
সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে গত ৩০ আগস্ট যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। ২৫তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা এর আগে ফেনীর এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিলেটের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় দৈনিক কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে।
জাতীয় দৈনিক: আপনি যোগদানের পর প্রবাসীদের জন্য ‘হটলাইন সার্ভিস’ ও বিদেশগামী যাত্রীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা সহজ করার জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস ফর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা’ চালু করেছেন। এই দুই সেবার বিষয়ে যদি কিছু বলতেন ?
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন: সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল। তাঁদের অনেক আত্মীয়স্বজন সিলেটে থাকেন। আমি যোগদানের পরে যে জিনিস খেয়াল করলাম, প্রবাসীরা নানামুখী সমস্যায় থাকেন এবং তাঁরা সেটা কীভাবে, কোথায় জানাবেন, সে ব্যবস্থা নেই। আমাদের প্রবাসীদের, অর্থাৎ রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কষ্ট লাঘবের জন্যই হটলাইন সার্ভিস চালু করা হয়েছে এবং এটা প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে, ২৪ ঘণ্টাই প্রবাসীরা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তাঁদের সমস্যা জানাতে পারেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে আমরা ১৪৩টি ফোন কল পেয়েছি, যার মধ্যে ৫০টি সমাধান হয়েছে এবং বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। আর দ্বিতীয় যে জিনিসটা হলো, ওয়ান স্টপ সার্ভিস ফর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। এটা হলো মূলত দ্রুততার সঙ্গে তাঁদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করা। অনেক সময় দেখা যায়, দালালেরা তাঁদের হয়রানি করার চেষ্টা করে। বিষয়টি মাথায় রেখে ওয়ান স্টপ সার্ভিস ফর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবাটি চালু করি।
জাতীয় দৈনিক: আপনার দৃষ্টিতে সিলেটের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র এখন কেমন?
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন: সিলেট পুণ্যভূমি। বরাবরই সিলেটের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। অন্যান্য অনেক এলাকার মতো এখানেও একটা সমস্যা আছে, সেটা মূলত জমিজমা থেকে উদ্ভূত। জমির সঠিক ভাগ বাঁটোয়ারা না হওয়া, দখল-বেদখল হওয়া নিয়ে বেশ কিছু সংঘাত হয়। নারী নির্যাতনের ঘটনা আছে। সীমান্তবর্তী কয়েকটি থানা, যেমন জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ এসব এলাকায় চোরাচালানের কিছু ঘটনাও চোখে পড়ে। অনেক থানায় পাথর কোয়ারি ও বালু মহাল আছে, সেখানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারি হয়।
জাতীয় দৈনিক : পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার স্বার্থে সিলেটের পাথর কোয়ারি গুলোয় কয়েক বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ আছে। তবে অভিযোগ আছে, রাতের অন্ধকারে অনেকে পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করছে। এসব ঠেকাতে পুলিশ কী ভূমিকা নিচ্ছে?
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন: গত ৫ বছরে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাথর কোয়ারি প্রতিরোধে জেলা পুলিশ বিভিন্ন ধারায় ৫৩টি মামলা নিয়েছে। এর মধ্যে ৫১টি অভিযোগপত্র দেওয়ার মাধ্যমে পুলিশি কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি রাতেই আমাদের রাত্রিকালীন পাহারা থাকে এসব প্রতিরোধের জন্য। তবে এই পাথর কোয়ারি কেন্দ্রিক কিছু অসাধু ও শ্রমজীবী মানুষ অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন চালিয়ে যেতে নানা ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে আছি। তা ছাড়া জেলা প্রশাসনের ভূমিকা, পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা সহ অন্যান্য সংস্থার ভূমিকা আছে। তাদেরও আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে এবং তারা আসছেও। পুলিশ যখনই অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলনের সংবাদ পায়, দ্রুততম সময়ে সে স্থানে যায়।
জাতীয় দৈনিক: সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরে অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র আছে। সেসব স্থানে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কেমন ভূমিকা রাখছে?
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন: সিলেটের এসব এলাকায় উল্লেখযোগ্য ১১টি দর্শনীয় স্থান আছে। প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। নিয়মিত পুলিশি টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এর পাশাপাশি পুলিশের আরেকটি ইউনিট আছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। তারাই মূলত পর্যটনস্থান গুলোর নিরাপত্তা দেখে। তারপরও আমরা আমাদের জায়গা থেকে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করে থাকি। সামনে শীতকালে পর্যটকদের যখন ঢল নামবে। তখন জেলা পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেবে।
জাতীয় দৈনিক : পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনে পুলিশ টাকা নেয় বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন: গত সেপ্টেম্বর মাসে ৭ হাজার ৬৩টি পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। যদি কোনো অভিযোগ পাই, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি এ বিষয়ে সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
জাতীয় দৈনিক : সিলেটের পুলিশ লাইনসে তীব্র আবাসন সংকট আছে। থানা গুলোয় পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা নেই। এসব দূর করতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেবেন কি?
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন: সিলেট জেলায় ৫টি সার্কেল অফিস, ১১টি থানা, ২টি তদন্ত কেন্দ্র, ৩টি ক্যাম্প সহ ১ হাজার ৮০০–এর ওপর ফোর্স অফিসার আছেন। থানা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া আছে। দ্রুতই অনুমোদন পাওয়া যাবে। পুলিশ লাইনসে নারী ব্যারাক ও বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণাধীন। আবাসন সংকট নিরসনেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় দৈনিক : সামনের বছরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর মধ্যে বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সিলেটে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন শুরু করেছে। আওয়ামী লীগও পাল্টা নানা কর্মসূচি করছে। দল গুলোর সভা সমাবেশ ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনার কোনো শঙ্কা আছে কি?
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন: সিলেট জেলায় ৬টি সংসদীয় আসন। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, মোট ভোটার সংখ্যা ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৭০৮। ভোটার এবার আরও বাড়বে। এবারও উৎসব মুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক দেশে নিজেদের কর্মসূচি দেবে, এটাই স্বাভাবিক। এখন পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার সংবাদ আমাদের কাছে নেই। আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতার পাশাপাশি রাষ্ট্রের অন্য অনেক সংস্থাও কাজ করছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শঙ্কা থাকলে আইনানুগ ভাবে তা দমন করা হবে।