জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিক্ষুক ও তার পরিবারের সদস্যদের শারীরিক নির্যাতন ও টেনে হিঁচড়ে বের করে গ্রেফতারের ঘটনায় পুলিশের ৪ এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত, ২কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়।
১০ মে মঙ্গলবার সরিষাবাড়ী হাসপাতাল হতে ওই ভিক্ষুক সহ ৪ জনকে টেনে হিঁচড়ে গ্রেফতারের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ সুপার মোঃ নাছির উদ্দীন আহমেদ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।
জানা যায়, সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসি বাজার এলাকার ৬৫ বছর বয়সী ভিক্ষুক আব্দুল জলিল ২০ শতাংশ জমিতে বসতভিটা বানিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করে আসছেন। সম্প্রতি মুজিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ওই জমি দাবি করায় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এনিয়ে মামলা হলে আদালত ভিক্ষুক আব্দুল জলিলের পক্ষে ডিক্রি দেয়। আদালতের আদেশ অমান্য করে ৯ মে সোমবার সকালে প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমান দলবল নিয়ে আব্দুল জলিলের পরিবারের ওপর হামলা চালায়। হামলায় আব্দুল জলিল, তার স্ত্রী লাইলী বেগম, বড়ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক, মেজো ছেলে ওয়ায়েজ করোনি, ছোট ছেলে হামদাদুল হক সহ পরিবারের অন্য সদস্য জসিম মিয়া আহত হলে তাদেরকে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
হামলার পর উল্টো মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে চিকিৎসাধীন ৪জনসহ ১৫ জনকে আসামি করে সরিষাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার পর মঙ্গলবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিক্ষুক আব্দুল জলিল সহ ৪ জনকে হাসপাতালের শয্যা হতে শারীরিক নির্যাতন করে টেনে হিঁচড়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সরিষাবাড়ী থানার এসআই আলতাব হোসেন, সাইফুল ইসলাম, ওয়াজেদ আলী ও মুন্তাজকে সাময়িক বরখাস্ত এবং কনস্টেবল মোজাম্মেল হক ও সাথী আক্তারকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে পাঠিয়েছেন পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ। এ ঘটনায় সরিষাবাড়ীর ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন পুলিশ সুপার।
জামালপুরের পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে মারামারির যে ঘটনা ঘটে, তাতে দুই পক্ষেরই দুটি মামলা হয়। দুই পক্ষেরই কিছু লোক আহত হয় এবং তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিল। এ অবস্থায় সরিষাবাড়ী থানা পুলিশের ৪ জন এসআই এবং ২ জন কনস্টেবল যেভাবে আসামি গ্রেফতার করে নিয়ে গেছেন তা কোনো ভাবেই আইন সম্মত ও বিধি সম্মত হয়নি। এভাবে আসামি গ্রেফতার করা যায় না। আমরা এই ঘটনা জানার সাথে সাথে এবং প্রচার মাধ্যমে দেখে ৪ জন সাব ইন্সপেক্টরকে বরখাস্ত করেছি এবং ২ জন কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করেছি। সেই সাথে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ঘটনার সাথে যদি ওসির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধেও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টারে পত্র প্রেরণ করা হবে।