বাড়িঅন্যান্যসিলেটের তামাবিল ও লালাখাল সীমান্ত অস্ত্র ব্যবসায়ীদের টার্গেট !

সিলেটের তামাবিল ও লালাখাল সীমান্ত অস্ত্র ব্যবসায়ীদের টার্গেট !

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে প্রায়ই আসছে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদের বড় চালান। দেশের বিভিন্ন সীমান্তের পাশাপাশি সিলেট সীমান্তকেও টার্গেট করেছে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে সিলেটের তামাবিল ও লালাখাল সীমান্ত দিয়েও ভারত হতে আসে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ, বিষ্ফোরক সামগ্রী। দেশে নাশকতা সৃষ্টি করতে এবং সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই এসব অস্ত্র ভারত হতে নিয়ে আসা হয়। খবর বাংলাদেশ প্রতিদিনের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে অস্ত্রের চালান প্রবেশের হার বেড়েছে। আর এসব অস্ত্রের ক্রেতার অধিকাংশই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ গড়ে তোলা হচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা।

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি প্রাইভেট কারসহ পাঁচজনকে আটক করে গোয়েন্দা বিভাগ। তাদের কাছ থেকে ম্যাগাজিন, গুলিসহ আটটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। আটকদের একজন আকুল হোসেন যশোরের ছাত্রলীগ নেতা। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতীয় অবৈধ অস্ত্রের বাংলাদেশে চোরাচালান সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য রীতিমতো চমকায় শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। এ সময় গ্রেফতার একজনের কাছ হতে পাওয়া ফোন নম্বর দিয়ে হোয়াটস অ্যাপে কল করা হয় ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তখন ওই প্রান্ত হতে ওপারের চক্রের সদস্যরা বলছিলেন, ‘যত প্রয়োজন তত অস্ত্র দেওয়া যাবে।’ পরে বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ হতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়।

একাধিক গোয়েন্দাসূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটের তামাবিল সীমান্ত,জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর, কাটালবাড়ী, টিপরাখলা, ডিবিরহাওর, বাইরাখেল, লালাখাল, ইয়াংরাজা, কানাইঘাটের সিঙ্গারীরপাড় সীমান্ত দিয়েও আসছে অবৈধ অস্ত্র। তবে যশোর সীমান্ত দিয়েই প্রধানত ভারতীয় অস্ত্র আসে। বোনাপোল সীমান্তের কাছে পুটখালী নামে একটি গ্রাম আছে এর অন্যদিকে ভারত। ভারতের ওই এলাকায় কমপক্ষে তিনজন অস্ত্র ব্যবসায়ী আছেন, যারা বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠান। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে অবৈধ অস্ত্রের কারখানা আছে। যশোর ছাড়াও নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ কেন্দ্রিক অস্ত্র চোরাচালান চক্র আছে। আছে ভারতীয় অস্ত্র চোরাচালান চক্রও। আর বান্দরবান ভিত্তিক গ্রুপ গুলো অস্ত্র আনে মিয়ানমার হতে।

একাধিক সংস্থার তথ্য বলছে, স্থল ও জল পথের ৩০ রুটে দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র আনা হচ্ছে। অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালান ঢুকছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়টি দুর্গম রুট দিয়ে নিয়মিত অস্ত্রের চালান ঢুকছে। এ ছাড়া শার্শার বেনাপোল স্থলবন্দর, চৌগাছার শাহজাদপুর, হিজলা, আন্দুলিয়া, মান্দারতলা, বেনাপোলের সীমান্তের গোগা, কায়বা, শিকারপুর ও দৌলতপুর সীমান্ত অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের পছন্দের রুট। বিভিন্ন চোরাচালান পণ্যের মধ্য দিয়ে আনা হচ্ছে এসব অস্ত্র। এর বাইরে সাতক্ষীরা সদরের কুশখালী ও গাজীপুর ঘাট দিয়ে মাঝে মধ্যেই অস্ত্র বাংলাদেশে ঢুকছে। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ভোলা নদী হয়ে এবং মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলা দিয়ে বলেশ্বরী নদীপথে অবৈধ অস্ত্র হাতবদল হয়। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, দিনাজপুরের হিলি, কুড়িগ্রামের দুর্গাপুর ও নাগেশ্বরী, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙার বরকল ও বাঘাইছড়ি, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও নেত্রকোনার দুর্গাপুর দিয়ে অবৈধ অস্ত্র আসছে। কুমিল্লা সীমান্ত দিয়েও আসছে অবৈধ অস্ত্র।

এদিকে চলতি বৎসরে র্যাপিড একশন ব্যটালিয়নের হাতে জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নে বেশ কিছু বিষ্ফোরক ইলেক্টোনিক ডেডনেটর উদ্ধার করা হয়। পরে জুন মাসের শেষ দিকে আদালতের নির্দেশে সিলেট সেনানিবাস ও জৈন্তাপুর থানা পুলিশ কাটাগাং এলাকায় বিষ্ফোরক ধ্বংস করে। সম্প্রতি সেপ্টেম্বর মাসে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ সিলেট তামাবিল মহাসড়কে অভিযান পরিচালনা করে পৃথক পৃথক অভিযানে অভিনব কায়দায় বালু বোঝাই ট্রাক হতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ভারতীয় প্রসাধনী ও শাড়ী আটকের ঘটনা এবং ভারতীয় নাগরিক তামাবিল ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে প্রবেশ সহ জেলা শহরে যাতায়াতের কারনে গোয়েন্দা সংস্থার ধারনা করছে তামাবিল ও জৈন্তাপুর উপজেলাকে টার্গেট নিয়েছে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে বলে জানায় সুত্রটি।

এ বিষয়ে পুলিশ বলছে- যেহেতু সামনে নির্বাচন তাই কিছু অপরাধীর চাহিদা বাড়বে। দেশি-বিদেশি পৃষ্ঠপোষকদের কারণে হয়তো বাড়বে এসব ‘কামলা’র তৎপরতা। তবে জামিনে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারির মধ্যে রেখেছে পুলিশ। বিশেষ করে যারা অতীতে অবৈধ অস্ত্র-সংক্রান্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

অপরদিকে, ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তালিকা এবং তথ্য সে দেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ভারত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে পুলিশ আশা প্রকাশ করেছে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments