
সিলেটে পর্যটক হয়রানি থামছে না। জাফলংয়ের পর এবার চা বাগান বেড়াতে গিয়ে হয়রানি ও হামলার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। হয়রানির ঘটনার পর আশঙ্কাজনক হারে কমেছে জাফলংয়ে পর্যটকের সংখ্যা। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে সিলেটের পর্যটন খাতে ধস নামার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) জাফলংয়ে প্রবেশ টিকিট কাটা নিয়ে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা একটি পরিবারের ওপর হামলা চালায় উপজেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবীরা। স্বেচ্ছাসেবী নামক একদল প্রকাশ্যে ওই পরিবারের পুরুষ ও নারী সদস্যদের রড ও পাইপ নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্ত দুইজনসহ ৫ জনকে আটক করে। হামলার ঘটনার পর এক সপ্তাহের জন্য জাফলংয়ে প্রবেশ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের অনুমতিক্রমে উপজেলা প্রশাসনে কর্তৃক আদায়কৃত এই প্রবেশ ফি সম্পূর্ণ বেআইনি উল্লেখ করে টিকিট প্রথা বাতিলের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার হামলার ঘটনার পর আশঙ্কাজনক হারে জাফলংয়ে পর্যটকদের সংখ্যা কমেছে। সিলেট বেড়াতে আসা পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রথম পছন্দ জাফলং হলেও এখন তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এই পর্যটন কেন্দ্র থেকে। বিশেষ করে যারা পরিবার নিয়ে সিলেট বেড়াতে এসেছেন নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তারা জাফলংমুখী হচ্ছেন না। ছুটির দিন হলেও গতকাল শুক্রবার ও শনিবার জাফলংয়ে খুব বেশি পর্যটক সমাগম হয়নি। বৃহস্পতিবার যেখানে একদিনে লাখো পর্যটকের ঢল নেমেছিল সেখানে গেল দু’দিনে ২০-৩০ হাজারের বেশি পর্যটক যাননি।
এদিকে, জাফলংয়ের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় হলেও সিলেটে থামেনি পর্যটক হয়রানি। সিলেট নগরীর পার্শ্ববর্তী মালনীছড়া ও লাক্কাতুড়া চা বাগানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা প্রতিদিনই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বাগানের ভেতর প্রবেশে চাঁদা দাবি করছেন শ্রমিকরা। পর্যটকদের কাছে জনপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করেন শ্রমিকরা। চাঁদা না দিলে ঢুকতে দেয়া হয় না পর্যটকদের। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে পর্যটকরা দুর্ব্যবহার ও হামলার শিকার হচ্ছেন। ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন সিলেট নগরীর পার্শ্ববর্তী চা বাগানগুলোতে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক সমাগম হয়। বিশেষ করে বিকেলে পর্যটকদের ঢল নামে চা বাগানগুলোতে। কিন্তু বাগানে প্রবেশ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই পর্যটকদের সাথে চা শ্রমিকদের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।
শনিবার বিকেলে মালনীছড়া বাগানে বেড়াতে যান পর্যটকরা। এ সময় বাগানে প্রবেশের জন্য চাঁদা দাবি করেন শ্রমিকরা। দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান কয়েকজন পর্যটক। ফলে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। পরে অন্যান্য পর্যটক ও কয়েকজন চা শ্রমিকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ প্রসঙ্গে পর্যটন বিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডি ইনবাউন্ড) পরিচালক জহিরুল কবীর চৌধুরী শিরু বলেন, দেশের পর্যটন স্পটগুলোর পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সেবার মানের উপর দেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অনেকাংশে নির্ভরশীল। সিলেটে এবার ঈদের ছুটিতে যেসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে তাতে এখানকার পর্যটন খাতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখনই এর প্রতিকার করা না গেলে আমাদেরকে বড় মাশুল গুনতে হবে।