বাড়িঅন্যান্যমেয়েকে যৌন হয়রানির প্রতিশোধ নিতে স্বামীকে হত্যা করেন ফাতেমা

মেয়েকে যৌন হয়রানির প্রতিশোধ নিতে স্বামীকে হত্যা করেন ফাতেমা

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানার হাসান নগর এলাকার ৯ নম্বর গলির ফেরদৌসী ভিলা থেকে ফজল মিয়া (৫০) নামের এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাসাটি থেকে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয়রা খবর দিলে পুলিশ গিয়ে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। ফজল ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

এই ঘটনায় ফজলের পঞ্চম স্ত্রী ফাতেমা খাতুন ও হত্যা কাণ্ডের জড়িত সন্দেহে গাজী রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ। ফজল মিয়া ফাতেমার দ্বিতীয় স্বামী। গ্রেপ্তার গাজী রহমান ফাতেমার সাবেক স্বামী।

ফাতেমার বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, ফাতেমার প্রথম পক্ষের মেয়ে মিতু (১৩) আক্তারকে নিয়মিত যৌন হয়রানি করতেন ফজল মিয়া। তাঁকে নিষেধ করার পরও কর্ণপাত না করায় সাবেক স্বামীর সহযোগিতায় ফজল মিয়াকে হত্যা করেন ফাতেমা।

আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় লালবাগে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জাফর হোসেন।

ডিসি জাফর বলেন, ‘গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান ফাতেমা ও তাঁর সাবেক স্বামী। তিন দিন পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে কামরাঙ্গীরচরের হাসান নগর এলাকার ৯ নং গলির ফেরদৌসী ভিলা ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। মরদেহ উদ্ধারের পর এই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই। মামলার তদন্তে নেমে ফজল মিয়ার স্ত্রীকে খুঁজতে থাকে পুলিশ। গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী থানা এলাকা থেকে ফাতেমা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ।’

ফজল মিয়ার গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার কাউনিয়া থানার ঠাকুরদেশ গ্রামে। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করতেন।

গ্রেপ্তার ফাতেমাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে লালবাগ বিভাগের ডিসি জানান, ফাতেমার সাবেক স্বামী গাজী রহমান ও ফজল মিয়া এক সঙ্গে মোহাম্মদপুর এলাকায় ভিক্ষা করতেন। সেই সূত্রে ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে ফজল মিয়ার পরিচয় হয়। প্রায় দুই বছর আগে তাঁরা বিয়ে করেন। বিয়ের পর ফাতেমা খাতুন তাঁর প্রথম পক্ষের দুই মেয়েসহ ফজল মিয়ার সঙ্গে কামরাঙ্গীরচরে ফেরদৌসী ভিলায় ভাড়া থাকতেন।

জাফর হোসেন আরও জানান, ফজল মিয়া ফাতেমা খাতুনের প্রথম পক্ষের মেয়ে মিতুকে (১৩) প্রায়ই যৌন হয়রানি করতেন। ফাতেমা খাতুন ফজল মিয়াকে বারবার নিষেধ করলেও তিনি শোনেননি। অপকর্ম চালিয়ে যান। ঘটনার আগের দিন ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ফাতেমা খাতুন ও তাঁর বড় মেয়ে বাড়ির বাইরে গেলে ফজল মিয়া মিতুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য জবরদস্তি করতে থাকেন। ফাতেমা খাতুন বাড়ি ফিরে ধস্তাধস্তির দৃশ্য দেখতে পান এবং ফজল মিয়াকে ভর্ৎসনা করেন। এতে ফজল মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ফাতেমা খাতুন ও তাঁর মেয়েকে মারধর করেন। সেই সঙ্গে মিতুকে ধর্ষণের হুমকি দেন।

এ সময় ফাতেমা মামলা করার হুমকি দিলে, ফজল মিয়া বলেন, সে প্রতিবন্ধী, ধর্ষণের বিষয়ে আদালত এবং পুলিশ তাঁর কিছুই করবে না।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনার দিন ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে ফাতেমা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দুধের সঙ্গে চার থেকে পাঁচটি ঘুমের বড়ি মিশিয়ে ফজল মিয়াকে খাওয়ান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর ফাতেমা খাতুন তাঁর প্রথম স্বামী গাজী রহমানকে ফোন করে ডেকে নেন। ঘুমন্ত ফজল মিয়ার হাত-পা গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলেন ফাতেমা। এরপর ফজল মিয়ার বুক চেপে ধরেন গাজী রহমান এবং ফাতেমা খাতুনের মেয়ে মিতু মুখে বালিশ চাপা দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হলে ফাতেমা ব্লেড দিয়ে ফজল মিয়ার পুরুষাঙ্গ কেটে জানালা দিয়ে ফেলে দেন। এরপর তাঁরা ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান। ঢাকা থেকে পালিয়ে তাঁরা শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় গিয়ে আত্মগোপন করেন।

ফজল মিয়া হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ফাতেমা ও তাঁর সাবেক স্বামী গাজী রহমান হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে রয়েছে বলে জানান লালবাগ জোনের ডিসি জাফর হোসেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments