অরবিন্দ রায় , স্টাফ রির্পোটারঃ
নরসিংদীতে স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্তের ১৭৩ তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়েছে।অবিভক্ত বাংলার কৃতি সন্তান স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্তের (কে. জি. গুপ্ত ) জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শতবর্ষের পাঁচদোনা স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্ত স্কুল এন্ড কলেজে আজ বুধবার দুপুরে কেক কাটা, চিএাংকন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্ত ১৮৫১ খৃস্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নরসিংদী জেলার ভাটপাড়া গ্রামে গুপ্ত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কালী নারায়ন গুপ্ত মাতার নাম অন্নদা সুন্দরী গুপ্ত ।
১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পোগজ স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই ১৮৬৬ সালে কৃতিত্বের সাথে এন্ট্রান্স পাশ করেন। এরপর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতা যান। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে বিলেতের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তিনি লিংকন্স ইন থেকে বার-এট-ল’ সম্পন্ন করেন। ১৮৭১ সালে তিনি আইসিএস উত্তীর্ণ হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্ত ছিলেন পূর্ব বাংলার প্রথম আই সি এস অফিসার। তিনি দীর্ঘ কর্মজীবনে মহকুমা প্রশাসক, জেলা প্রশাসক, আবগারি কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার, বোর্ড অব রেভিনিউ-এর সদস্যসহ সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একই সঙ্গে হাউস অব কমন্স-এর একমাত্র ভারতীয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯০৬ সালে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তৎকালীন বৃটিশ সরকার তাকে স্যার উপাধিতে ভূষিত করেন।
স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্তের কর্মকান্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে‘কেসিএসআই’( নাইট কমান্ডার অব দ্য স্টার অব ইন্ডিয়া) উপাধিতে ভূষিত করে । ব্রিটিশদের স্যার উপাধি প্রাপ্ত প্রথম বাঙালি ছিলেন কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্ত।
১৯১৯ সালে তার নামে নরসিংদীর পাঁচদোনায় স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয় স্হাপন করা হয়। ১৯২৬ সালের ২৯ মার্চ ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তী এ বাঙ্গালী কলকাতার বালীগঞ্জে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পাঁচদোনা স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্ত স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাসুম বিল্লার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন নরসিংদী সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কফিল উদ্দিন ভূইয়া বাচ্চু। বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুকুমার চন্দ্র কর, রায়হান উদ্দিন আহমদ, দুদু চন্দ্র সূএধর, ছন্দা রানী সাহা, নাসরিন জাহান, মরিয়ম বেগম, সুজিত কুমার দাস, পঞ্চমী রানী দে,সিমিয়র শিক্ষক সুজন দও, সিনিয়র শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ ।
অধ্যক্ষ মো. মাসুম বিল্লাহ কে. জি. গুপ্তের কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্তের কৃতিত্বময় শিক্ষা জীবন, সফল কর্মজীবন ও সমাজ সংস্কারে তাঁর অবিস্মরণীয় ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। কে, জি গুপ্তের অসাম্প্রদায়িক জীবনাদর্শে অণুপ্রাণিত হয়ে সমাজ থেকে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় কুসংস্কার দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে তরুণ প্রজন্মের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
সিনিয়র শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্তের আর্দশ কে তরুণ প্রজন্মকে বুকে লালন করতে হবে। তার আর্দশ নিয়ে দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে আত্ম নিয়োগ করতে হবে। স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্ত যুগ যুগ ধরে তার কর্মের জন্য মানুষের মনে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক বাবলী রহমান জানান, স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্ত বাঙালী জাতির অহংকার। তিনি প্রথম বাঙালি আই সি এস অফিসার। তিনি শিক্ষা দিয়ে বাঙালিদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছেন। তার জন্মবার্ষিকীতে জানাই আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্ত ছিলেন সমাজ সেবক ও ধর্ম সংস্কারক। তিনি ১৮৬৯ সালে ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ১৩০০ বঙ্গাব্দে তিনি নিজ জমিদারি এস্টেট কাওরাইদে ব্রাহ্ম মন্দির নির্মাণ করেন। ১৮৭১ ঢাকায় রামমোহন রায় লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার বাবা ছিলেন ঢাকা ও ময়মনসিংহ ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
১৯১৯ সালে স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্তের নামে পাঁচদোনায় স্কুল, তার বাবার নামে
কাওরাইদ কালী নারায়ন গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়। কে. জি. গুপ্তের নামের ঢাকার লক্ষী বাজারে কে. জি. গুপ্ত লেন রাস্তার নাম করন করা হয়।
অধ্যক্ষ মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, আমি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্তের জন্মবার্ষিকী স্কুলে স্বল্প পরিসরে হলেও পালন করে আসছি ।
আগামী দিনে শিক্ষার্থীরা কে. জি. গুপ্তের আর্দশে অনুপ্রেরণা নিয়ে আদর্শ মানুষ হয়ে উঠবে এটাই আমার প্রত্যাশা।
আলোচনা শেষে চিএাংকন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহনকারী বিজয়ীদের পুরষ্কার বিতরন করা হয়।