
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত রুমের সংকট, প্রশাসনের অনুমতি, অর্থ সংকট ও পর্যাপ্ত সদস্যের অভাবে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। সাংস্কৃতিক অঙ্গণের চারণভূমি হলেও বর্তমানে প্রশাসনের গড়িমসি ও সমন্বহীনতা কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম।
রোববার (১৪ আগস্ট) দুপুরে শাবি প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মতবিনিময় কালে এমনটি জানিয়েছেন জোটের নেতৃবৃন্দ।
এসময় নেতৃবৃন্দ বলেন, ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় রুমের সংকট, প্রশাসনের অনুমতি, অর্থনৈতিক সংকট ও সদস্যের অভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট রুম। তবে সুনির্দিষ্ট কোন রুম নেই। হাতে গুনা দুই-একটি রুম থাকলেও ক্যাম্পাসে পঞ্চাশের বেশি সংগঠন থাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী রুম বরাদ্দ পায় না সংগঠনগুলো। তাই সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
এসব সংকট সমাধানে প্রক্টর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকের সাথে যখনই যোগাযোগ করা হয়, তারা বলেন, আমরা বিষয়টি দেখব, দেখছি, দ্রুত এ সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে এমন আশ্বাস দেন। কিন্তু কবে বা কত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধার করবে এর সুনির্দিষ্ট কোন সময় উল্লেখ করে না তারা। প্রক্টর বা ছাত্র উপদেষ্টার পদগুলোতে ব্যক্তির পরিবর্তন হলেও শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো ধরণের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তারা।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, আমরা দেখেছি আগে একসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাগুলো একসাথে শুরু হচ্ছে না। ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড গুলোকে ভঙ্গুর করে দিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখছে প্রশাসন। তাই সেমিস্টার ফাইনালগুলো একসাথে শুরু হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে একটি বিভাগের পরীক্ষা শেষ হলে আরেকটি বিভাগের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সংগঠনে সময় দিতে চাচ্ছে না। তাই আমাদের কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না।
তারা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি সেন্টারের শৌঁচাগার গুলোর অবস্থাও নাজুক। এছাড়া ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যেখানে বিচরণ করে সেখানে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই। করোনায় দুই বছর ধরে সাংগঠনিক সপ্তাহ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় নতুন সদস্য নিতে পারে নি সংগঠন গুলো। কারণ সাংগঠনিক সপ্তাহের জন্য যে সময়ের প্রয়োজন তা প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে সময় দেওয়া হলেও ক্যাম্পাসের সমস্যা ও বিভিন্ন দূর্যোগের কারনে হয়ে উঠেনি। ফলে সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা দূরে সরে যাচ্ছে বলে অভিমত তাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় সাংগঠনিক সপ্তাহ কার্যক্রম করতে পারেনি সংগঠনগুলো। ফলে নতুন সদস্যও নিতে পারছে না তারা। ফলে স্বল্প সংখ্যক সদস্য নিয়েই চলছে তাদের কার্যক্রম। তাই শিক্ষার্থীদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানান জোটের নেতৃবৃন্দ।
এসময় প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল হুদা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংকট, সম্ভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডগুলোও তুলে ধরতে সাংবাদিকরা কাজ করে যাচ্ছে। এসময় বিগত দিনগুলোর ন্যায় আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মতবিনিময়কালে সাংস্কৃতিক জোটের সমন্বয়ক ও কিনের সভাপতি ইফরাতুল হাসান রাহিম, স্পোর্টস সাস্ট এর সাধারণ সম্পাদক সাফায়েত, দিক থিয়েটারের সভাপতি আব্দুল বাছিত সাদাফ, নোঙরের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল আলাম চৌধুরী (শান্ত), রিমের সভাপতি আশিক হোসেন (মারুফ), আজ মুক্তমঞ্চের সভাপতি সাদনান রহমান (শিখন), স্বপ্নোত্থানের সভাপতি ধীমান দাস দিব্য, গ্রীন এক্সপ্লোর সোসাইটির সভাপতি মো. মাকসুদুল হোসেন (শাওন), চোখফিল্মের সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরুল হাসান, ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি আশরাফ ইবনে হেলাল মিনহাজ, সাস্ট সায়েন্স এ্যারেনার সভাপতি মো. আবু কাউছার, কার্টুন ফ্যাক্টরির সভাপতি স্নেহাশিস পাল, শাহজালাল ইউনিভার্সিটি ফোটোগ্রাফার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মশিউর রহমান ও মাভৈঃ আবৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর দাস বৃন্ত উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে শাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল হুদা, সহ-সভাপতি রাশেদুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লা আল মাসুদ, যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম রুদ্র, কোষাধ্যক্ষ হাসান নাঈম, দপ্তর সম্পাদক জুবায়েদুল হক রবিন, কার্যকরী সদস্য তানভীর হাসান, শাদমান শাবাবসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।