
বাংলাদেশের একমাত্র আগাম শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ইছামতী চা বাগানের মঙ্গলচন্ডি মন্দিরে। প্রতিবছর দুর্গা পূজার ছয়দিন আগ থেকেই এখানে আগাম দুর্গাপূজা শুরু হয়। প্রতিদিন একটি করে দেবী দুর্গার নয়টি রুপের পূজা করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে দেবী দুর্গার ৯টি রুপের মধ্যে (দ্বিতীয় রুপ) ব্রহ্মচারিণী রুপে পূজা করা হয়। এর আগে গত সোমবার সকালে দেবী দুর্গার (প্রথম রুপ) শৈলপুত্রী রুপে পূজা করা হয়েছিল।
এভাবে পৌরানিক নিয়ম অনুযায়ী আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ব্রহ্মচারিনী, চন্দ্রঘন্টা, কুষ্মান্ডা, স্কন্ধমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী রূপের পূজা করা হবে। ৫ অক্টোবর হবে দেবীর বিসর্জন।
নবদূর্গা বলতে আভিধানিক ভাবে দেবী পার্বতীর দূর্গার রূপের ৯টি রূপকে বোঝানো হয়৷ হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এগুলো দেবী পার্বতীর ৯টি ভিন্ন রূপ।
দেবী দুর্গার এই ৯টি রুপ হল যথাক্রমে শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী৷ প্রতি শরৎকালে নবরাত্রির ৯ দিনে প্রতিদিন দেবী পার্বতীর দূর্গা রূপের এই নয় রূপের এক একজনকে পূজো করা হয়৷ আসলে এই ৯টি রূপের সগুন বর্তমান দেবী পার্বতীর দূর্গার রূপ। যে রূপে দেবী পার্বতী বধ করেন দুর্গম অসুরকে।
পূজার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার মঙ্গলচন্ডি মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, ‘সারাদেশের হাজার হাজার পূূজা মন্ডপে কারিগররা যেখানে প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সেখানে এই জায়গায় ঢাকের তালে মোহিত হচ্ছে পূজা মন্ডপ। নিজের ও দেশের মঙ্গল কামনায় দেবীর চরণে অঞ্জলি দিয়েছেন ভক্তরা। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তরা আগাম দুর্গা পূজা দেখতে এসেছেন।’
পূজা দেখতে আসা রিপা রানী পাল বলেন, ‘সাধারনত দুর্গাপূজা ষষ্টি তিথিতে শুরু হয়ে দশমীতে শেষ হয়। কিন্তু এই পূজা মন্দিরে একটু ব্যাতিক্রম আয়োজন। এখানে কয়েকদিন আগেই পূজা শুরু হয়। এবং ৯দিন ব্যাপী পূজা হয়। একটু আগে ভাগেই পূজা শুরু হওয়ায় আমরা দেখতে আসছি। সারাদেশে এখনো পূজা শুরু হয় নি। এখানে দুর্গা পূজা শুরু হয়ে গেছে। আমরা পরিবারের লোকজন পূজা দেখতে চলে এসেছি। মায়ের কাছে প্রার্থনা করছি আমরা যেন সবাইকে নিয়ে ভালো থাকি।’
পরিবারের সাথে আসা শিশু বহ্নিশিখা দত্ত বলেন, ‘মায়ের সাথে পূজা দেখতে এসেছি। এখানে প্রথম বার এসেছি পূজা দেখতে। এখানে মা দুর্গার অনেকগুলো প্রতিমা রয়েছে। এরকম পূজা আগে দেখিনি। অনেক ভালো লাগছে।
মঙ্গলচন্ডি সেবাশ্রমের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বাধীন চাষা বলেন, ‘আমরা এখানে দুর্গা পূজা শুরু করার পর থেকেই প্রতিবছই এখানে অনেক লোকসমাগম হয়। শুধু শ্রীমঙ্গলই নয়, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে মানুষ আসেন। কিন্তু এখানে আসার রাস্তাঘাট খারাপ থাকায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। যদি রাস্তাঘাট উন্নত হত তাহলে সবার জন্য ভালো হত।’
শ্রীশ্রী মঙ্গলচন্ডি সেবাশ্রম নবরুপে নবদূর্গা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক বৈদ্য বলেন, ‘শ্রীশ্রী মঙ্গলচন্ডি মন্দিরটি এই অঞ্চলের অনেক প্রাচীন মন্দির। এই জায়গাটিতে গত ১১ বছর ধরে আমরা নবদুর্গা পূজা করে আসছি। এবছর আমাদের ১১ তম আয়োজন। এই নবদুর্গা পূজা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসেন। আগামী ৫ অক্টোবর সারাদেশের পূজার সাথে মিল রেখে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার সমাপ্তি হবে।’
বাংলাদেশে এটিই একমাত্র আগাম দুর্গা পূজা হিসেবে গত ১১ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।