বাড়িবাংলাদেশেচট্টগ্রাম বিভাগবন্ধের পথে বঙ্গ বন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়।

বন্ধের পথে বঙ্গ বন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়।

বিশেষ প্রতিনিধি,, লামা (বান্দরবান)।

দীর্ঘ ২৭ বছরের পুরনো বিদ্যালয়টি এখন অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু -তাই প্রায় শিক্ষকরাও আসেননা বিদ্যালয়ে। এলাকার অভিভাবকদের অসচেতনতা ও পরিচালনা কমিটির তদারকির অভাব কে দ্বায়ী করছে এলাকার জনসাধারন।

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। একটি শিক্ষিত জাতিই পারে দেশ,সমাজ বা পরিবারকে উন্নতির শিখরে পৌছে দিতে।বর্তমান সরকারের স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মান করতে হলে শিক্ষার আলো প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌছানোর বিকল্প নাই। সেই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে পুরো একটি অঞ্চল। যা ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে।

বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার আজিজ নগর ইউনিয়নে বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আছে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, নাম বঙ্গ বন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়।

যে মহান ব্যক্তির নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এদেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি ছাত্র জনতা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে নিজেদের জীবন বাজি রেখে মুক্তি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে, ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিলো, সম্ভ্রম হারিয়ে ছিলো প্রায় দু’লক্ষ মা বোন, পঙ্গুত বরণ করেছিলো বহু মুক্তি যোদ্ধা। দীর্ঘ নয় মাস রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধ করে, এক সাগর রত্তের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছিলো আমাদের স্বাধীনতা, জন্ম হয়ে ছিলো স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশের, বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্রের স্থান করে নিয়েছিলো। সৃষ্টি হয়ে ছিলো লাল সবুজের পতাকা, বিশ্ব দরবারে বাঙালী জাতি হিসেবে মাথা উচু করে দাড়িয়ে ছিলাম আমরা। আমাদের সৃষ্টি হয়ে ছিলো নিজস্ব জাতি সত্তা। নিজস্ব পরিচয়, আমরা বাঙালী  বীরের জাতি।

সেই মহান নেতা বাঙালী জাতি পিতার নামের উচ্চ বিদ্যালয়টি আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।

বিদ্যালয়টি ১৯৯৮ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে প্রায় ২৭ বছরে পদার্পণ করেছে। দূর্ভাগ্য বসত গত দু’তিন বছর আগেও যে বিদ্যালয়ে ৪০০-৫০০ জন ছাত্র ছাত্রী ছিলো সেখানে এখন বিদ্যালয়ের হিসাব মতে ২৬০ জন ছাত্র ছাত্রী মাত্র, যা সরোজমিনে দেখা যায়। যে বিদ্যালয়ে পাশের হার ছিলো ৮০%-৮৫%, বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৫০%-৬০%।

শিক্ষকরা দীর্ঘ দিন বেতন না পাওয়ার কারণে অনেক শিক্ষক চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। প্রধান শিক্ষক নিজেও দুই তিন মাসে দুই এক বার আসেন বিদ্যালয়ে।

এদিকে সচেতন অভিভাবকেরা তাদের সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, এমনকি এলাকার বাহিরে সরকারি /বেসরকারি বিদ্যালয়ে।

বিদ্যালয় সম্পর্কে এলাকার সচেতন মহলের অনেকেই বলেন, এলাকার কিছু উদ্যোমী সাহসী সন্তানেরা এই বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন বহু আগে। এলাকায় এই বিদ্যালয়টি অনেক পুরাতন। হারিয়ে গেলে আর হবে বলে মনে হয়না।

তাই বিদ্যালয়টিকে বাঁচিয়ে রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি আমরা।

স্থানীয় কয়েক জন জানান, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অনেকেই নির্ধারিত সময়ে বেতন পরিশোধ না করার কারণে অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টি। পাশা পাশি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির তদারকির অভাব রয়েছে। এদিকে প্রধান শিক্ষক পূর্বে যথা সময়ে বিদ্যালয়ে আসলেও এখন আসেন দুই তিন মাসে দুই এক বার।

চাকরি ছেড়ে যাওয়া এক জন সহকারী শিক্ষক জানান, ঠিক মত বেতন পাইনা,কিভাবে চলব। পেট আমারও আছে,পরিবারেরও আছে,এ অল্প বেতনে চলতে হিমশিম খেতে হতো,তার মধ্যে বছর খানেক হলো বেতনও পাইনা।তাই ছেড়ে দিছি। দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির বাজারে, এখানে থেকে গেলে না খেয়ে মরা ছাড়া কোনো পথ থাকতো না।

বঙ্গ বন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকতার হোসেন বলেন, আমার সব অপরাধ আমি স্বীকার করছি কিন্তু আমারও পেট আছে,পরিবার আছে, তাদের ভরণ পোষণের জন্য আমাকেও কিছু একটা করতে হয়। তাই আমিও আর পারিনা। তবে গত কয়েক দিন ধরে আমি আবার নিয়মিত হচ্ছি।ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও এলাকার মানুষ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে যাব উনারা যদি একটু সহযোগিতা করেন তাহলে ইনশাআল্লাহ বিদ্যালয়টি দাঁড়িয়ে যাবে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজিজ নগর ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে,একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।কিভাবে বিদ্যালয়টি দাড় করানো যায় তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব। এই মাসে হয়তো ইউএনও মহোদয় সহ, বিদ্যালয়টি সরোজমিনে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান,বিদ্যালয়টি দেখার জন্য আসব আর আপনারা স্থানীয় সচেতন লোকদের থেকেও ফান্ড কালেকশন করতে পারলে উপকার হবে।স্থানীয় দীর্ঘ দিনের একটি বিদ্যালয় এমন করেতো আর হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না।সহযোগিতা থাকবে,তাদের এমপিও করার জন্য আবেদন দিতে বলেন।

 

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments