নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, ষোলো উপাদান আর ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে রবিবার সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী। চন্ডীপাঠ, ঢাকের বোল, মন্ত্র, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি, অঞ্জলী, পূষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ সব মিলিয়ে প্রতিটি মন্ডপেই ছিল উৎসবের সমারোহ।
সোমবার মহামায়া দেবী শ্রীদুর্গা মায়ের মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা। দেবী দুর্গার আরেক নাম কুমারী। সব নারীর মধ্যে মাতৃভাব উপলব্ধি করার জন্যই মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। আজ সকালে দুর্গাদেবীর মহাঅষ্টমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা হয়েছে। আছে সন্ধিপূজাও। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে ও হবিগঞ্জে আয়োজন করা হয়েছে কুমারী পূজা।
শাস্ত্র অনুসারে সাধারণত এক থেকে ১৬ বছরের অজাতপূষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজা করা হয়। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজার বিধান রয়েছে। বয়সভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর প্রকাশ। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার বেলুড় মাঠে ৯ কুমারীকে পূজা করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গোৎসবের অষ্টমী তিথিতে মহা ধুমধামে কুমারী পূজার প্রথা চলে আসছে।
গত ২৫ সেপ্টম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ। পঞ্জিকামতে, এবার সিলেট জেলায় ৬০৬টি মন্ডপে পূজা আয়োজিত হবে। তার মধ্যে সার্বজনীন ৫৫৭টি, পারিবারিক ৪৯টি পূজোর আয়োজন হবে। সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সার্বজনীন ৫০টি ও পারিবারিক ১৫টি পূজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা সূত্রে জানা গেছে, সার্বজনীন আয়োজনে কোতোয়ালী থানা এলাকায় সার্বজনীন ২৯টি, পারিবারিক ১১টি, জালালাবাদ থানা এলাকায় ১৬টি, পারিবারিক ৪টি। এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় ৩৮টি, পারিবারিক ১টি। শাহপরান থানা এলাকায় সার্বজনীন ৩৮টি, পারিবারিক ১টি। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ১৩টি ও পারিবারিক ১টি। মোগলাবাজার এলাকায় ১৫টি। গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৫৬টি ও পারিবারিক ৩টি। বালাগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৩০টি ও পারিবারিক ২টি। কানাইঘাট উপজেলায় সার্বজনীন ৩৫টি। জৈন্তাপূর উপজেলায় সার্বজনীন ২০টি, পারিবারিক ২টি। বিশ্বনাথ উপজেলায় সার্বজনীন ২৪টি ও পারিবারিক ২টি। গোয়াইনঘাট উপজেলায় সার্বজনীন ৩৬টি। জকিগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ৯৯টি। বিয়ানীবাজার উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ৩৯টি, পারিবারিক ১৩টি। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ২৫টি, পারিবারিক ১টি। ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৩৭টি । ওসমানীনগর উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ২৬টি ও পারিবারিক ৮টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পাঁচটি দিন যথাক্রমে মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়াদশমী নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া। এই দিন হিন্দুরা তর্পণ করে তাঁদের পূর্বপূরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। প্রতি বছর এই পূজাতে নগরীতে নতুন নতুন সাজ-সজ্জা দেখা চোখে পড়ে। সম্প্রীতির নগর সিলেটে হিন্দু হিন্দুধর্মালম্বীদের এই পূজাতে সকল ধর্মের মানুষকেই আনন্দ ভাগ করে নিতে দেখা যায়। এবার দেবী দুর্গা এসেছেন গজে। দেবী দুর্গা চলে যাবেন নৌকায়। ২২ আশ্বিন ৯ অক্টোবর রবিবার কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা ও ৬ কার্তিক ২৪ অক্টোম্বর সোমবার শ্রী কালী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।