মানুষের ভোগান্তি
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, জমি বেচাকেনার জন্য এবং দলিলের নকলের জন্য ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। কেউ কার্যালয়ের নিচে চেয়ারে বসে আবার কেউ কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ কথা বলছেন নকলনবিশদের সঙ্গে, যাতে কাজটা করে দেওয়া হয়। মানুষ আসছেন, ঘুরছেন; খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। কারণ নতুন দলিল নিবন্ধনসহ সব ধরনের সেবা বন্ধ রেখেছেন। নকলনবিশরা বলছেন, অপেক্ষা করতে।
চাকরি জাতীয়করণের দাবি ১৬ হাজার ২৪৬ নকলনবিশের
আন্দোলনরত নকলনবিশদের দেওয়া তথ্যমতে, রংপুর জেলার ৮টি উপজেলায় নকলনবিশ রয়েছেন ৮৬৫ জনের মতো । তারা সবাই চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন।
বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার অ্যাসোসিয়েশনের (নকলনবিশ) দেওয়া তথ্যমতে, দেশের ৫১৬টি সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কর্মরত ১৬ হাজার ২৪৬ জন নকলনবিশ চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন। গত ৩৮ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের নকলনবিশ দৈনিক প্রথম বাংলা কে বলেন, ‘পরিবার কিংবা সন্তানদের আমরা বলতে পারি না, আমাদের বেতন কতো? কলমের মাধ্যমে আমরা স্থায়ী রেকর্ড করছি। কিন্তু আমাদের চাকরি স্থায়ী করা হচ্ছে না। আমাদের দাবি একটাই, চাকরি স্থায়ীকরণ।’
আপনাদের কর্মবিরতির কারণে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জানালে নকলনবিশ মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে আমাদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়। বলার কোনও ভাষা নেই। আমাদের কোনও মূল্যায়ন নেই। সবাই জানে আমরা বেতনভুক্ত, কিন্তু আমরা যে কী আমরাই জানি। এক পাতা নকল লিখলে ২৪ টাকা পাই, আর সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে নেওয়া হয় ৬০ টাকা। ৩৮ দিন ধরে কর্মসূচি পালন করছি। কেউ আমাদের কাছে আসছে না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, অন্তত যে ৬০ টাকা সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে নেওয়া হয়, তার পুরোটাই আমাদের দেওয়া হোক। এতে সরকারের কোনও ক্ষতি হবে না।’
সমাধান কী
কর্মবিরতি ও মানুষের ভোগান্তির সমাধান কী জানতে চাইলে বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার অ্যাসোসিয়েশনের (নকলনবিশ) বদরগঞ্জ শাখার সভাপতি খোকন দাস দৈনিক প্রথম বাংলা কে বলেন, ‘আমরা ৩৮ দিন ধরে পড়ে আছি। কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। চাকরি স্থায়ীকরণ কিংবা জাতীয়করণের কোনও আশ্বাস পাচ্ছি না। গত তিন দিন ধরে আমরা আমরণ অনশন করছি। আমাদের খুব সামান্য টাকা দেওয়া হয়, যা দিয়ে আমরা চলতে পারি না। মাসে ছয়-সাত হাজার টাকা উপার্জন করি। বর্তমান সময়ে এই টাকা দিয়ে কীভাবে সংসার চলে। চাকরি স্থায়ী না করলে অন্তত আমাদের কাজের মাধ্যমে যে অর্থ সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে সরকার নিচ্ছে, সেই অর্থ পুরোপুরি আমাদের দেওয়া হলে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবো। এতে কারও ক্ষতি হবে না।’
একই অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা তুহিন বলেন, ‘কেন্দ্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমরা কর্মসূচি পালন করছি। আমরা সরকারি কাজ করি। বালাম লেখার মাধ্যমে স্থায়ী রেকর্ডের সৃষ্টি করি। এটির মাধ্যমে সরকারের স্থায়ী রেকর্ড সৃষ্টি হয়, রয়্যালটি উপার্জন হয় সরকারের। নকলনবিশ একসময়ে মারা যাবে। কিন্তু এই রেকর্ড অক্ষয় থাকবে। ততদিন পর্যন্ত সরকারের রাজস্ব আয় চলতেই থাকবে। এই নকলের কাজকে আরও অগ্রগতি করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা করতে আমাদের স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। সরকারের কাছে আবেদন, আমাদের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
রেজিস্ট্রার বললেন অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই
নকলনবিশরা কর্মবিরতি পালন করায় ৩৮ দিন ধরে নতুন দলিল নিবন্ধনসহ সব ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে বলে জানালেন বদরগঞ্জ উপজেলার রেজিস্ট্রার মোঃরেজাউল ইসলাম বিপ্লব দৈনিক প্রথম বাংলা কে তিনি বলেন, ‘নকলনবিশদের কর্মবিরতির কারণে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাদের কারণে আমরাও কাজ করতে পারছি না। মানুষকে নকল সরবরাহ করতে পারছি না। আপাতত সাধারণ মানুষকে অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। তবে আদালত থেকে আমাদেরকে কাছে যে বালামগুলো তলব করছেন, ইনডেক্স বই চাইছেন, আমরা সেগুলো দিচ্ছি। নকলনবিশদের কর্মবিরতির কথা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন। তাদের কিছু করতে হবে।’