বাড়িধর্মঈদুল ফিতর ::শালীনতা আর সৌন্দর্য্যে ভরা বিশ্বসেরা উৎসব।

ঈদুল ফিতর ::শালীনতা আর সৌন্দর্য্যে ভরা বিশ্বসেরা উৎসব।

 -মোঃ আনিছুর রহমান

বিশ্ব জাহানে ছড়িয়ে থাকা মানব জাতি ও সম্প্রদায়ের নিজ নিজ উৎসব রয়েছে। এছাড়া সকল জাতির যৌথ ও সন্মিলিত বিশ্বব্যপি আলোড়ন তোলা কিছু উৎসব ও আছে। যেভাবেই থাকুক না কেন ঈদুল ফিতর সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্য ধারণ করা পৃথিবীর সকল প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত সর্বাধিক গণ সম্পৃক্ত উৎসব এটা প্রমাণিত তা অস্বীকার করার উপায় কারো নেই। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা – রাতের শেষ প্রহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ, পানি বা পানীয় পান ও নারী পুরুষের দৈহিক মিলন থেকে বিরত থাকাই যেখানে বাধ্যতামূলক ছিল শওয়াল মাসের চাঁদ দেখার পর ঈদুল ফিতরের দিন সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা নিয়ে মুসলিমদের জন্য হাজির হয়। এখানে উল্লেখিত কাজ থেকে বিরত থাকা অর্থাৎ রোজা রাখাকে সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

সংগত কারণে দিবসটির নাম ঈদুল ফিতর বা রোজা ভঙ্গের উৎসবের দিন । কি যে আনন্দ, উল্লাস আর সৌহাদ্য সম্প্রীতির মহা উৎসবে ভরে যায় মুসলিম বিশ্ব সাথে সাথে অন্য ধর্মের মানুষও এর কল্যাণে সম্পৃক্ত হয়ে যায় দূর দৃষ্টির চক্ষু খুললেই তা দেখতে পাবেন সকলে। ঈদের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী উৎপাদন, বিপণন, আমদানি, রফতানিতে যুক্ত হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ। হাত বদল হয় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার, টাকা, রুপি। এতে শুধু মুসলিম জাতি ই নয় সকল ধর্মের মানুষও উপকৃত হয়। ইসলাম যে বৈরাগ্যবাদি, আনন্দ কোলাহল মুক্ত, নিরস জীবন বিধান নয় তার অকাট্য প্রমাণ বহন করে এই ঈদ। রমজানের রোজার সমাপ্তি সাথে সাথে ঈদুল ফিতরের দিন রোজা ভঙ্গের আদেশ – আরেকটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে ফুটে ওঠে যে মুসলিমদের জীবন একমাত্র, শুধুমাত্র আল্লাহর হুকুম ফলো করবে। অন্য কারো নয়।

একদিন আগে দিনের বেলা যা, যে কাজ গুলো থেকে বিরত থাকার আদেশ ছিল ঈদের দিনে একই কাজ থেকে বিরত থাকাকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যে রোজা ছিল সর্বাধিক পুণ্যের কাজ সে রোজা ঈদের দিনে নিষিদ্ধ, মহা অপরাধ, গুনাহের কাজ – শরিয়ত প্রবর্তকের পক্ষ থেকে এই ফরমান জারি করা হয়েছে। ঈদুল ফিতর এর সৌন্দর্য ও তাৎপর্য মন্ডিত পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রকাশ পেয়েছে আমাদের প্রিয় কবি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর কালজয়ী সংগিতে।”

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ ‘ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাকিদ।।

তোর সোনা দানা, বালা খানা সব রাহে লিল্লাহি

দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমে আজ ভাঙ্গাইতে নিঁদ।।

তুই পড়বি রে আজ নামাজ রে মন সেই সে ঈদ গাহে ,যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।আজ ভুলে যা তোর দোস্ত দুশমন হাত মিলাও হাতে, তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ। অনুরূপ শত শত ভাষার বিশ্ববরেণ্য কবিদের কবিতা, গানে – সাহিত্যিক লেখক গণের কলমে ফুটে উঠেছে ঈদুল ফিতর এর সৌন্দর্য ও তাৎপর্য।

ঈদের আনন্দে ধনী দরিদ্র সবাই যাতে শরীক হতে পারে তৎজন্য মুসলিমদের উপর ছাদকাতুল ফিতর বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে আদেশ দিতেন যে আমরা যেন ছদকায়ে ফিতর আদায় করে তারপর নামাজের জন্য ঈদ গাহ ময়দানে আসি। ছাদকাতুল ফিতর হলো মুসলিম গণ রমজান মাসের শেষ দিকে নিজ ও পরিবারের খানা ভুক্ত সকল সদস্যের পক্ষে গম, জব, আটা, কিসমিস, খেজুর নির্ধারিত পরিমাণ অথবা সমমূল্য দরিদ্র মানুষকে প্রদান করবে। রমজান মাসে সম্পদশালী ব্যক্তিগণ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম বিধান পালনে সম্পদের যাকাত আদায় করে থাকে।আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে নামাজ আদায়ের হুকুম জারির সাথে সাথে যাকাতের আদেশ দিয়েছেন। ” আকিমুচ্ছালাতা ওয়া আতুজ্জাকাতা ওয়ারকাউ মায়ার রাকিয়িন।অর্থ তোমরা নামাজ কায়েম করো যাকাত আদায় করো এবং রুকু কারি দের সাথে রুকু করো।” মুসলিমদের অর্থ সম্পদ বিস্তৃত হয়ে সকলে যাতে স্বাচ্ছন্দ্য ভাবে ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে সে জন্য মূলতঃ এই অর্থ ব্যবস্থাপনার নির্দেশ। যদিও বছরে একবার যে কোনো মাসে সম্পদের হিসাব করে যাকাত আদায় করা যায়।রমজানে প্রতিটি ভালো কাজের মর্যাদা মরতবা অন্য মাসের চেয়ে অধিক পূন্যময় এ আশায় আবহমান কাল থেকে রমজান মাসে যাকাত আদায় করে থাকেন যাকাত দাতা মুসলিম গণ।

ইসলামে আনন্দ বিনোদনে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই যেমনটা ইসলামের অতিভক্ত দাবিদারদের কেউ মনে করেন। আবার আনন্দ বিনোদনের নামে অশ্লীলতা বেহায়াপনার কোনো সুযোগ নেই। আনন্দ উল্লাস করতে গিয়ে মাদক দ্রব্য সেবন, জুয়া লটারিতে মাতোয়ারা হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ পাক বলেন ” ” ইন্নামাল খামরো ওয়াল মাইসিরু ওয়াল আযলামু ওয়াল আযসামু রিজসুম মিন আমালিশ শয়তানি ফাজ তানীবুহু ।অর্থ প্রকৃত অর্থে মদ্যপান জুয়া লটারি এগুলো অপবিত্র মন্দ শয়তানের কাজ। তোমরা এসব থেকে অনেক দূরে থাক। ”

নারী পুরুষের অবাধ মিলা মেশায় অনেকে আনন্দ বিনোদন তালাশ করেন যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় এর নিকটবর্তী না হতে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে।’ ‘লা তাকরাবুজ্জিনা ইন্নাহু কানা ফাহিশাতাঁও ওয়া সায়া সাবিলা। অর্থ- তোমরা ব্যভিচার এর ধারে কাছে যেও না^ ইহা অশ্লীলতা ও মন্দ পথ ”

আনন্দ বিনোদন শব্দ দুটিকে সঙ্গায়িত করতে গিয়ে মনোবিজ্ঞান ও প্রাণীবিজ্ঞানের কর্ণধার গণ এখন পর্যন্ত সঠিক পূর্ণাঙ্গ ও বস্তুনিষ্ঠ সংগা ও বিবরণ উপস্থিত করতে পারেন নি। কোনো মানুষ নিরিবিলি জীবনে আনন্দ খোঁজেন – অনেকে ভ্রমণ কোলাহল পছন্দ করেন, কোনো ব্যক্তি মানব সেবার কাজে তৃপ্তি অর্জন করেন- কোনো মানুষ অন্যের ক্ষতি করে বেড়ায় এতে সে আনন্দ লাভ করে, কেউ সুকুমার বৃত্তির চর্চা করে- কেউ অশ্লীলতায় গা ভাসিয়ে দিয়ে আনন্দ উল্লাস করে বেড়ায়। কেউ অর্থের পাহাড় গড়ে তোলা পছন্দ করে- কেউ সততা বজায় রেখে সংযত জীবন যাপনের মধ্যেই আনন্দ খোঁজেন। বহু বিপথগামী মানুষ আনন্দ বিনোদনে গা ভাসিয়ে দিতে দিতে পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হয়। কেউ সব ছেড়ে সন্যাস ও বৈরাগ্য জীবনের দিকে এগিয়ে যায়। ইসলাম দিয়েছে সব ক্ষেত্রে ভারসাম্য পূর্ণ জীবন পদ্ধতি। মানুষের জীবনের এই জায়গাটা কিভাবে আদর্শিক , শালীনতা পূর্ণ বিজ্ঞান সম্মত, বাস্তব সন্মত হবে তার মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে ইসলাম ।এই সীমা যে বা যারা অতিক্রম করবে সে /তারা নিজেরাই মানবতার গন্ডি থেকে দূরে সরে যাবে। চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানব জীবনে আনন্দ বিনোদনের সঠিক পদ্ধতি ও মাত্রা কি হওয়া উচিত পবিত্র ঈদের আনন্দ বিনোদন সে জায়গায় নির্দেশক খুটি হিসেবে মানব জাতির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

লেখক মোঃ আনিছুর রহমান

অধ্যক্ষ

কড়িয়া ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসাপাঁচবিবি, জয়পুরহাট ।

 

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments