
মোঃ ইনামুল হক,বদরগঞ্জ(রংপুর) শিক্ষানবিশ প্রতিনিধি:
বদরগঞ্জ পৌশহরের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় এবং বাজারগুলোতে হরেক রকমের পিঠার দোকানের পসরা নিয়ে বসেছেন স্থানীয় পিঠা ব্যবসায়ীরা। আবার দেখা যায়, রাস্তার পাশে কয়েকটি পয়েন্টে ভ্যানের মধ্যে গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডার ও পিঠা তৈরির উপকরণ নিয়ে দুপুরের পরপরই হাজির হোন মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা। রিকশাচালক, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক, ছোট বড় সব শ্রেণিপেশার মানুষ এ মৌসুমী পিঠা দোকানের ক্রেতা। এটি মূলত শীতের মৌসুমের ব্যবসা। এ ব্যবসা চলবে প্রায় ৫-৬ মাস ধরে। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন তাঁরা। ব্যবসাটি মূলত বাজার ও শহরের জনবহুল এলাকাগুলোতে বেশি প্রভাব ফেলেছে ।
শহরের মানুষ তুলনামূলকভাবে ব্যস্ত সময় পার করেন। আর এ কারণেই পিঠা বানানোর সময় পান না তারা। তাই এ ভাসমান খন্ডকালীন দোকানগুলো থেকে খুব সহজেই শীতের পিঠার স্বাদ নিতে পারেন ।
বদরগঞ্জ পৌরশহরের হক সাহের মোড়,কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে, মিতা সিনেসা হল সংলগ্ন, কাচাঁ বাজার,রেলস্টেশন জিতেনদত্ত মঞ্চের সামনের এলাকায়সহ উপজেলার বাজার গুলোতে একাধিক মোড়ে পাড়া-মহল্লার অলিতে-গলিতে দেখা মিলবে এ সব শীতের পিঠার দোকান।
ভ্রাম্যমাণ এ দোকানগুলোতে সুস্বাদু পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে ধনিয়াপাতা বাটা, শুঁটকি বাটা, কালোজিরা ও সর্ষে ভর্তাসহ নানা রকম উপকরণ মিলিয়ে চিতই পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, তেল পিঠা, ভাপা পিঠা,পুলি পিঠা, ডিম পিঠা, নারিকেল পিঠা। আরো পাওয়া যায় ডাল পুরি, হরেক রকমের সিঙ্গারা, পেয়াজি, ডিমের চপ ও মাংস চপসহ বিভিন্ন রকমের খাবার। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে পিঠা খেতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ এ পিঠার দোকানগুলোতে।
বিক্রেতারা বলেছেন, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা ,তেল পিঠাসহ নানান জাতের বিভিন্ন পিঠা বিক্রি করতেছে তারা। এর মধ্যে ভাপা, চিতই আর তেল পিঠার চাহিদা একটু বেশি। তাঁরা আরো বলেন, বর্তমানে প্রতিদিনই প্রায় ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকার পর্যন্ত শীতের পিঠা বিক্রি হচ্ছে।
পৌরশহরে পিঠার দোকানগুলোতে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকার পর্যন্ত পিঠা রয়েছে। দোকানগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ১-২ মণ আটার পিঠা তৈরি হয়।
বদরগঞ্জ পৌরশহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মোঃ আমীনুল ইসলাম (৪৫) পিঠার দোকান নিয়ে বসেছেন। তিনি প্রতি বছর শীতের শুরু থেকেই পিঠা বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে তার পিঠা দোকানে সহযোগিতা করছে তার ছেলে রাজু (১১) কয়েকজন কর্মচারী রয়েছেন যাদের কেউ পিঠা বানানো আবার কেউ ক্রেতাদের পিঠা পরিবেশনের কাজে ব্যস্ত। এখানে পিঠা খেতে আসা, ছাত্র আরিফ বলেন, আমরা ৬নং রাধানগর ইউনিয়ন থেকে এসেছি, পৌরশহরে আসলে কাজের ফাকেঁ পিঠার স্বাদ না নিলে মনে
জুড়ায় না। জিয়ারুল ইসলাম (৩৯) বলেন, আমি এখন এ শহরেই থাকি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে শীতের মৌসুমে আগে প্রায় সময় পিঠা বানানো হতো কিন্তু এখন সেই সময় আর নেই। এখন পিঠার স্বাদ পেতে হলে ফুটপাতেই আসতে হয়। তবে এখানে প্রায় সময় আসি,পিঠার স্বাদ নিতে।
শহরের রেলস্টেশন চত্বরে সামাদ মিয়া (৩৬) নামে এক পিঠা বিক্রেতা বলেন, আমার মত অনেকেই এ শীতের মৌসুমে পিঠা বিক্রিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
শীতের সময় মানুষ পিঠা খেতে বেশি ভালোবাসে আর দোকানগুলোতে বেচা-কেনাও বেশ ভালোই চলে। এ উপার্জনের টাকায় আমাদের সংসার চলে বেশ ভালোভাবেই। শীতের কিছু মৌসুম ব্যবসায়ী রয়েছেন যাদের ব্যবসা দিন দিন বড় হচ্ছে।
নাসিমা আক্তার(২৫)নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ঝামেলা ছাড়াই স্বল্প দামে হাতের নাগালেই এখন পিঠা পেয়ে যাচ্ছি । তাই প্রায় সময় আমি ও আমার বন্ধুদের নিয়ে এখানে পিঠা খেতে আসি ।
পরিবারের সবার জন্য পিঠা নিয়ে যাই। পড়াশুনা ও টিউশনির জন্য ব্যস্ত থাকতে হয় এ কারণে পিঠা তৈরি করার সময় পাইনা । তাইতো এ দোকানগুলোতে খেতে আসি।
শহরের হক সাহেবের মোড় সংলগ্ন এলাকায় পরিবার নিয়ে পিঠার দোকানে আসা এক এনজিও কর্মকর্তা জানান, চাকরির সুবাদে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয় না তেমন। তাই শীতে মৌসুমে রাস্তার ধারে পিঠার দোকান দেখলেই খেতে ইচ্ছা করে। মূলত শীতের সময় আমরা একটু বেশিই ভোজন বিলাসী হয়ে থাকি। বিশেষ করে শীতের পিঠার প্রতি একটু বেশিই চাহিদা থাকে । এজন্যই পারিবারিক প্রয়োজনে এখানে এসেছি কিছু কেনাকাটা করতে সেই সঙ্গে শীতের পিঠার স্বাদ নিতে।