
‘সামনে দুর্গাপূজা। বাড়ির কারও মন ভালো নেই। কীভাবে আমরা উৎসব করব? মহালয়া পূজা দিতে গিয়ে আমাদের এতগুলো মানুষ মারা গেল। মায়ের পূজা আমরা দেব, কিন্তু এবার উৎসব করব না‘- কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের সরদারপাড়া গ্রামের প্রসন্ন কুমারের স্ত্রী পার্বতী রানী।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর করতোয়ার আউলিয়ার ঘাটে নৌকাডুবি কেড়ে নেয় ৬৯ প্রাণ। এখনও তিনজনের সন্ধান মেলেনি। নৌকার মাঝি ছাড়া সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের। এমন মর্মন্তুদ ঘটনার পর থেকে জেলার বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় পার্বতীর মতো অসংখ্য পরিবারে চলছে শোকের মাতম। জ্বলছে না ঠিকমতো চুলা। কান্নার রোল না থামতেই এসেছে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজ।
বোদার মাড়েয়া বটতলী এলাকার ষাটোর্ধ্ব ননী বালা হারিয়েছেন উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলে জগদীশ চন্দ্র ও ভাতিজা সেন্টু চন্দ্রকে। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বললেন, মহালয়ার পূজা দিতে গিয়ে আমার ছেলেটা করতোয়ার জলে হারিয়ে গেল। জগদীশের অবুঝ দুই শিশু– সন্দ্বীপ ও প্রিয়াঙ্কার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। আমাদের পরিবারে পূজা নেই।
নৌকাডুবিতে মারা গেছেন একই এলাকার রূপালী রানী। স্ত্রীকে হারানোর পর বাসুদেব চন্দ্র রায় দুই শিশু অরণ্য রায় ও নন্দিনী রায়কে নিয়ে দিশেহারা। তাদের কান্না থামাতেই দিন যাচ্ছে। বাসুদেব বলেন, রূপালীর সঙ্গে নন্দিনী ডুবে গিয়েছিল। ভাগ্যের জোরে তাকে ফিরে পেয়েছি। পঞ্চগড়ে ঘরে ঘরে এবার দুর্গোৎসবের আয়োজন নেই। স্বজন হারিয়ে সবাই নির্বাক। তাঁদের ভাষ্য, দুর্গোৎসব কেড়ে নিয়েছে করতোয়ার জল।
এদিকে, নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতদের প্রতি সম্মান জানিয়ে জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং জেলা পূজা উদযাপন কমিটি এবার দুর্গাপূজার উৎসব না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।