প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৩, ২০২৫, ৬:০২ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ১০, ২০২৫, ৫:২৩ এ.এম
বীরগঞ্জে পেঁয়াজের বীজেই কৃষকদের বাজিমাত

মো:ফেরদৌস ওয়াহিদ সবুজ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর)নিজস্ব প্রতিনিধি :
চাষ করে লাভের অংকটা বেশি হওয়ায় পেঁয়াজের বীজের আরেক নাম হয়েছে কালো সোনা। সেই কালো সোনার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চাষীরা। সারাদেশে পেঁয়াজ বীজের চাহিদার ৪০ শতাংশ যোগান আসে এ উপজেলা থেকে। কৃষকরা এবার ফলন ও দাম পাওয়ার আশা করছেন। তাই পেঁয়াজের বীজ নিয়ে পরিচর্যা ও পরাগয়ম করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এবার উপজেলায় ব্যাপক হারে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
পেঁয়াজের সাদা কদম শুকিয়ে বের হয় কালো বীজ, যার বাজার দর আকাশছোঁয়া। তাই এ বীজকে বলা হয় কালো সোনা। দিনে দিনে এই কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের আবাদ বেড়েছে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। উপজেলার পলাশবাড়ী,শিবরামপুর ও পাল্টাপুর ইউনিয়নের উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ গুণ ও মানে অন্যতম সেরা। তাই এখানকার পেঁয়াজের বীজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এরই মধ্যে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এমদাদুল, বাতেন,মাসুম,শহিদুল ইসলাম ও নুরুল ইসলামসহ ৫/৬ জন স্থানীয় কৃষক। আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরেছে তাদের সংসারে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে বীরগঞ্জ পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমিতে। অর্জন হয়েছে ১৫১ হেক্টর জমিতে। বীজের আবাদ হয়েছে ৮ হেক্টরের বেশি জমিতে।
উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বরবাড়ী গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, এবছর ১৭৫ টাকায় এক কেজি বীজ ক্রেয় করে ৬ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। গতবছর এক বিঘা জমির ২২ থেকে ২৫ কেজি বীজ উৎপাদন করে প্রায় ৯ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। তিনি আরো জানান,
জমি চাষ, বীজ, রোপণ খরচ, সার ও কীটনাশক, সেচ, নিড়ানি, বাঁশ-সুতলি সহ এবার প্রতি বিঘায় খরচ দাঁড়াবে এক লাখ টাকা। আশা করছেন প্রতি বিঘায় ২২-২৪ কেজি বীজ পাবেন। যদি প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজ সর্বনিম্ন দেড় হাজার টাকা বিক্রি করতে পারেন। তবে তাদের ৩ বিঘা করে জমিতে পেঁয়াজ বীজ রয়েছে। পেঁয়াজ বীজ বিক্রি করে খরচ বাদে তাঁদের প্রায় ৬ লাখ টাকা করে লাভ হবে।
একই এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত বীজের মান ভালো। নিজের উৎপাদিত বীজে চারা প্রস্তুত করে পরীক্ষামূলক ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছি। আমরা পুরো দেশে এ বীজ ছড়িয়ে দিতে চাই। প্রত্যেক কৃষক যদি অল্প জমিতে নিজেরাই পেঁয়াজ চাষাবাদ করেন, আমাদের ঘাটতি অনেকটাই কমে আসবে।’
ডাঙ্গারহাট গ্রামের কৃষক এমদাদুল ইসলাম জানান, তার পেঁয়াজ বীজের ক্ষেত দেখতে আসছেন অনেক কৃষক। কেউ কেউ আগাম পেঁয়াজবীজ কেনার কথা বলে রেখেছেন।
উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মোস্তাক আহমেদ সিদ্দিকী মানিক বলেন, এবছর পলাশবাড়ী ইউনিয়নে পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের জন্য নিজস্ব পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের সক্ষম হওয়া গেছে। আগামী বছর এ ইউনিয়নে কৃষকদের নিজস্ব পেঁয়াজের বীজে পেঁয়াজ চাষ আবাদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধির সম্ভবনা রয়েছে।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: শরিফুল ইসলাম বলেন, বীরগঞ্জ উপজেলায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে কৃষক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। কৃষি বিভাগ নিয়মিতভাবে পরামর্শ প্রদান করছে। কৃষক উৎপাদিত বীজ প্যাকেট জাত করে সীড সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে বীজ ব্যবস্থাপনা ও বিপনণে বেশ ভালো ভূমিকা পালন করছে।
কপিরাইট@২০২৩ দৈনিক প্রথম বাংলা। সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত