
বসন্তের আগমনে সুনামগঞ্জের শিমুল বাগানে ফুটেছে ফুল, এ যেন বাগানটিতে ফাল্গুনের আগুন লেগেছে বাগানে৷ আগুন রাঙা ফাগুনের ছোঁয়ায় পর্যটকদের ঢল বাড়ছে শিমুল বাগানে। ঘন সবুজে পাহাড়, স্বচ্ছতোয়া জলের ঝলমলে নদী যাদুকাটা, মরুময় বিস্তীর্ণ বালুপ্রান্তর ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর তাহিরপুরের মানিগ্রামে অনন্য স্থানে অবস্থিত জয়নাল আবেদিনের শিমুল বাগান। তাহিরপুরের সীমান্তগ্রাম মানিগ্রামে দুই দশক আগে প্রায় ২ হাজার বৃক্ষ সম্বলিত শিমুল বাগানটি এখন দেশ বিদেশের সৌন্দর্য্য পিয়াসী মানুষের বিশেষ পছন্দের স্থান। কর্তৃপক্ষের মতে দেশের সর্ববৃহৎ শিমুল বাগান এটি। প্রতিবছর ফুল ফোটার এমন সময়ে বিশেষ করে ভালোবাসার দিনে দলে দলে লাল শিমুলের রঙে মন রাঙান প্রকৃতি প্রেমিকেরা। ভালোবাসার বসন্ত দিনে পুরো শিমুল বাগানই ভালোবাসাময় হয়ে উঠে। শিমুল বাগানের সারি সারি গোলাকার গাছ, চিকন ডাল, ন্যাড়া মাথায় ঝুলে থাকা লাল ফুলগুলো অন্যরকম আবহ তৈরি করে রেখেছে বাগানটিকে। ‘অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে’ অবগাহন করে অনেককেই আবেগে মাততে দেখা যাচ্ছে। বিষণ্ন মানুষও শিমুলের রঙে উজ্জ্বল করছেন দেহমন। ফাগুন হাওয়ায় ফুলের সঙ্গে তারাও নাচছেন, গাইছে গান৷
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিমুল বাগান তৈরির মানুষটি ছিলেন বাদাঘাট ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান শিক্ষানুরাগী বৃক্ষপ্রেমিক হাজী জয়নাল আবেদিন। বৃক্ষপ্রেমী এলাকায় স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠার পাশপাশি টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় লক্ষাধিক হিজল কড়চের গাছও লাগিয়েছিলেন। এলাকার বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তা গুলোকেও বৃক্ষে বৃক্ষে সবুজের তোড়ন করেছিলেন। বিভিন্ন স্থানে সারি সারি বৃক্ষরাজি এখন তার স্মৃতির স্মারক হয়ে মানুষের চিত্তে দোলা দিচ্ছে। প্রায় ৩৩ একর জায়গায় তিনি শিমুল বাগানটি পরিকল্পিত ভাবেই প্রকৃতি সুন্দর পরিবেশে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাগানের প্রায় ২ হাজার বৃক্ষ নিজ হাতে লাগিয়েছেন। পরিচর্যাও করেছেন নিজেই। মানুষকে সৌন্দর্যে মাতাতে উদ্যোগ নিলেও তার অবর্তমানে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে দূর দূরান্তের প্রকৃতিপ্রেমীরা এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন। বাগানে এসে সুন্দরে হারালেও থাকা-খাওয়া বা সাময়িক অবস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় পূর্ণ আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এদিকে এই বাগান দেখতে এসে ভ্রমণার্থীরা পাশের টাঙ্গুয়ার হাওর, শহিদ সিরাজ লেক, ট্যাকেরঘাট খনি প্রকল্প ও বড়গেফটিলা ও যাদুকাটা নদীটিও সহজে দেখে আসছেন। এক সময় অনেক দুর্গম থাকলেও আগের তুলনায় এখন যোগাযোগ কিছুটা সহজ হওয়ায় পর্যটকের সমাগম বাড়ছেই।
ইমরান আহমদ সরকারী মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রধান হিসাব সহকারী আবুল হোসেন মোঃ হানিফ বলেন, ধুলোবালি আর ভাঙ্গা চোরা পথ পেরিয়ে বাগানে এসে লাল শিমুল ফুলের নাচন দেখে মনটা ভালো হয়ে গেছে। তবে অন্য বৎসরের তুলনায় এ বৎসর ফুল কম এসেছে৷ শিমুলের সৌন্দর্য্য দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়।
ইমরান আহমদ মহিলা সরকারি কলেজের প্রতিষ্টাকালীন প্রিন্সিপাল ও জৈন্তিয়া ফটোগ্রাফী সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সহকারী অধ্যাপক মোঃ খায়রুল ইসলাম, প্রথম আলোর সিলেটের আলোকচিত্র গ্রাফার আনিস মাহমুদ, ডেইলি সানের আলোকচিত্র গ্রাফার মামুন হোসেন বলেন, শিমুল বাগানটি দেখে মনটা ভালো হয়ে যায়৷ একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে নদী এমন প্রকৃতির সুন্দর স্থানে বাগানটির আকর্ষণ আরো বৃদ্ধি করেছে। আর এই সময়ে ফুল ফোটায় বাগানটি রঙিন হয়ে ওঠে। নিজের চোখে না দেখলে যা বিশ্বাস করা কঠিন। এশিয়ার সর্ববৃহৎ প্রাইভেট শিমুল বাগান হবে এটি৷ বাগান মালিকের পাশাপাশি সরকার যদি এই বাগানকে আরো দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে পর্যটন উপযোগী অবকাঠামো করে তাহলে সারাদেশের মানুষের জন্য ভালো হয়।