বাড়িএক্সক্লুসিভ নিউজমাদক বিক্রির টাকায় বাবার নামে মাজার বানাচ্ছিলেন মনির

মাদক বিক্রির টাকায় বাবার নামে মাজার বানাচ্ছিলেন মনির

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার রাজধানীর মাদক কারবারির হোতা আব্দুল্লাহ মনির ও তাঁর সহযোগী জুবায়ের হোসেন ৷ কর্মের খোঁজে বাবার সঙ্গে ঢাকায় এসে ফলের ব্যবসা শুরু করে মনির। একসময় তাঁর পরিচয় হয় স্থানীয় অপরাধ চক্রের সদস্যদের সঙ্গে। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় তাঁর অপরাধজগতের হাতেখড়ি। শুরু করেন মাদকের ব্যবসা। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন মাদকের সাম্রাজ্য। যেখানে তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল রাজধানীর ৮-১০টি এলাকা। আর এই মাদকের টাকায় গ্রামের বাড়িতে গড়ে তোলেন বাবার নামে মাজার। নাম দেন ‘চাতক শাহ মাজার’।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মাদক কারবারির হোতা আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনির ও তাঁর সহযোগী জুবায়ের হোসেনকে বিদেশি অস্ত্র, ইয়াবা ও মাদক বিক্রির টাকাসহ রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, ১২টি গুলি, ১৮ হাজার ৭৭০টি ইয়াবা, ৬ গ্রাম আইস এবং মাদক বিক্রির ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত মনির মাদক ও অস্ত্র কারবারে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আজ শুক্রবার দুপুরে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে র‍্যাব-২ রাজধানীর হাজারীবাগ মধুবাজারের একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারের অন্যতম হোতা আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনির ও জুবায়ের হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। মনিরের পরিবার জীবিকার সন্ধানে ১৯৯৫ সালে ঢাকায় চলে আসে এবং লালবাগ শহীদনগর এলাকায় বসবাস শুরু করে। ঢাকায় এসে মনিরের বাবা ফলের ব্যবসা শুরু করেন। মনির তাঁকে সহযোগিতা করতেন। একসময় মনির এলাকার বখে যাওয়া ছেলেদের সঙ্গে চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধের মাধ্যমে তাঁর অপরাধজগতে হাতেখড়ি হয়। ধীরে ধীরে সে এলাকার বখাটেদের নিয়ে লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় একটি অপরাধ চক্র গড়ে তোলেন। এই চক্রটি ব্যবহার করে মনির মাদক কারবার শুরু করেন।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাদকের অর্থ লেনদেন খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ২০১২ সাল থেকে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় মনির ও তাঁর জনৈক বন্ধু পার্টনারশিপের মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত হন। প্রথমে স্থানীয় মাদক ডিলারদের কাছ থেকে অল্প অল্প করে মাদকদ্রব্য কিনে খুচরা মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করতেন। এরপর ২০১৬ সালে কক্সবাজারের ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে তাঁর মাদক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে মনিরের কাছে নিয়মিত মাদকদ্রব্য ইয়াবা সরবরাহ করা হতো। মাঝেমধ্যে মনির ও তাঁর সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকা থেকে কক্সবাজার গিয়ে মাদকের চালান নিয়ে আসতেন। মূলত তাঁরা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করতেন। শতকরা ২০ শতাংশ হারে অ্যাডভান্স পেমেন্টের মাধ্যমে ইয়াবা ঢাকায় চলে আসত। মাদকের ডেলিভারি ও লেনদেন গ্রেপ্তারকৃত মনিরের ভাড়া বাসায় বা সুবিধামতো জায়গায় হতো। গ্রেপ্তারকৃত মনির ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় ভাড়াটিয়া ছদ্মবেশে মাদকের গোপন কারবার করতেন।

রাজধানীর ৮টিরও বেশি এলাকায় মাদক কারবার জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত মনির আরও জানায়, তিনি প্রতি মাসে কয়েকটি চালান টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসতেন। মনির মিরপুর-১৩, ইসলামবাগ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, আজিমপুরসহ আরও কয়েকজন খুচরা মাদক কারবারির কাছে সরবরাহ করতেন। প্রত্যেক খুচরা কারবারির জন্য ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হতো। কৌশলগত কারণে খুচরা কারবারিদের পারস্পরিক অপরিচিত রাখা হতো। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে হাতিরপুল এলাকায় তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া করা বাসা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন। তিনি একটি এলাকায় এক-দুই বছরের বেশি থাকতেন না।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মনির নিজ বাড়ি শরীয়তপুরে কোটি টাকার স্থাপনা নির্মাণ করেছে। তিনি বাবার কৃতী সন্তান হিসেবে নিজেকে এলাকায় তুলে ধরার জন্য মাদক কারবারের অবৈধ টাকা দিয়ে তাঁর বাবার কবরে চাতক শাহ নামে একটি মাজার নির্মাণ করছে।

মনিরের অস্ত্র কারবার
র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মনির ২০১৮ সাল থেকে অস্ত্র কারবার শুরু করে। তিনি ২০১৮ সালে অবৈধ পিস্তলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং সাত মাস কারাগারে ছিলেন। পরে তিনি ২০২০ সালে অস্ত্র ও মাদক মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। এ সময় তিনি এক বছর কারাভোগ করেন। তাঁর নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসংক্রান্ত সর্বমোট তিনটি মামলা রয়েছে।

সর্বশেষ ইয়াবা-আইসের চালান এসেছে বিমানে
র‍্যাবের মুখপাত্র জানান, কক্সবাজার থেকে মনির বিভিন্ন উপায়ে ইয়াবা আনত। কখনো কখনো কক্সবাজার-টেকনাফের কারবারিরা নিজেরাই ঢাকায় এসে ইয়াবা দিয়ে যেত। সর্বশেষ ইয়াবার চালান এসেছে বিমানে। সেই ইয়াবা আনা হয় কার্বন পেপারে পেঁচিয়ে। ২০০ পিস ইয়াবা একেকটি প্যাকিং করে কারবারিদের মাধ্যমে রাজধানীর আটটি জোনে সরবরাহ করত।

বিমানে কীভাবে ইয়াবা আসছে জানতে চাইলে র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা দুজনের এয়ার টিকিট পেয়েছি, যাঁরা মনিরের কাছে ইয়াবা ও ৫০ গ্রাম আইস পৌঁছে দিয়েছে। মনিরের বক্তব্যে উঠে এসেছে বিমানেই এসেছিল সেই চালান। তবে সেটি তদন্তসাপেক্ষ।’

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments