বাড়িবাংলাদেশেঢাকা বিভাগরঘুনাথপুর পালপাড়ার মৃৎশিল্পীদের দেখার কেউ নেই

রঘুনাথপুর পালপাড়ার মৃৎশিল্পীদের দেখার কেউ নেই

অরবিন্দ রায়, স্টাফ রিপোর্টারঃ

রঘুনাথপুর পাল পাড়ার মৃৎশিল্পীদের দেখার কেউ নেই। নতুন সরকার আসে সরকার পরিবর্তন হয় কিন্তু মৃৎশিল্পীদের ভাগ্যে কোন পরিবর্তন হয় না। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের জন্য অবহেলিত মৃৎশিল্পীদের কদর বাড়ে। নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে মৃৎশিল্পীরা আগে মতই থেকে যায়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় পাল পাড়ার মৃৎশিল্পীদের করুন দূশ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশে মৃৎশিল্পীদের উন্নয়নে কোন ছোঁয়া লাগেনি।

তবুও মনের কষ্ট মনে নিয়ে বাংলা নববর্ষ কে রাঙাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মৃৎশিল্পীরা। প্রযুক্তি, রুচি, আধুনিকতা ও বাজার বিশ্বায়নের ফলে বাঙালির সংস্কৃতির অংশ মৃৎশিল্প এখন বিলিন হওয়ার পথে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে পাওয়া এই পেশা অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন ।

বিভিন্ন এলাকায় যারা এখনো এই পেশায় টিকে রয়েছেন সব মিলিয়ে ভালো নেই তারা। তবুও শখ, বংশগত ঐতিহ্য বা জীবিকার তাগিদে এই ক্ষুদ্র শিল্পকে ধরে রেখেছেন তারা।

বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষকে রাঙাতে মাটির পণ্য প্রস্তত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। তবে বৈশাখে রোজা আর সামনে ঈদ থাকায় মাটির জিনিসপত্র কতটুকু কাটবে তা নিয়েও মৃৎশিল্পীরা বেশ শংকায় রয়েছেন।

বাংলা নববর্ষে রঘুনাথপুর পাল পাড়া গিয়ে দেখা যায় , বিভিন্ন স্থানের বিক্রির জন্য মৃৎশিল্পীরা তাদের নিজের হাতে নিপুণ কারুকাজে মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন শিশুদের জন্য রকমারি পুতুল, ফুলদানি, রকমারি ফল, হাড়ি, কড়াই, ব্যাংক, বাসন, চায়ের কাপ থালা, বাটি, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, টিয়া, ময়না, ময়ূর, মোরগ, খরগোশ, হাঁস, কলস, ঘটি, মুড়িভাজার ঝাঞ্জুর, চুলা ও ফুলের টবসহ বিভিন্ন মাটির জিনিসপত্র।

মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে শতাধিক পরিবার। তারা বিভিন্ন উৎসবে মাটির তৈরির জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

রঘুনাথপুর পাল পাড়া ভীম পাল, গোপাল পাল সহ বিভিন্ন মৃৎশিল্পীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পারিবারিকভাবেই তারা পৈত্রিক পেশা হিসেবে এই মাটির কাজ ধরে রেখেছে। পণ্যের রং ও নকশার কাজ নিজেরাই করে থাকে। খেলনা তৈরির জন্য মাঠ থেকে মাটি আনা, মাটি নরম করা, সাঁচ বসানো, চুলায় পোড়ানো, রোদে শুকানো, রং করাসহ প্রায় সব কাজই এখানকার নারীরা করেন।

বোয়ালী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড শিলাবৃষ্টিতে ব্যপক ক্ষতি গ্রস্হ হয়েছে। টিনের চাল গুলো ছিদ্র হয়ে গেছে। পাল পাড়া বসবাস করে ৩ থেকে ৪ শত মানুষ বসবাস করে। সরকারি অনুদান পেয়েছে মাএ ১ জন।

বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন খান জানান, রঘুনাথপুর পালপাড়া মৃৎশিল্পীদের উন্নয়নে বিশেষ সহযোগিতার করার জন্য মাননীয় মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মহোদয়দের সাথে যোগাযোগ করে মৃৎশিল্পীদের জন্য বিশেষ অনুদানের ব্যবস্হা করছি। ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতি গ্রস্হদের জন্য আমরা সরকারি অনুদান পেয়েছি। সরকারি অনুদান সুষ্ঠু ভাবে বিতরণের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বার, মহিলা মেম্বার, আওয়ামীলীগ নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করে দিয়েছি। পালপাড়া মৃৎশিল্পীরা কয়জন সরকারি অনুদান পেয়েছেন তা সংশ্লিষ্ট মেম্বার ও কমিটি ভালো বলতে পারবেন।

ইউপির সাবেক সদস্য আমজাদ হোসেন জানান,৬ নং ওয়ার্ডে ঝড়ে ক্ষতি গ্রস্হ হয়েছে কমপক্ষে ২৫০ পরিবার।অনুদান পেয়েছেন ৫ জন। পালপাড়া মৃৎশিল্পীরা অনুদান পেয়েছে ১ জন।

ইউপির বর্তমান মেম্বার বাহার উদ্দিন জানান, আমি শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতি গ্রস্হদের সহযোগিতার জন্য ১০ জন ভাগে পেয়েছিলাম। পাল পাড়া সরকারি অনুদান দিয়েছি ১ জন কে।

বোয়ালী ইউপির ছাএলীগ ও যুবলীগের একাধিক বার দায়িত্ব প্রাপ্ত সভাপতি এস এম আক্কেল আলী জানান, বোয়ালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে প্রকত ও ত্যাগী আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা ঘরে বসে আছে। সু সময়ের নেতা কর্মীরা এখন আওয়ামীগীগে ডুকে পড়েছে। তাই তো পাল পাড়ার দরিদ্র জনগন নিয়ে মাথা ঘামানো চিন্তা কারো নাই।

নজরুল ইসলাম বাবুল, রঘুনাথপুর সঃ প্রাঃ বিঃ একাধিক সভাপতি ছিলেন, এক সময় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পাল পাড়া মৃৎশিল্পীরা সব সময় অবহেলিত হয়ে পড়ে রয়েছে। কোন সরকারি অনুদান এলে চেয়ারম্যানের স্পেশাল লোক, মেম্বারের স্পেশাল লোক, মহিলা মেম্বারের স্পেশাল লোকদের দেয়া হয়। ফলে সরকারি অনুদান প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্হরা পাচ্ছেন না।

যে পর্যন্ত স্পেশাল লোকদের অনুদান দেয়া বন্ধ না হবে। ততদিন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্হরা বিভিন্ন প্রকার অনুদান থেকে বাদ পড়েই থাকবেন ।

আসছে পহেলা বৈশাখ। বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে মৃৎশিল্পীরা খেলনাসহ মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেছেন। রঙের কাজও প্রায় শেষ করা হয়েছে। মেলায় বিক্রির জন্য পাইকাররা এসে এসব খেলনা কিনে নিয়ে যায়।

বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের একসময় বিপুল কদর থাকলেও বছরের অন্যান্য দিনে তারা বেশ দূর অবস্থায় থাকেন। শুধু মেলা এলেই কেবল কর্মমুখর হয়ে ওঠে চিরচেনা ঐতিহ্যময় প্রাচীন এই মৃৎ শিল্পীসমৃদ্ধ পাল পাড়া গ্রাম। পহেলা বৈশাখের আগে খানিকটা সময়ের জন্য হলেও মৃৎশিল্প তার হৃতগৌরব ফিরে পায় এবং মৃৎশিল্পীরাও ব্যস্ত হয়ে ওঠেন নানা সামগ্রী তৈরিতে। কিন্তু বছরের অন্যান্য দিন গুলো মানবেতর জীবন-যাপন করেন এই মৃৎশিল্পীরা।

বেশি মূল্যে এসব জিনিস কিনতে আগ্রহ দেখান না ক্রেতারা। এতে আমাদের লোকসান গুনতে হয়। বাংলা নববর্ষ বরণে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের বিপুল কদর থাকলেও বছরের অন্যান্য দিনে তারা বেশ দূর অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করেন।

রঘুনাথপুর পাল পাড়ার ভীম পাল, গোপাল পাল জানান, পারিবারিকভাবেই তারা পৈত্রিক পেশা হিসেবে এই মাটির কাজ ধরে রেখেছে। পণ্যের রং ও নকশার কাজ নিজেরাই করে থাকে। এখন আর আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা মাটির কাজ শিখতে চায় না। তারা অনেকেই অন্য পেশায় ঝুকছেন। আবার অনেকেই অন্য কোনো কাজ না জানার কারণে এই পেশায় লেগে আছেন। বর্তমানে আমাদের অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। এরপরও কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেন না। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা পেলে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলেও মনে করেন তারা।

অনগ্রসর মৃৎশিল্পী জনগোষ্ঠীদের সাহায্যের জন্য আজ পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেন নি। । মৃৎশিল্পীরা হারিয়ে যাওয়া শিল্পকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তাদের মাধ্যমেই অতিত ঐতিহ্য আজও টিকে রয়েছে। মৃৎশিল্পীদের উন্নয়নে সরকার ও সমাজের ধনী ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহবান জানান সুধী সমাজ।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments