বাড়িঅন্যান্যনরসিংদীতে বিএনপির কমিটিতে আ.লীগের ৬ নেতার নাম, প্রতিবাদে ২৩ জনের পদত্যাগ

নরসিংদীতে বিএনপির কমিটিতে আ.লীগের ৬ নেতার নাম, প্রতিবাদে ২৩ জনের পদত্যাগ

নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে ছয় আওয়ামী লীগ নেতাকে পদ দেওয়ার প্রতিবাদে বিএনপির ২৩ নেতা পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে শহরের চিনিশপুর এলাকার জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনের কাছে একযোগে পদত্যাগপত্র জমা দেন তাঁরা।

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর সদর থানা বিএনপির সভাপতি মো. আবু সালেহ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির ৪০ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহ আলম চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম সরকারকে সদস্যসচিব করা হয়। ওই কমিটির ২৩ সদস্য গতকাল পদত্যাগ করলেন।

পদত্যাগ করা ২৩ জনের মধ্যে নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আছেন ৬ জন। তাঁরা হলেন মো. সাইদুর রহমান, মো. মিজান মেম্বার, কালু মেম্বার, নজরুল ইসলাম, মো. নায়েব আলী ও মো. ওহাব মিয়া। কমিটির সদস্য বাকী ১৭ জন হলেন মো. টিপু সুলতান, মো. তারেক সরকার, মো. কমল মেম্বার, মো. হযরত আলী, মো. মান্নান মেম্বার, মো. মনু মিয়া, মো. কামাল মিয়া, মো. রতন মিয়া, মো. কাশেম আলী, মো. শামসু মিয়া, মো. আবুল হাফেজ, মো. হানিফ মিয়া, মো. নাসির মিয়া, মো. শীতল মিয়া, মো. খোরশেদ মিয়া, নুরু মিয়া ও মো. খোকা মিয়া।

পদত্যাগপত্রে বলা হয়েছে, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে জেল-জুলুম অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েও রাজপথে ছিলাম, আছি, থাকব। দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে আমাদের তৃণমূলের প্রকৃত কর্মীদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। আমাদের দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাদের দিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাই প্রতিবাদস্বরূপ আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির ৪০ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির পদ থেকে স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে এবং যার যার দায়িত্বে আমরা পদত্যাগ করলাম। তবে বিএনপির জন্য সারা জীবন কাজ করে যাব।’

আমি সারা জীবন বিএনপি করেছি। কিন্তু গতবার যখন ইউপি সদস্য নির্বাচিত হই, তখন আমাকে এলাকার প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে হয়েছে। ওই সময় যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে তারা জিগ্যেস না করেই আমার নাম সেখানে রেখেছিল। এতে আমার কী অপরাধ?

ছিদ্দিকুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক, আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপি, সদর উপজেলা, নরসিংদী

স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের যে ছয় নেতাকে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে পদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা হলেন ছিদ্দিকুর রহমান, কমল মিয়া, আবু হানিফ, ইকবাল হোসেন, হাতেম আলী ও আওলাদ হোসেন। তাঁদের মধ্যে কৃষক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হাতেম আলীকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিদ্দিকুর রহমানকে যুগ্ম আহ্বায়ক, আওয়ামী লীগের ‘স্লোগান মাস্টার’ হিসেবে পরিচিত ইকবাল হোসেনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য কমল মিয়া ও আবু হানিফকে সদস্য করা হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আওলাদ হোসেনকে যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।

যোগাযোগের চেষ্টা করে এই ছয়জনের মধ্যে শুধু ছিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন এই প্রতিবেদক। যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য থেকে বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি সারা জীবন বিএনপি করেছি। কিন্তু গতবার যখন ইউপি সদস্য নির্বাচিত হই, তখন আমাকে এলাকার প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে হয়েছে। ওই সময় যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে তারা জিগ্যেস না করেই আমার নাম সেখানে রেখেছিল। এতে আমার কী অপরাধ?’

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, ইউনিয়ন বিএনপির এই আহ্বায়ক কমিটিতে শুধু নাম ও পদ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পদ দেওয়া হয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বর কমিটি ঘোষণার পরপরই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নাম দেখে বিস্মিত হন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, এলাকার নতুন ব্যক্তিদের হয়তো এসব পদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অল্প দিনেই এ ভুল ভাঙে। কয়েক দিন ধরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়নজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এরপরই এই ২৩ জন একত্র হয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইদুর রহমান জানান, ‘স্থানীয় বিএনপির প্রকৃত নেতাদের মূল্যায়ন না করে ছয়জন আওয়ামী লীগ নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। যারা এত দিন আমাদের বাড়িঘর লুটপাট করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে কমিটি করার ক্ষোভে আহ্বায়ক কমিটির আমিসহ ২৩ জন পদত্যাগ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করি। আমাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে এই পকেট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আমরা লজ্জা নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। হাইব্রিড নেতাদের ভিড়ে আজ প্রকৃত ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত ও অবহেলিত।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময়ে আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী ও সদস্যসচিব আবদুল কাইয়ুম সরকারের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

সদর থানা বিএনপির সভাপতি আবু সালেহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজনের নাম থাকার প্রতিবাদে কমিটির ২৩ নেতা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে তাঁদের পদত্যাগপত্র এখনো গৃহীত হয়নি। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, বুঝতে পারছেন না তিনি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments