুরু করে। কিন্তু যে কয় টাকা পায় তা দিয়ে আমাদের তিনজনের সংসার চলে না। আয় রোজগার করার মতো আর কোন সদস্য নেই পরিবারে। এখন বয়স হয়ে গেছে। আগের মতো রাস্তায় ঠিক মতো গানও গাইতে পারি না। আমার প্রতিবন্ধীর ভাতার যে কয় টাকা পাই তা দিয়েও চাল কিনমু, তরকারি কিনমু, কাপড় কিনমু, না কী ওষুধ কিনব? অনেক কষ্ট করে কোন বেলা খেয়ে, আবার কোন বেলা না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। এখন রোজার সময় ঠিকমতো সেহরি ও ইফতার জোগাড় করতে পারি না। অনেক সময় ইফতারে শুধু পানি ও সেহরিতে না খেয়েও রোজা থাকতে হয়।
মোজ্জাফর বলেন, ডাক্তার বলেছে ছেলের চোখে অপারেশন করালে দেখতে পাবে। কিন্তু অপারেশন জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন, সেই টাকা নেই আমার কাছে। তাই বিত্তবানেরা যদি আমাদের একুট সহযোগিতা করতেন তাহলে আমর ছেলে চোখে দেখতে পেত।
মোজ্জাফরের ছেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মারুফ বলেন, একটা সময় সবার মতো নিজের চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো, গাছ পালা দেখতে পেতাম। স্বপ্ন ছিলো পড়াশোনা করে বাবার পাশে দাঁড়াবো। সংসারের হাল ধরবো। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা আমার চোখের আলো কেড়ে নিলো। এখন ইচ্ছে থাকলেও দেখতে পারিনা। আমরা বাবা-ছেলে এখন সমাজের বোঝা। বাবার কষ্ট সহ্য করতে পারছিনা। ডাক্তার বলেছে অপারেশন করানো হলে দেখতে পাবো। কিন্তু যেখানে এক বেলা খাবারই ঠিকমতো জোটেনা, সেখানে চিকিৎসার কথা ভাবতে পারি না।