
নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় একটি কলেজের একই শিক্ষাবর্ষের ১৬ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কলেজটির একটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে গতকাল রাতেই তাঁকে আটক করা হয়।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষের নাম আমির হোসেন গাজী। তিনি উপজেলার পলাশ থানা সেন্ট্রাল কলেজ নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। গতকাল বিকেলেই ঘটনার সত্যতা পেয়ে ওই অধ্যক্ষকে তাৎক্ষণিক ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, আমির হোসেন গাজীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কলেজটির ১৬ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগে তাঁকে আটক করা হয়েছে।
পিটুনির শিকার শিক্ষার্থীরা বলেন, কলেজটিতে দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে নিয়মিত ছয়টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। গত রোববার শেষ ক্লাসের শিক্ষক পাঠদান করাবেন না এমন খবরে অধিকাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে বাড়ি চলে যান। তবে এর পরপরই ওই ক্লাসে শিক্ষক এসে উপস্থিত হন এবং পাঠদান করেন। পরদিন সোমবার যথারীতি একই নিয়মে ক্লাস চলছিল।
দুপুর ১২টার দিকে অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজী অ্যালুমিনিয়ামের তিনটি পাইপ হাতে নিয়ে ওই শ্রেণি কক্ষে ঢোকেন। জানতে চান, কারা গতকাল শেষ ক্লাসটি না করে চলে গেছেন। চলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৬ জন উঠে দাঁড়ালে তাঁদের একে একে পেটান তিনি।
এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ফেসবুকে আঘাতের ছবি পোস্ট করে অধ্যক্ষের বিচার দাবি করেন। ঘটনাটি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের মধ্যেও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পরে বিকেলে অধ্যক্ষের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা পলাশের খানেপুর এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন।
স্বাধীনুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী আঘাতের ছবি দিয়ে তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, শিক্ষকেরা গুরুজন, মা-বাবার মতো। যেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর হাত তোলাই নিষেধ, সেখানে কলেজের অধ্যক্ষ আমাদের এইভাবে মেরেছেন। আমার মা-বাবাও কোনো দিন আমাকে এভাবে মারেন নাই।
আহত আরেক শিক্ষার্থী সোহেল বলেন, অধ্যক্ষ স্যার ক্লাসে অ্যালুমিনিয়ামের তিনটি পাইপ ও পানি হাতে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই পাইপ গুলো দিয়ে পিটিয়ে ক্লান্ত হলে পানি খেয়ে আবার পিটিয়েছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে এমন নির্মম আচরণ আশা করিনি।
আমির হোসেন গাজী শিক্ষার্থীদের আঘাত করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের শুধু শাসন করতে চেয়েছিলাম। এ ঘটনাকে কেউ কেউ ইস্যু বানিয়ে পরিবেশ ঘোলা করার চেষ্টা করছে।
পলাশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিলন কৃষ্ণ হালদার বলেন, শিক্ষার্থীদের পেটানো কোনো শিক্ষকের অধিকারের মধ্যে পড়ে না। এমনকি তাঁদের তিরস্কার করে কথা বলার বিধানও নেই। এ ঘটনায় অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজীকে তাৎক্ষণিক ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।