বাড়িবাংলাদেশেঢাকা বিভাগপাঁচ "কাজী" ও দুই "পাজী'র"ষড়যন্ত্রে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুকুর ধংসের দ্বারপ্রান্তে!

পাঁচ “কাজী” ও দুই “পাজী’র”ষড়যন্ত্রে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুকুর ধংসের দ্বারপ্রান্তে!

মোঃ কাউছার মিয়া,মনোহরদী(নরসিংদী)নিজস্ব প্রতিনিধি।

মনোহরদী উপজেলার গোতাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন পুকুরটি বিগত ২০০ বছরের ও অধিক সময়ের ঐতিহ্য বহন করে।পুকুর টি প্রায় চার বিঘা জমির উপড় বিস্তৃত।৫-৬ টি গ্রামের মানুষ,গবাদি পশু সহ বহু পথচারী পুকুরটি’র উপর নির্ভর ছিল।পুকুরটি ব্যবহারে ছিল না হিন্দু-মুসলিমের কোন ভেদাভেদ,ছিল না উচু-নিচু’র জাতিগত কোন ভেদাভেদ।

জনশ্রুতি অনুযায়ী পুকুরটিতে মানুষের ওযু-গোসল সহ চৈত্র মাসের খরা’র সময় সুপেয় পানির ব্যবস্থা হত।পুকুরের পূর্ব পাশের পাড় টি ছিল এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের ও দক্ষিন পাশের পাড় টি ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবহারের জন্য।পশ্চিম ও উত্তর পাশের পাড় দুটো ছিল এলাকার ছেলেপেলেদের খেলাধুলা ও গোছলের জন্য।স্থানীয় মসজিদের মুসুল্লিরা পুকুরটি’র পূর্ব পাড়ে ওজু-গোছল করতেন,স্থানীয় হিন্দুরা দক্ষিন পাড়ে তাদের পূজা অর্চনা’র জন্য পবিত্র হতেন,পশ্চিম ও উত্তরের পাড়ে ছেলেপেলেরা প্রায় সারাদিনই খেলাধুলা ও ডোবা-ডুবিতে ব্যস্ত থাকত,পথচারী ও কৃষক’রা তাদের ক্লান্তি দূর করত পুকুর পাড়ে বসে,পুকুরের আশেপাশের জমিতে কৃষি কাজে ব্যবহার হত এই পুকুরের পানি,মাঠে চড়ানো গবাদি পশু’র পানি খাওয়া ও গোছেলর কাজে ব্যবহার হত এই পুকুরের পানি।পুকুর’টির পূর্ব পাড়ের বট গাছের নিচে এক সময় বাজার জমেছিল।সেখানে আয়োজন হত পল্লী গানের,আয়োজন হত জাড়ি-শাড়ি ও বাউল গানের।পুকুর পাড়ের সেই বাজারে আয়োজন করা হত পুঁথি পাঠের।সর্বপুরি এই পুকুর ও পুকুর পাড় গুলো ছিল স্থানীয়দের দৈনন্দিন জীবন-জিবীকা ও বিনোদনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বিগত ২০০ বছরে বিভিন্ন সময়ে পুকরটি’র মালিকানার হাত বদল হলেও ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪৩ বছর যাবৎ পুকুর-টির মালিকানায় ছিলেন ১১ জন।৪৩ বছরের মালিকানা’র মালিকগন’রা হলেন,মরহুম খবির উদ্দিন ভূইয়া,মরহুম নুরুল হক ভূইয়া,মরহুমা মোসাম্মত আকলিমা বেগম,মরহুমা আমিন চাঁন বানু,মোঃ বাবুল মিয়া,আবুল বাশার,মোঃ আব্দুল মালেক ভূইয়া,মরহুম বেনজির আহম্মেদ ভূইয়া,মরহুম মজিবুর রহমান ভূইয়া,মরহুম মোঃ মনিরুজ্জামান ভূইয়া এবং মোঃ আশিকুজ্জামান(আপেল) ভূইয়া।

২০১৩ সালের পরবর্তী সময়ে চুলা গ্রামের “কাজী বাড়ীর” কাজী আজিজুল হক ওরুফে কাজল মেম্বার গং মোঃ মনিরুজ্জামান ভূইয়া’র পুকুরের অংশ কেনার পর থেকেই শুরু হয় তাদের(কাজী বাড়ির) ষড়যন্ত্র।আর এই ষড়যন্ত্রের গেড়াকলে পড়ে ২০০ বছরের ও পুরনো ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি আজ ধংসের দ্বারপ্রান্তে।কারণ,পুকুরে এক অংশের মালিকানা থাকা স্বত্বেও “কাজী বাড়ীর” মানুষেরা পুকুরের অন্যান্য অংশীদারদের অংশ/মালিকানা জবরদখল করা সহ জনসাধারণের পুকুরে নামা,পুকুরের পানি ব্যবহার করা,পুকুর পাড়ে নির্বিঘ্নে চলাফেরা ও সাময়ীক ব্যবহারে বাধা’র সৃষ্টি করে পুরো পুকুর গ্রাস করার নেশায় মত্ব।পুকুরের মালিকানা অনুযায়ী সঠিক অংশ নেওয়ার কথা বললেই তারা নানা রকম মিথ্যা মামলা,হুমকি-ধমকি ও তাদের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীদের দিয়ে নানা রকম হামলার মাধ্যমে পুকুরের অংশীদার ও সাধারন মানুষকে হেনস্তা’র মাধ্যমে জন-মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।তাদের এসব অপকর্মে পুকুর’টি তার সুন্দর্য হারিয়ে আজ একটি পরিত্যাক্ত ডোবায় পরিনত।

এসব বিষয়ে পুকুরের বর্তমান অংশীদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়,আমাদের পূর্ব-পুরুষ এবং আমাদের মত অনুযায়ী পুকুরটি’র কাগজ-পত্রের মালিকানায় আমরা থাকলেও পুকুরটি সর্বদা সর্ব-সাধারণের ব্যবহারের জন্য ছিল উন্মুক্ত।পুকুরটি আমাদের গর্ব,ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক।কিন্তুু আজ একটি পক্ষের ষড়যন্ত্রের কবলে পরে পুকুরটি ধংসের সম্মুখীন।তাদের কাছে আমরা এক-প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছি।তাদের কারণে আজ আমরা আমাদের ঐতিহ্য হারাতে বসেছি।এই পুকুরের পাড়গুলোতে প্রায় ৩০০ এর অধিক তাল গাছ ও প্রায় ২০০ টি অন্যান্য ফল এবং কাঠের গাছ ছিল পর্যায়ক্রমে তারা প্রায় সব গুলো কেটে নিয়ে যায় ও পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে যায়।আর পুকুর’টি কে সাধারণ মানুষের ব্যবহারে বাধা গ্রস্থ করে পুকুরের সুন্দর্য নষ্ট করে পুকুর টিকে একটি পরিত্যাক্ত পুকুরে পরিনত করেছে।তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই তারা নানা রকম মিথ্যা মামলা দেয় এবং আরও মামলা দেওয়ার ভয় দেখায়।তাদের পালিত সন্ত্রাসী,মাদকসেবী ও কিশোর-গ্যাং দের দিয়ে নানা রকম হুমকি-ধমকি ও হামলা দেয়।পুকুর ও আমাদের ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা তাদের এসব কার্যক্রম ও অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রসাশানের সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে স্থানীয়’রা জানান,পুকুর’টির মালিকানা বিবেচনা করে আমরা কখনোই পুকুরটি ব্যবহার করি নি।আমাদের প্রয়োজনে আমরা সবসময় বিনা বাধায় পুকুরটি ব্যবহার করেছি।।প্রজন্মের পর প্রজন্মের সাতার শেখা,খেলাধুলা,কৃষি কাজ সহ নানান কাজে আমরা পুকুরটি ব্যবহার করেছি।পুকুরের সুন্দর্য কে করেছি উপভোগ পূর্ব হতেই পুকুরটি ছিল আমাদের জীবন-জিবিকা’র একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং পুকুরটি ছিল আমাদের এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক।যদিও এখন পুকুরের খুব একটা প্রয়োজন পরে না তারপরও আমরা চাই পুকুরটি সংস্কার হোক।পুকুর টি ফিরে পাক তার পূর্বের সুন্দর্য।

এ ব্যাপারে “কাজী বাড়ীর” কাজী আজিজুল হক ওরুফে কাজল মেম্বার তার অন্যান্য ভাইদের সাথে ও তার ভাগিনা কাজী মেজবাহ উদ্দিন ওরুফে রহমত এর সাথে যোগাযোগ করলে তারা এ ব্যাপারে কোন কথা বলেন নি।উল্টো নানা রকম অপমানজনক কথা বলেন।

 

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments