বাড়িঅন্যান্যসিলেটে পুলিশের পোশাক পরা ‘রহস্যময়’ সেই ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে!

সিলেটে পুলিশের পোশাক পরা ‘রহস্যময়’ সেই ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে!

সিলেটে পুলিশের পোশাক পরা ‘রহস্যময়’ সেই ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে!
গতকাল শনিবার (৯ অক্টোবর) সকালে সিলেট মহানগরীর কিন ব্রিজের উপরে পুলিশের পোশাক পরে মোটরসাইকেল আটকিয়ে কাগজপত্র চেক করছিলেন ব্যক্তি। এসময় ব্রিজ দিয়ে আসা সিলেটের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জিল্লুর খান জিতুকেও আটকায় তিনি।

জিতুর বিষয়টি সন্দেহ হলে কৌশলে ব্যক্তিকে নিয়ে ব্রিজের দক্ষিণ পারে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যের কাছে নিয়ে যান। ট্রাফিক সদস্যও পুলিশের পোশাক পরা লোককে চিনেন না বলে জানালে জিতুর সন্দেহ দৃঢ় হয়। জিতু পুলিশের বেশধারী ব্যক্তির পোশাক খুলে নিয়ে তাকে ট্রাফিক পুলিশের কাছে দিয়ে দেন। তবে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সেই ভুয়া পুলিশকে থানা পুলিশ কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে হাতে তুলে না দিয়ে ছেড়ে দেন।

বিষয়টি নিয়ে সিলেটের শীর্ষ নিউজ পোর্টাল শনিবার রাতে ‘পুলিশের পোশাক পরা সিলেটে ‘রহস্যময়’ এই ব্যক্তি কে?’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। সিলেট জুড়ে হৈ-চৈ পড়ে যায়।

সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিক ফরিদ উদ্দীন জানতে পারেন ভুয়া পুলিশের বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছত্তিশ গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত কাওছার মিয়ার ছেলে তোফায়েল আহমেদ।

তোফায়েলের পরিচয় নিশ্চিত হতে সাংবাদিক ফরিদ উদ্দীন ফেঞ্চুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী বদরুদ্দোজা ও ইউপি সদস্য বাদশা মিয়ার সঙ্গে আলাপ করেন এবং পুলিশের পোশাক পরা তোফায়েলের ছবি দেখান। ছবি দেখে দুই জনপ্রতিনিধি নিশ্চিত করেন পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তি মৃত কাওছার মিয়ার ছেলে তোফায়েল আহমদ।

চেয়ারম্যান কাজী বদরুদ্দোজা জানান, তারা ৩ ভাই। ৩ জনই বাকপ্রতিবন্ধী। ভুয়া পুলিশ সাজা তোফায়েলও একজন বাকপ্রতিবন্ধী। হয়তো না বুঝে এটা করে ফেলেছে। সে আগে ছোট খাটো চুরির ঘটনা ঘটাতো। পুলিশের পোশাকটা হয়তো কোথা হতে চুরি করে জোগাড় করেছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অতিরিক্ত দায়িত্ব-মিডিয়া) সুদ্বীপ দাস বলেন, আমরা এখনও ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি। প্রকাশিত নিউজের তথ্যের ভিত্তিতে খোঁজ নিচ্ছি।

উল্লেখ্য, সিলেটে পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিকে হাতের নাগালে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছেন একজন ট্রাফিক পুলিশ। শনিবার সকাল ৯টার দিকে মহানগরীর কিন ব্রিজের দক্ষিণ মুখে এ ঘটনা ঘটে। ভুয়া পুলিশকে ধরে ট্রাফিক পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিলেন জিল্লুর রহমান জিতু নামের সিলেটের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। পরে এ ঘটনা নিজের ফেসবুক ওয়ালে ছবিসহ তুলে ধরেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেটের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জিল্লুর রহমান জিতুর এ বিষয়ক একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস মিডিয়ার নজরে আসে। জিতুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিডিয়াকে জানান বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে তিনি মোটর সাইকেল যোগে জরুরি প্রয়োজনে উত্তর সুরমা হতে কিন ব্রিজ হয়ে দক্ষিণ সুরমায় যাচ্ছিলেন। ব্রিজের মধ্যখানে পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তি তাকে হাত নেড়ে থামায় এবং তার গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চায়। এসময় জিতু ঐব্যক্তিকে বলেন ‘এখানে দাঁড়ালে তো অন্যান্য গাড়ির চলাচল বিঘ্নিত হবে। আসুন ব্রিজের নিচে গিয়ে কাগজ দেখাই।’

পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিকে জিতু তার মোটর সাইকেলের পেছরমনে বসিয়ে ব্রিজ হতে নামতে থাকেন। কিন্তু পোশাকের নেম প্লেটের জায়গা কোনো নাম না থাকায় এবং নামার সময় কথা বলার একপর্যায়ে ওই ব্যক্তির প্রতি জিতুর সন্দেহ হয় এবং ব্রিজ হতে নেমেই সেখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের নিকট ওই ব্যক্তিকে চেনেন কি না জিজ্ঞেস করেন। তখন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তিকে চিনেন না বলে জানান এবং কোনোদিন দেখেননি বলেন।

এসময় জিতুর সন্দেহ আরও দৃঢ় হয় এবং পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তিকে ঝাপটে ধরে। সেখানে অনেক উৎসুক জনতা জড়ো হয়ে যায়। এসময় সেখানে দায়িত্বরত সেই ট্রাফিক পুলিশও ছিলেন। পরে জিতু ব্যক্তির শরীর হতে পুলিশের পোশাক টেনে খুলেন ও সেটি ট্রাফিক পুলিশের হাতে দেন এবং প্রতারককে ট্রাফিক পুলিশের জিম্মায় দিয়ে তিনি তার গন্তব্যের দিকে চলে যান।

সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন ‘আমার জরুরি প্রয়োজন ছিলো। তাই ওই প্রতারককে ট্রাফিক পুলিশের কাছে রেখে যাই। যদি জরুরি কাজ না থাকতো তবে আমি নিজে থানা পুলিশের হাতে তাকে তুলে দিতাম।’

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments