রাশেদ নিজাম শাহ কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
তিস্তা প্রধান সেচ খালের ডাইক পুনর্বাসন ও মাটি শক্তিশালীকরণ কাজটি খালের বেড খুড়ে সংস্কার করায় তিস্তা সেচ খালের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে । খালের মাটি দিয়ে ডাইকের কাজ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সুবিধা নিয়ে খালের বেট হতে ৫ ফিট হতে ৭ ফিট গর্ত খুড়ে মাটি নেয়ার সুযোগ দেয়াসহ মাটি কাটার দৃশ্য ঢাকতে বড়ভিটা জুরাবান্দা গেটে পানি ছেড়ে দিয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়- নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ ও জলঢাকা উপজেলায় তিস্তা প্রধান সেচ খালের ১৭.৯১ কিলো মিটার হতে ৩৩.৬৭ কিলো মিটার পর্যন্ত পুনর্বাসন ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প নেয়া হয়। ৭ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকায় ৩০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে কাজটি শেষ করার শর্তে কাজটি পায় পটুয়াখালির ঠিকাদার মিজানুর রহমান জেভি। তবে কাজটির এখনও সিংহভাগ কাজই হয়নি। ফলে সময় বৃদ্ধির জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে। তারা আরও জানান- কাজটির মূল ঠিকাদার মিজানুর রহমান জেভি এ কাজটি সাব ঠিকাদারী দিয়েছে খাদেমুল নামে একজনকে।
সরেজিমেন দেখা গেছে- জুরাবান্ধা সুইচগেট হতে চেংমারী ব্রীজ পর্যন্ত প্রধান খাল ছিল শুকনো। এ সুযোগে ঠিকাদারের লোকজন এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে তিস্তা প্রধান খালের বেডের দুই সাইট থেকে বড় বড় গর্ত খুড়ে মাটি তুলে নেয়। বেডের দুই সাইট থেকে ৫ থেকে ৭ ফিট গর্ত করে তারা মাটিগুলো ডাইকের উপরে রাখে। ফলে খালের বেডের মাঝ অংশ উঁচু হয়ে পড়েছে। এতে পানি প্রবাহে অসুবিধা হবে। তিস্তা খালের উদ্দেশ্যে ব্যাহত হবে। এছাড়া তারা খালের অধিগ্রহণকৃত জমি থেকে মাটি তুলেও খালের ডাইকের কাজ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এভাবে তিস্তা প্রধান সেচ খাল হতে মাটি তুলে খালের ডাইক পুনর্বাসন ও মাটি শক্তিশালীকরণের মহোৎসবে মেতেছে ঠিকাদারের লোকজন। খালের মাটি দিয়ে খালের ডাইকের কাজ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের পায়ঁতারা করছে তারা।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়- এস্কেভেটর (ভেকু) ব্যবহার করার কোন নিয়ম নেই। তিস্তা প্রধান খালের বেট হতে বড় বড় গর্ত খুড়ে মাটি নেয়ারও কোন বিধান নেই। তারা দূরবর্তী এলাকা হতে মাটি এনে তিস্তা প্রধান সেচ খালের পুনর্বাসন ও মাটি শক্তিশালীকরণের কাজ করবে। অথচ এ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে যেন ভেকু প্রদর্শনের উৎসব চলছে। এছাড়া খালের ভিতরে প্রায় ৫ থেকে ৭ টি গর্ত করে ভেকু দিয়ে অবাধে মাটি খুড়ার কাজ করছে। তারা অবাধে খালের বেট কেটেই যাচ্ছে। সম্প্রতি এলাকাবাসী কাজটি বন্ধ করে দিলেও তারা অবাধে মাটি তোলার কাজ অব্যাহত রাখে।
তিস্তা সেচ খাল হতে মাটি খননের প্রেক্ষিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কয়েক দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় নীলফামারী পানি উন্নয়ন বিভাগ। সে নোটিশগুলোকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে তিস্তা প্রধান খালের ডাইকের কাজ খালের মাটি দিয়েই করেন তারা। সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ ১৭৩২ নম্বর স্মারকে নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়- পরিদর্শনকালে দেখা যায় কিশোরগঞ্জ ছিটরাজিব নামক স্থানে সেচখালের ভিতর থেকে ৫ ফুটেরও বেশি গর্ত করে এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে খনন করে কাঁদাযুক্ত মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে যা ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন বহির্ভূত। এছাড়াও সূত্রোস্থ ২,৩,৪,৫,৬,৭ ও ৮ নং স্মারক মোতাবেক মাটি না কাটতে এবং ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেটি পরোয়া না করে একইভাবে কাজ করছেন। সেচ খালের ভিতরে খননকৃত গর্ত অতিসত্তর ভরাট করে দেওয়ার জন্য তাগাদা দেন কতৃপক্ষ। এছাড়া ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী অধিগ্রহন এলাকার বাহির থেকে মাটি এনে সৃষ্ট গর্ত পূরণ সহ সেচ খালের কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চিঠিতে গর্তগুলো পুরণ করার কথা বলায় তারা গর্ত পূরণ কাজ না করে বড়ভিটা জুরাবান্ধার অপর সাইট হতে পাইপ দিয়ে পানি উত্তোলন শুরু করেছে। যাতে পানিতে টইটম্বুর হলে গর্ত গুলো অদৃশ্যমান হয়। এছাড়া সরেজমিনে দেখা গেছে- বাহির থেকে মাটি এনে কাজটি করার নিয়ম থাকলেও এখন পর্যন্ত যে কাজটি করা হয়েছে তা খালের মাটি তুলে তারা করেছে। পাউবোর কিছু অসাধু কর্মকতার্-কর্মচারীদেও যোগসাজসে এসব অনিয়ম হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
সাব ঠিকাদার খাদেমুল ইসলামের মোবাইল (০১৭১২৯৬৪৬৪৫) নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পাইপ দিয়ে কেন পানি উত্তোলন করা হচ্ছে ও উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ অবগত কি না প্রশ্ন করা হলে বড়ভিটা জুরাবান্ধা তিস্তা সেচ খালের গেট অপারেটর হাসান বলেন- ‘ভাই আমি কিছুই জানি না।’
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আতিকুর রহমানকে পাইপ দিয়ে পানি উত্তোলনের বিষয়টি অবগত করা হলে তিনি বলেন- পানি উত্তোলন বন্ধে সংশ্লিষ্ট উপ সহকারী প্রকৌশলীকে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন পানি দিয়ে গর্ত অদৃশ্য করার কোন সুযোগ নেই। ঠিকাদারকে গর্ত পূরণ করতেই হবে। অপর দিকে খালের বেড থেকে গর্ত করে মাটি তুলে খালের ডাইকে কাঁদাযুক্ত মাটি দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান- আমরা পরিদর্শনে দেখেছি তারা ৫ ফুটের বেশি গর্ত খুড়ে মাটি তুলেছে। যা নিয়ম নেই। আমরা ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে গর্তগুলো পূরণ করাসহ বাহির থেকে মাটি আনার জন্য চিঠি দিয়েছি । তাকে কয়েক দফায় চিঠি দেওয়া হলেও তিনি একই কাজ বার বার করছেন। ফলে পরবর্তীতে এ রকম কাজ করলে তার কাজ বাতিলের চিঠিসহ শর্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।