বিপ্লব মজুমদার, (আশাশুনি), সাতক্ষীরা, বিশেষ প্রতিনিধি:
প্রযুক্তি হলো মানব সমাজের সমৃদ্ধির সুচিন্তিত ফল।অন্যভাবে বলতে গেলে, মানুষের গবেষণালব্ধ আবিষ্কারের উন্নত জীবন মানের প্রতিফলনই প্রযুক্তি। এককথায় গবেষণা বিজ্ঞানের ব্যপ্তির উৎপত্তি হলো প্রযুক্তি। সূর্য ছাড়া পৃথিবী অন্ধকার।
তাই বলে সূর্যের আলোর প্রয়োজনীয়তা ততটুকু, যতটুকু সহনীয়। প্রচণ্ড দাবদাহে বৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু অতি বৃষ্টি নয়। তেমনি মানব জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার ততটুকুই বাঞ্ছনীয় যতটুকু প্রয়োজন। মানুষের চাহিদা অফুরন্ত। সেই অফুরন্ত চাহিদার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পড়তে শুরু করছে। মোবাইল ফোন দূরকে নিকট করেছে, তাই সবাই আমরা ব্যবহার করছি। কিন্তু কোনো অপরাধী যদি মোবাইল ফোনকে ব্যবহার করে অপরাধ করে তাহলে দোষ কি সেই মোবাইল ফোনের? উত্তরে সবাই বলবেন, নিশ্চয়ই না।হ্যাঁ, এক্ষেত্রে দোষটা প্রযুক্তিকে দোষ দেওয়া যায় না।
দোষ হচ্ছে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর। মানুষের পদচারণায়,কোলাহলে,কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত এই পৃথিবীতে যদি প্রযুক্তির মাত্রাধিক্য ব্যবহার মানুষের কর্মকে কেড়ে নেয়।তাহলে সে দায় কার?? সে দায়ভার তো প্রযুক্তির-ই বটে।অর্থাৎ আামাদেরই তো! ইটভাটায় আগে যেখানে বহু শ্রমিকের শ্রমে ইট নির্মাণ হতো, আজ সেখানে প্রযুক্তি এসে কম শ্রমিকে ইটা নির্মাণ হচ্ছে। এটাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানানো উচতি কিন্তু বহু শ্রমিক যে কাজ হারালো, ভাত হারালো, বেকার হলো তার কি হবে?? এজন্য আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিতরে থেকেই বিকল্প পথকে খুঁজে বের করতে হবে। প্রযুক্তি উৎপাদন বাড়াচ্ছে, সময় বাঁচাচ্ছে কিন্তু ভিতরে ভিতরে তো বেকারও বাড়াচ্ছে! এবার হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে আমাদেরকে প্রযুক্তিগত বিদ্যায় দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে,তাহলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।আচ্ছা এবার কৃষিতে প্রযুক্তি বিপ্লবের একটা উদাহরণ টেনে আনা যাক। কৃষি প্রযুক্তি এক বিস্ময়কর পরিবর্তন সাধন করছে। এজন্য সেটাকে সাধুবাদ জানানো উচিত।কৃষকের এক একর ধান কাটতে, মাড়াই করতে ও ঘর তুলতে ধরা যাক ত্রিশ জন শ্রমিকের দরকার।
সেখানে কম্বাইন্ড হারভেস্টরের মাধ্যমে আমরা কয়েক ঘন্টায় তিন/চার জন শ্রমিক ব্যবহার করে সেই ধান ঘরে তুলছি।এ প্রযুক্তি কৃষিতে অবশ্যই দরকার আছে।কিন্তু এখানে বাকি ছাব্বিশ জন শ্রমিক যে কাজ হারালো, বেকার হলো তার কী হবে?এখন যদি ঐ ছাব্বিশ জন শ্রমিককে কম্বাইন্ড হারভেস্টর চালনায় দক্ষ করে গড়ে তোলা হয় তবুও তো সবাই কাজ পাবে না।কারণ প্রযুক্তির সাথে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুললেও শ্রম বাজারের প্রসারতা তো বাড়ছে না বরং শ্রম বাজার সংকুচিত হচ্ছে আর বেকার তৈরির সম্ভাবনা সুদূরপ্রসারী হচ্ছে। তাহলে এই প্রযুক্তিগত বেকরত্বের দায়ভার কে নেবে! রড় বড় হোটেলে যেখানে ওয়েটারের কাজ মানুষ করে আসছিলো সেখানে রোবট আজ মানুষের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। প্রযুক্তিগত বেকারত্বের এই ভার পৃথিবী শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে পারবে তো !!!