বাড়িআন্তজার্তিকশিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে সিলেটের মানুষ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ মুজতবা আলী হলের বর্ধিতাংশের উদ্বোধন

শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে সিলেটের মানুষ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ মুজতবা আলী হলের বর্ধিতাংশের উদ্বোধন

সিলেট একটি ঐতিহ্যময় স্থান। জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের সমৃদ্ধ জায়গা এ সিলেট। এক সময় বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত মানুষ ছিল সিলেটে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সম্প্রতিকালে আমরা শিক্ষা থেকে অনেকটা পিছিয়ে গেছি। দেশে শিক্ষার ক্ষেত্রেও সিলেটের অবস্থান অনেক পিছিয়ে। ফলে সিলেটে মাতৃমৃত্যু, শিশু মৃত্যুর হার বেশি এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

গতকাল শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য নির্মিত সৈয়দ মুজতবা আলী হলের বর্ধিতাংশের উদ্বোধনের পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সিলেট একটি ঐতিহ্যময় স্থান। জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের সমৃদ্ধ জায়গা এ সিলেট। এক সময় বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত মানুষ ছিল সিলেটে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সম্প্রতিকালে আমরা শিক্ষা থেকে অনেক পিছিয়ে গেছি। বাংলাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে সিলেটের অবস্থান অনেক পিছিয়ে। ফলে আমাদের মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার বেশি। যদিও সিলেটের মানুষের আয় ভালো, তবুও আমরা এসব ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি। এর অন্যতম কারণ-আমাদের অবকাঠামো, স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অভাব। এটি নিয়ে ২০০৩ সালে আমি একটা জরিপ করি। সে জরিপ অনুযায়ী বৃহত্তর সিলেট এবং বরিশালের মানুষ ছিল সমান। কিন্তু বর্তমানে বরিশালে তুলনায় সিলেটে মানুষ বেশি। তবুও শিক্ষার ক্ষেত্রে সিলেট থেকেও সাড়ে তিন গুণ বেশি স্কুল-কলেজ রয়েছে বরিশালে। আমরা দেখি একটি চাকরির জন্য বরিশালের ৬ জন গ্রাজুয়েট আবেদন করলে, সেখানে সিলেটের মানুষ থাকে মাত্র ১ জন। তাই আমাদেরকে শিক্ষার ক্ষেত্রে আরো জোর দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এ কে মোমেন বলেন, আমি আমার ছাত্র ভাই-বোনদের প্রতি আহব্বান করব তোমরা আন্দোলন কর, কিন্তু শিক্ষা ছেড়ো না। আমার খুব দুঃখ লাগে আমার দলের ছেলে-মেয়েগুলো, ছাত্রলীগ-যুবলীগ এরা চাকরি করতে পারে না, ব্যবসাটাও করতে পারেনা। সামান্য ব্যবসা করতে গেলেও তাদের দুর্নাম হয়, চাকরীটাও তারা সহজে পায়না। তবে তারা পলিটিক্সে ভালো জ্ঞান অর্জন করেছে। সুতরাং উই হ্যাভ টু থিংক, আমি শিক্ষক ও আমার ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের অনুরোধ করব এই যে, আমাদের বড় একটা রিসোর্স তাদেরকে কিভাবে সত্যিকার অর্থে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়, সে উপায় আমাদের বের করতে হবে। তাদের অনেক স্পিরিট আছে, কমিউনিকেন স্কিল আছে, তাদের কিভাবে এসব জায়গায় সম্পৃক্ত করা যায় সে পন্থা আমাদের বের করতে হবে। তাই তাদেরকে নিয়ে, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি নিয়ে আপনাদের আরো ভাবতে হবে।

শাবিপ্রবির উপাচার্য ভূয়সী প্রশংসা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অনেক আন্তরিকতা আছে, ইচ্ছা আছে। যার ফলে এত সুন্দর ভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হলে অবকাঠামোর আর অভাব থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলিষ্ট নেতৃত্ব ও প্রশাসনের কাজ ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি জেনে আনন্দিত যে এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে তারা কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত নেই। এজন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলকে আরো বেশি সহযোগিতা করতে হবে।

সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৈয়দ মুজতবা আলীর পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি একজন দূরদর্শী সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা ও সংগ্রাম করেছেন তিনি। রাষ্ট্রভাষার এক অগ্রদূত ছিলেন তিনি। আমি জেনে আনন্দিত যে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সৈয়দ মুজতবা আলীর নামে একটা হল হয়েছে, সেটির প্রথম উদ্বোধন করেন আমার বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে সুন্দর একটি দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল এই দেশকে একটি স্বনির্ভরশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে, সেটি তিনি তার অল্প দিনের মধ্যেই প্রমাণ করেছেন। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোর দিক দিয়ে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। যার ফলশ্রুতিতে সম্প্রতি ওয়েবমেট্রিক্সের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে শাবিপ্রবি। এটি একটি দুর্নীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, সুশাসনের দিক দিয়েও আমরা অন্যান্যদের রোল মডেল। বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বাজেট ৮ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামীতে এ বাজেট ১০ কোটি টাকা করার কাজ চলছে। এ বছর বিশ্বের স্বনামধন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে আমাদোর শিক্ষকদের ৭০০টির বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। আশা করছি এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে দেশের নাম্বার ওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে শাবিপ্রবি।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রাতুষ্পুত্র সৈয়দ রুহুল আমীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আমিনা পারভীন, প্রক্টর, ছাত্রলীগ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সৈয়দ মুজতবা আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু সাঈদ আরেফিন খান। এসময় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদসহ সিলেটের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জানা যায়, ২০১১ সালের ১৩ই আগস্টে মুজতবা আলী হলের উদ্বোধন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। জনপ্রিয় রম্য লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর নামে এ হলের নামকরণ করা হয়। শুরুতে তিন তলাবিশিষ্ট একটিমাত্র ব¬কে শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতা ছিলো ৬৮ জন। পরবর্তীতে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৯ বছর পর ২০২০ সালের শুরুতে এ হলের বর্ধিত করণের কাজ শুরু হয়। হলটির মোট আয়তন ৭২ হাজার ৯০৫ বর্গফুট। হল বর্ধিতকরণে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা। বর্তমানে এ হলের ৪টি ব¬কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতা ৪৪০ জন। এর মধ্যে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ১টি কক্ষ, চা শ্রমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ১টি, অতিথিদের ১টি, নামাজের জন্য ২টি, মেডিকেল কক্ষ ১, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৩টি রিডিং রুম, টিভি রুম ১, ডাইনিং, স্টেশনারী শপস, সেলুন, লন্ড্রির জন্য ৩টি কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া মটর সাইকেল স্ট্যান্ড, বাইসাইকেল স্ট্যান্ড, শীতকালীন, গ্রীষ্মকালীন খেলাধূলার ব্যবস্থাসহ ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া হলের সৌন্দর্য্য বর্ধনে হলের চারপাশে বিভিন্ন ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়েছে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments